মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে গতকাল ভারতকে ১ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের স্নায়ুক্ষয়ী এ জয়ের সবচেয়ে বড় নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। আগে ব্যাটিং করতে নেমে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি ও এবাদত হোসেনের পেস তোপের মুখে ১৮৬ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। যদিও ছোট টার্গেট তাড়া করতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা ১৩৬ রানে হারায় ৯ উইকেট। সেখান থেকে পেস বোলার মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে অসীম বীরত্বে দলকে জিতিয়েছেন মিরাজ। দুজন ৩৯ বলে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে স্বাগতিকদের জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। দশম উইকেটে এটাই সর্বোচ্চ রান বাংলাদেশের। আর সফল রান চেজের ক্ষেত্রে বিশ্বের চতুর্থ সেরা দশম উইকেট জুটি।
এর আগে সাকিব ৩৬ রানে ৫টি ও এবাদত ৪৭ রানে ৪টি উইকেট নিয়ে ব্যাটিং শক্তিধর ভারতকে আটকে দেন ১৮৬ রানে। মিরাজ নেন ৪৩ রানের খরচায় একটি উইকেট। পরে লিটন দাস ও সাকিব ভিত গড়ে দিলেও বাকিদের ব্যর্থতায় দল পড়ে হারের মুখে। যদিও মিরাজ বুক চিতিয়ে লড়াই করে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন।
১৮৭ রানের টার্গেটে ম্যাচটি হয়তো সহজেই জেতার কথা ছিল বাংলাদেশের। যদিও দীপক চাহার প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন, মাঝের ওভারগুলোতে অবিশ্বাস্য বোলিং করেন মোহাম্মদ সিরাজ ও ওয়াশিংটন সুন্দর। অভিজ্ঞ লিটন দাস (৪১), সাকিব (২৯), মুশফিকুর রহিম (১৮) ও মাহমুদউল্লাহরা (১৪) প্রত্যেকেই দৃঢ়তা দেখান, যদিও কাজটি শেষ করতে পারেননি।
একটি পর্যায়ে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ৯৫ রান তুলে নিলেও আকস্মিক ধসে তা রূপ নেয় ১৩৬/৯-এ। তখন সবাই হয়তো বাংলাদেশের পরাজয় দেখছিলেন, শুধু দুজন বাদে—মিরাজ ও মুস্তাফিজ। বিশ্বাস হারাননি বলেই তরীকে তীরে নিতে পেরেছেন দুই স্বপ্নচারী।
৩৭ ওয়ানডে ম্যাচের মুখোমুখিতে এটা বাংলাদেশের ষষ্ঠ জয়, আর মিরপুর শেরেবাংলায় ১৪ ম্যাচের মধ্যে চতুর্থ জয়। আগামী বুধবার একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
অবিশ্বাস্য জয় শেষে ম্যাচসেরা মিরাজ বলেন, ‘আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি সত্যিই ভীষণ শিহরিত। মুস্তাফিজ ও আমি নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে চেয়েছি। আমি তাকে শান্ত থেকে ২০টি বল খেলতে বলেছি। আমি নিজের বোলিংটাও উপভোগ করছি। সকালের উইকেট খানিকটা বোলিংসহায়ক ছিল এবং আমি বোলিংটা উপভোগ করেছি। এ পারফরম্যান্স আমার ক্যারিয়ারের স্মরণীয়।’
বিজয়ী দলনায়ক লিটন দাসেরই সবচেয়ে খুশি হওয়ার কথা। ওয়ানডেতে নেতৃত্বের অভিষেকটা মধুরই হলো তার। লিটন বলেন, ‘খুব খুশি। ড্রেসিংরুমে আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম। মিরাজ ও ফিজ (মুস্তাফিজ) যেভাবে ব্যাট করেছে তা আমি উপভোগ করেছি। অনুভূতি প্রকাশের ভাষা নেই আমার। মিরাজকে অভিনন্দন জানাই।’
জয়ের আশা জাগিয়েও হেরেছে ভারত। বিমর্ষ ভারতীয় দলনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘এটা খুবই কাছাকাছি লড়াইয়ের ছিল। আমরা ম্যাচে ফিরতে চেয়েছিলাম। ব্যাটিংটা ভালো করিনি। যদিও ভালো বোলিং করে শেষ পর্যন্ত তাদের চাপে রেখেছি। তারাও শেষ পর্যন্ত স্নায়ু ধরে রেখেছে। আমরা নিয়মিত উইকেট নিয়েছি, তবে শেষের ওভারগুলোতে উইকেট নিতে পারলে ভালোই লাগত। আসলে আমাদের বোর্ডে যে রান ছিল তা যথেষ্ট নয়। আর ৩০-৪০ রান হলেই ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারত।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় বাংলাদেশ। এ ম্যাচে ষষ্ঠ ওভারে স্বাগতিক দলকে প্রথম সফলতা এনে দেন স্পিনার মিরাজ। তিনি বোল্ড করেন বামহাতি ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ানকে। এরপর সাকিব এসে এক ওভারের মধ্যে অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে এলোমেলো করে দেন ভারতকে।
মিরাজের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ধাওয়ান। নতুন ব্যাটসম্যান কোহলি ওই ওভারেই স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দিলেও তা ফিল্ডারের খানিকটা দূর দিয়ে চলে যায়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রোহিতকে বোল্ড করেন সাকিব। ওই ওভারের চতুর্থ বলে কোহলি এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দিলে অ্যাক্রোবেটিক ভঙ্গিতে তা লুফে নেন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস।
দলের চতুর্থ সফলতা আসে এবাদত হোসেনের হাত ধরে। তার ক্রমাগত দেয়া শর্ট বলে হতাশ হতে হতে শ্রেয়াস আইয়ার পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে। ২৮তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজের বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর, যদিও লং-অফে সেই ক্যাচ ছেড়ে দেন এবাদত হোসেন। সুন্দরের রান তখন ১২। ব্যক্তিগত ১৯ রানে সাকিবের বলে সেই এবাদতকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সুন্দর। পরের ওভারে শাহবাজ আহমেদকে ফেরান এবাদত। দুর্দান্ত বোলিং করে ৩৫তম ওভারে শার্দুল ঠাকুর ও দীপক চাহারকেও সাজঘরে ফিরিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব। ওয়ানডেতে এ নিয়ে চতুর্থবার ৫ উইকেট নিলেন তিনি। তার গড়ে দেয়ার ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।