দ্য গার্ডিয়ানে ফাতিমা ভুট্টোর নিবন্ধ

বলিউড ব্যস্ত পাকিস্তান নিয়ে

ফিচার ডেস্ক

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করেছে সে দেশের সরকার। এর মাধ্যমে রহিত হয় দেশটির একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন এবং বিশেষ মর্যাদা। লাহোরে নিজের অনকোলজিস্টের চেম্বারের দেয়ালে লাগানো টিভি থেকে সংবাদ উপস্থাপকের এ ঘোষণা কানে আসে পাকিস্তানি জেনারেল কাদিরের। সংবাদটি যেন বজ্রের মতো আঘাত করে জেনারেলকে। এতটাই যে কিছু আগে অনকোলজিস্টের মুখ থেকে শোনা তার জীবনের চরম দুঃসংবাদটিও ফিকে হয়ে যায়। অনকোলজিস্ট তাকে জানিয়েছিলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত জেনারেলের আয়ু বেশি দিন নেই। জেনারেল সিদ্ধান্ত নেন, জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলোয় ভারতকে পর্যুদস্ত করার লড়াই চালিয়ে যাবেন। তারই সূচনাবিন্দু হিসেবে তিনি যোগাযোগ করেন পথভ্রষ্ট এক সন্ত্রাসীর সঙ্গে। এ ষড়যন্ত্র ঠেকাতে ফিরে আসেন ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংসের এজেন্ট পাঠান। 

সম্প্রতি বলিউডে মুক্তি পাওয়া পাঠান সিনেমার প্রারম্ভিক দৃশ্য এটি। দীর্ঘ বিরতির পর এ সিনেমা দিয়ে পর্দায় ফিরেছেন শাহরুখ খান। পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে একের পর এক নতুন রেকর্ড গড়ছে পাঠান। তবে আলোচিত এ সিনেমার গল্পকে ‘অর্থহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের লেখক ও কলামিস্ট ফাতিমা ভুট্টো। তার মতে, ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যেন পাকিস্তানের প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে আছে। এ মোহকে তিনি তুলনা করেন, রাতে দূরবীন চোখে কারো জানালা দিয়ে উঁকি মারার সঙ্গে। 

ফাতিমার অভিমত, বলিউডের সিনেমাগুলোয় সাধারণ একটি ধারা আছে, যেখানে খল চরিত্রে পাকিস্তানি কাউকে উপস্থাপন করা। পঞ্চাশের দশক থেকে বলিউডের সিনেমার প্রবণতাকে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন তার নিবন্ধে। তার মতে, বলিউড সবসময় ভারতীয় রাজনীতির চেহারাকে প্রতিফলিত করে। পঞ্চাশের দশকের সিনেমাগুলোর গল্প ছিল সদ্য স্বাধীন দেশের ব্যাপারে আশাবাদ এবং রোমাঞ্চকে কেন্দ্র করে। সত্তরের দশকে দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়। সেখানে নায়ককে দেখা যায়, ক্ষমতাবান ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতিভূ হিসেবে। নব্বইয়ের দশকের নায়করা দুবাইতে কাজ করে, লন্ডনের ডিসকোয় নাচে এবং চকচকে মার্সিডিজ চালায়। আর এক দশক থেকে ভারতীয় সিনেমায় তুলে ধরা হচ্ছে সেখানকার বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আদর্শ। উদাহরণ হিসেবে ফাতিমা ভুট্টো কয়েকটি সিনেমার কথা বলেন। প্রথমেই তিনি আলিয়া ভাট অভিনীত ‘রাজি’ সিনেমার নাম উল্লেখ করেন। ২০১৮ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। কেন্দ্রীয় চরিত্র আলিয়া ভাট পাকিস্তানের গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে সে দেশের এক সামরিক কর্মকর্তাকে বিয়ে করেন। তারপর আসে ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উরি’ সিনেমার কথা। অতি সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে তিনি ‘মিশন মজনু’ ও ‘পাঠান’-এর নাম উল্লেখ করেন।

ফাতিমা ভুট্টো লিখেছেন, চীনের সঙ্গেও ভারতের নানা সমস্যা রয়েছে। লাদাখকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা লেগেই আছে। কিন্তু বলিউডের সিনেমায় কখনো ভিলেন চরিত্রে চীনা কাউকে দেখা যায় না।

ফাতিমা ভুট্টোর মতে, পাকিস্তানিরা ঐতিহ্যগতভাবে বলিউডের উৎসাহী ভক্ত। এ ইন্ডাস্ট্রি তাদের গান ও আনন্দ উপহার দিয়েছে। সিনেমার মাধ্যমে তাদের এ উপলব্ধি হয়েছে, প্রতিবেশীরা ভিনগ্রহের কেউ নয়, তাদের মধ্যে মিল আছে এবং তারা একই রকম জীবনযাপন করে। সিনেমায় উপস্থাপিত সংস্কৃতি প্রতিবেশীর দুটি দেশের মানুষকে আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। এ কারণে বলিউডে সাম্প্রতিক সিনেমাগুলো তাদের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেন ফাতিমা ভুট্টো। তিনি লিখেছেন, বলিউডে মুসলমানরা শুধু অভিনয় ও গানই করেনি, তাদের অনেক কিংবদন্তিও সুন্দরভাবে পর্দায় তুলে ধরা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘মুঘল-এ-আযম’-এর উদাহরণ টানেন। তার মতে, সেসব সোনালি দিন হারিয়ে গেছে। বর্তমানে বলিউডের সবটুকু আকর্ষণ এবং উদ্বিগ্নতা যেন প্রতিবেশী পাকিস্তানকে নিয়ে নেতিবাচক কল্পনার মধ্যেই আটকে গেছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন