আন্তর্জাতিক মহলে ১০টি পুরস্কার পেয়ে সাড়া ফেলছে নুহাশ হুমায়ূন পরিচালিত হরর ঘরানার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’। সর্বশেষ নিউইয়র্কের প্রিমিয়ার উডস্টক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা শর্টফিল্ম পুরস্কার জিতেছে নুহাশের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি। এটি মশারির তৃতীয় অস্কার কোয়ালিফায়িং পুরস্কার ও দশম আন্তর্জাতিক পুরস্কার। দশম পুরস্কারটি জয়ের পরই নুহাশ ঘোষণা দেন মশারী মুক্তি দেয়ার বিষয়ে। শনিবার রাতে সম্পূর্ণ ফ্রি প্লাটফর্ম ভিমিওতে মুক্তি পায় মশারি। মুক্তির কিছু সময় পর থেকেই প্রশংসা পেতে থাকে ২২ মিনিট ১ সেকেন্ডের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি। এ নিয়ে বণিক বার্তার কথা হয় নুহাশের সঙ্গে। নুহাশ বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে মশারী ১০টা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেল। এতগুলো পুরস্কার পাব এটা একদমই ভাবিনি। আমি পুরো টিমকে নিয়ে অনেক খুশি ও গর্ব বোধ করছি। আমার কাছে মনে হচ্ছিল মশারী অনেক দিন বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছিল। এখন এটা আমার দেশের মানুষ দেখুক। আমরা সম্পূর্ণ ফ্রি প্লাটফর্ম ভিমিওতে মশারী রিলিজ দিয়েছি। কোনো ওটিটি বা প্রেইড প্লাটফর্মে আমরা মশারী রিলিজ দিইনি। কারণ মশারী সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি ফিল্ম। তাই আমাদের ইচ্ছা তরুণদের অনুপ্রাণিত করা স্বাধীনভাবে কাজ করার বিষয়ে। এটা যেন সবাই দেখতে পারে তাই ফ্রিতে রিলিজ দেয়া হয়েছে।’
মশারী থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে এ নিয়ে নুহাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ ভালো লাগছে, অনেকেই এটা নিয়ে পজেটিভ কথা বলছেন। তবে সবে তো মশারী মুক্তি পেল, একদিনে মশারী সবাই কীভাবে দেখছেন সেটা বলাটা একটু কঠিন।’
নুহাশ চলতি বছরে ‘পেটকাটা ষ’ নামের একটি ভৌতিক ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেছিল দেশের জনপ্রিয় একটি ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য। চার পর্বের চারটি গল্পে ভূত নিয়ে অ্যান্থলজি সিরিজ ‘পেটকাটা ষ’ দেশ ও দেশের বাইরে সাড়া ফেলেছিল। তবে আন্তর্জাতিক পুরস্কার জেতা মশারী নুহাশ সম্পূর্ণ ফ্রি প্লাটফর্মে মুক্তি দিয়েছেন তরুণ নির্মাতাদের উৎসাহ দিতে। আগামীতে কি ফ্রি প্লাটফর্মে আরো কাজ আসবে নুহাশের। এ প্রশ্নের জবাবে নুহাশ বলেন, ‘মশারী একটা এক্সপেরিমেন্টাল কাজ ছিল। এটা যে এত স্বীকৃতি পাবে সেটা ভাবনাতেও ছিল না। আমরা এক্সপেরিমেন্টালভাবেই এটা দেখাতে যাচ্ছি। আমার মনে হয় এমন অনেক তরুণ নির্মাতা আছেন যারা ভাবেন শর্টফিল্ম বানানো অনেক কঠিন কিংবা দেশের বাইরে ফেস্টিভ্যালে পাঠিয়ে অ্যাওয়ার্ড পাওয়া অনেক কঠিন কিছু। আমি চাচ্ছি এ ভাবনার পথটা খুলে দিতে। আমার মনে হলো এটা ফ্রি ভাবে দিলে কিছুটা হলেও তরুণ নির্মাতাদের জন্য হেল্প হতে পারে। সামনে যে কাজগুলো আসবে সেটা ভিন্ন গল্প নিয়ে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। তাই একেক কনটেন্ট একেকভাবে রিলিজ পাবে।’
ভৌতিক পরিস্থিতিতে দুই বোনের গল্প দেখানো হয়েছে এতে। মশারিতে অভিনয় করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল ও নাইরা অনোরা সাইফ। মুক্তির পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মশারী প্রশংসা পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও নির্মাণের স্বীকৃতি পেয়েছেন নুহাশ হুমায়ূন। এর বাইরেও মশারী আপনাকে কী দিল এটা জানতে চাইলে নুহাশ হুমায়ূন জানান, ‘মশারী আমাকে অনেক সাহায্য করেছে এজেন্ট ও ম্যানেজারের সঙ্গে সাইন করতে। এটার মাধ্যমেই হলিউডে কাজের সুযোগ পেয়েছি। অনেককে চিনতে পারছি। যেমন আমি সম্প্রতি হুলুর জন্য ‘ফরেনারস অনলি’ নির্মাণ করলাম। মশারী দেখার পর হুলু থেকে কাজটা আমার কাছে এসেছে। এ কারণে মশারীকে ধন্যবাদ। আমরা বাংলাদেশ থেকে প্রথম কনটেন্ট নির্মাণ করেছি যুক্তরাষ্টের জন্য। অনেক ঝুঁকি নিয়ে মশারী বানিয়েছিলাম। কিন্তু এখন ওই ঝুঁকির সুবিধাগুলো আসতে থাকছে।’
ভিন্নভাবে নিজের গল্প উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন নুহাশ। মশারী তার ব্যতিক্রম নয়। দুই বোনের গল্পের সঙ্গে সমাজের নানা বিষয় উঠে এসেছে এতে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে মশারী এর মধ্যে অস্কার কোয়ালিফাইং চলচ্চিত্র উৎসব ‘হলিশর্টস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ শ্রেষ্ঠ হরর বিভাগে পুরস্কার জিতেছে এটি। একই সঙ্গে অস্কার কোয়ালিফাইং চলচ্চিত্র উৎসব ‘মেলবোর্ন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ সেরা শর্ট ফিকশন বিভাগে পুরস্কার জিতেছে এ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। গত জুলাইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বুচান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘জুরিস চয়েস অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে নুহাশের এ শর্টফিল্ম। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঘরানার চলচ্চিত্র উৎসব বলে বিবেচনা করা হয় এ আয়োজনকে। এর আগে ‘অস্কার কোয়ালিফাইং’ চলচ্চিত্র উৎসব ‘আটলান্টা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ ন্যারেটিভ শর্ট বিভাগে গ্র্যান্ড জুরি পুরস্কার জেতে ‘মশারী’। এছাড়া ‘সাউথ বাই সাউথ-ওয়েস্ট চলচ্চিত্র উৎসব’-এ স্বল্পদৈর্ঘ্য এ চলচ্চিত্র পুরস্কৃত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের অন্যতম শহর অস্টিনে ‘ইন্ডিমিম ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ প্রশংসা কুড়িয়েছে মশারী। গত ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয় এ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। মশারী কান উৎসবের ফ্যান্টাস্টিক সেভেন ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছিল।
