ঈদের সিনেমা নিয়ে দর্শকের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক

মাহমুদুর রহমান

কাজলরেখায় মন্দিরা চক্রবর্তী ছবি: সিনেমার ফেসবুক পেজ

ঈদ মানে বিনোদন অঙ্গনে নতুন নতুন কনটেন্ট। আর তার মধ্যে প্রথমেই থাকে সিনেমা। প্রতিটি দেশেই উৎসবকে কেন্দ্র করে আসে সিনেমা। বাংলাদেশে ঈদে মুক্তি দেয়া হয় নতুন সিনেমা। কয়েক বছর আগে এ চল কমে গিয়েছিল, কিন্তু নতুন করে আবার তা শুরু হয়েছে। মূলত কভিড-১৯ মহামারীকাল পার হওয়ার পর বাংলা সিনেমা নতুন করে গতি পেয়েছে। গত বছরও মুক্তি পেয়েছিল বেশ কয়েকটি সিনেমা। সে ধারাবাহিকতায় এ বছর মুক্তি পেয়েছে ডজনখানেক। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সিনেমা নিয়ে কথা হচ্ছে বেশি। তালিকায় আছে গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘কাজলরেখা’, শাকিব খান অভিনীত ও হিমেল আশরাফ পরিচালিত ‘রাজকুমার’, মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘ওমর’ ও মিশুক মনি পরিচালিত ‘দেয়ালের দেশ’।

প্রথমেই বলা যায় কাজলরেখার কথা। সিনেমাটি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম। মৈমনসিংহ গীতিকার গল্প নিয়ে সিনেমাটি। কাজলরেখা তিনি সাজিয়েছেন শৈল্পিকভাবে। সিনেমাটির প্রচারণাও করেছেন ভিন্নভাবে এবং সময় নিয়ে। এ সিনেমা মুক্তি পাওয়ার আগে থেকেই দর্শকের ছিল আগ্রহ। মুক্তির পরও তা দেখা গেছে। দর্শক গেছেন সিনেমাটি দেখতে।

কাজলরেখা হলে কেমন চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করলে বণিক বার্তাকে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আশানুরূপই চলছে। যে সমস্ত হল আমরা পেয়েছি তাতে দিন দিন দর্শক বাড়ছে। প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন বেশি দর্শক এসেছে। দ্বিতীয় দিনের তুলনায় তৃতীয় দিনের দর্শক ছিল বেশি।’ সিনেমাটির প্রতি দর্শকের আগ্রহ আগে থেকেই ছিল, ফলে হলেও তার প্রতিফলন ছিল নিশ্চিত। সিনেমা নিয়ে দর্শকের প্রতিক্রিয়ার কথা জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ‘প্রতিক্রিয়া বেশ ভালো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই কাজলরেখা নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। লোকজ কাহিনী এ সিনেমায় উঠে এসেছে। আর যা দেখলাম, সব বয়সের দর্শকই সিনেমাটা পছন্দ করেছে।’

এদিকে স্বাভাবিকভাবেই থিয়েটারে আগ্রহের কেন্দ্রে আছে শাকিব খান অভিনীত রাজকুমার। সিনেমাটি তার ভক্তকূলের কাছে প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য দর্শকেরও প্রশংসা পেয়েছে। প্রিয়তমার প্রভূত সাফল্য রাজকুমার পাচ্ছে না তবে শাকিব নিজেকে অনেকটাই ভেঙেছেন, এ কথাই বলছে দর্শক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজকুমার নিয়ে মোটামুটি বেশ আলোচনা হচ্ছে। 

নিজেকে নতুন করে উপস্থাপন করেছেন শাকিব খান। অন্যদিকে শরিফুল রাজও নিজেকে প্রমাণ করছেন। ঈদে রাজ অভিনীত তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, কাজলরেখা, ওমর ও দেয়ালের দেশ। তিনটি সিনেমায় তিন রকম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এর মধ্যে দেয়ালের দেশ গল্পভিত্তিক সিনেমা। আর্ট ফিল্ম বললেও ভুল হয় না। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন মিশুক মনি। এটি তার প্রথম সিনেমা। তরুণ এ নির্মাতা সিনেমাটি মুক্তি দিয়েছেন ঈদে, নানা ঘরানার সিনেমার ভিড়ে।

নির্মাতার প্রথম সিনেমা ও ভিন্ন ধারার সিনেমা দেয়ালের দেশ। এর মুক্তি-পরবর্তী অবস্থা নিয়ে মিশুক মনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি সিনেমা পরিচালনায় একদমই নতুন। প্রথম সিনেমাটি দর্শক দেখতে আসছেন এটিই আমার বড় পাওয়া। আমরা শুধু মাল্টিপ্লেক্সেই মুক্তি দিয়েছি। শুরুর দিকে টিকিট বিক্রি নিয়ে কেবল সন্তুষ্ট ছিলাম, কিন্তু যখন দেখলাম প্রথম কয়েকটা শো রীতিমতো হাউজফুল, তখন অন্য রকম একটা ভালো লাগা কাজ করেছে।’ দর্শকের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগই ইতিবাচক মন্তব্য পাচ্ছি। গল্পভিত্তিক সিনেমা যারা পছন্দ করেন, তারা দেয়ালের দেশ পছন্দ করেছেন।’

মোস্তফা কামাল রাজের ওমরও বেশ ভালো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে। সিনেমাটি দর্শক দেখছে আগ্রহ নিয়ে। ওমরে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ ও নাসির উদ্দিন খান।

সিনেমা কেমন চলছে তা নিয়ে মোস্তফা কামাল রাজ বলেন, ‘‌ঈদের দিন থেকে আজকে পর্যন্ত ওমরের ৮০% শো হাউজফুল ছিল। সিঙ্গেল স্ক্রিনেও এর ব্যতিক্রম না।’ সিনেমা নিয়ে দর্শক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‌গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে কমার্শিয়াল সিনেমা বানানো খুবই রিস্ক। আমার প্রথমে রিস্ক মনে হলেও গল্প ভালো হওয়ায় সাহসটা পেয়েছি। এরপরও আমাদের মধ্যে আশঙ্কা ছিল যে গল্পটা দর্শক কীভাবে নেবে। ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত ভালো সাড়া পাওয়ার আমার আশঙ্কা দূর হয়েছে। সিনেমাটা সবাই প্রশংসা করছে।  সিনেমায় একটার পর একটা টুইস্ট নিয়ে সবাই প্রশংসা করছে। সব কিছু মিলে অনেক বেশি প্রশংসা পাচ্ছি ওমর নিয়ে।’

এছাড়া ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘মোনা: জ্বিন টু’, ‘মায়া: দ্য লাভ’ দেখতেও দর্শক যাচ্ছেন। মূলত সিনেমার প্রতি দর্শকের আগ্রহ বেড়েছে এবং সিনেমা নিয়ে নতুন করে তৈরি হয়েছে এ দেশের বাজার। সে কারণেই দেখা গেছে ঈদে সব বয়সী দর্শক সিনেমা দেখতে গেছেন হল ও মাল্টিপ্লেক্সে। সব মিলিয়ে বলা যায়, এবারের ঈদে বাংলাদেশের সিনেমা ভালো সময়ই দেখল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন