নন্দিত সাকিব নিন্দিতও

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ব্যাট বল হাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা পারফরমার সাকিব আল হাসান। পারফরম্যান্স দিয়েই তিনি জায়গা করে নেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি২০ লিগে। তাতে যশ-খ্যাতির সঙ্গে বিত্ত-বৈভবেরও মালিক হন। পাশাপাশি বিতর্কেও সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। সর্বশেষ বেটিং সংশ্লিষ্ট অনলাইন সাইট বেটউইনারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি করেন এবং বিসিবির চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তি বাতিলও করেন। যদিও নিয়ে দেশের ক্রিকেটে বিতর্কের ঝড় বয়ে যায়। ভাবমূর্তি নষ্ট হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের, সাকিবের নিজেরও।

বিতর্কে জড়ালেও বারবার তিনি পার পেয়ে যান ওই পারফরম্যান্সের কারণেই, যেখানে তার ধারেকাছেও নেই অন্যরা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং কিংবা নেতৃত্বসাকিবের যেন জুড়ি নেই।

বাংলাদেশের জার্সিতে ওয়ানডে টেস্টে রানচার্টে সাকিব তৃতীয় আর টি২০তে দ্বিতীয়। টেস্টে ৬৩ ম্যাচে হাজার ২৫১ রান, ওয়ানডেতে ২২১ ম্যাচে হাজার ৭৫০ টি২০তে হাজার ১০ রান করেছেন তিনি। আর উইকেট শিকারে টেস্টে তার ধারেকাছেও নেই কেউ। ২২৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। দুইয়ে থাকা তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন ১৫৮টি। ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের সফলতম বোলার সাকিব। তিনি নিয়েছেন ২৮৫ উইকেট। ২৬৯ উইকেট নিয়ে দুইয়ে থাকা মাশরাফি বিন মর্তুজা আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর না নিলেও শেষ ওয়ানডে তিনি খেলে ফেলেছেন। বর্তমানে যারা খেলছেন তাদের মধ্যে ১৩৯ উইকেট নিয়ে চারে মুস্তাফিজুর রহমান। টি২০ বোলিংয়েও সেরা সাকিব। ৯৯ ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ১২১ উইকেট।

মাঠের চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় বেটউইনার-কাণ্ডে আরেকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। এশিয়া কাপে তিনি নেতৃত্ব পাবেন, এটা নিশ্চিতই ছিল। সর্বশেষ ঘটনায় তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত তার কাঁধেই সওয়ার হচ্ছে দল। যোগ্য বিকল্প না থাকায় আরেকবার অধিনায়ক হিসেবে তাকেই বেছে নিল বিসিবি। গতকাল ভোর রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে বিকালেই ছুটে যান বিসিবি সভাপতির বাসায়। সেখানে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু আর নির্বাচক হাবিবুল বাশারও যোগ দেন। ছিলেন বিসিবির আরো কয়েকজন কর্মকর্তা। বৈঠকের পর সন্ধ্যায় বিসিবি ঘোষণা করে, সাকিবই আসন্ন এশিয়া কাপ টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেবেন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিবকে ঘিরে বিতর্ক এই প্রথম নয়। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ব্যাটিংয়ের সময় সাইড স্ক্রিনের পাশে এক দর্শক নড়াচড়া করায় সাকিব উইকেট ছেড়ে বাউন্ডারি লাইনে ছুটে গিয়ে বাজে ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যাট উঁচিয়ে দর্শককে হুমকি দেন। ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার পর সাকিবকে ইঙ্গিত করে গ্যালারি থেকে দুয়ো আসতে থাকে। সময় সাকিব দর্শকদের মধ্যমা আঙুল দেখিয়ে বাজে ইঙ্গিত করেন। ২০১৩ সালে বিজয় দিবস টি২০ ম্যাচ চলাকালীন এক দর্শকের কলার চেপে ধরেন সাকিব।

২০১৪ সালে মিরপুরে শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আউট হওয়ার পর প্যাভিলিয়নে বসে থাকা সাকিব টিভি ক্যামেরার সামনে অশালীন ভঙ্গি করেন। ঘটনায় তাকে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়। একই বছর ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে চলাকালে স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে এক দর্শককে আঘাত করেন সাকিব।

২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে ছয় মাসের ছুটি চান। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ছুটি দিতে রাজি ছিলেন না। বিসিবি সভাপতি তখন জানান, সাকিব টেস্ট খেলতে চান না। ২০১৮ সালে বিসিবির কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র না নিয়ে সিপিএল খেলতে যাচ্ছিলেন সাকিব। মাঝপথ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনে বোর্ড।

সাকিবকে নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার অবতারণা ২০১৯ সালে। জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর সেটি গোপন করায় এক বছর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি।

গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে জৈব সুরক্ষাবলয় ভঙ্গ করার পর ক্ষমা চান সাকিব। ওই লিগে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারদের সঙ্গে কয়েক দফা বাজে আচরণের পর তিনি নিষিদ্ধ তিন ম্যাচ। জরিমানা গুনতে হয় লাখ টাকা।

বছর আফগানিস্তান শ্রীলংকার বিপক্ষে হোম সিরিজ, নিউজিল্যান্ড সফর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরপ্রতিটি সিরিজের আগে তার ছুটি নিয়ে তৈরি হয় নাটকীয়তা। তিনি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ছুটি চান, কখনোবা বোর্ডের নিয়ম ভেঙে ছুটি নেন। সর্বশেষ বেটউইনার নিয়ে জড়ান নতুন বিতর্কে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন