এবার গণঅনশনের ডাক শিক্ষার্থীদের

আলোচনার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিলেট

শাবিপ্রবির বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা গতকাল কাম্পাসের গোলচত্বর থেকে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল করেন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। এবার গণঅনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত ৮টা থেকেই গণঅনশনে বসার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আবারো আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক . তুলসী কুমার দাসের নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।

চোখের সামনেই একে একে নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন শাবিপ্রবির অনশনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অনশনরত ২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের অবস্থাও বিশেষ ভালো নেই। গত চারদিনে এক ফোঁটা পানিও মুখে নেননি তারা। তা সত্ত্বেও গণঅনশন কর্মসূচির জন্য নাম লেখাতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসের সরকার। উপাচার্যের পদত্যাগপত্র স্বচক্ষে না দেখা পর্যন্ত গণঅনশন চলবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, শর্ত মেনেই আমরা গণঅনশনে নামব।

প্রতিবাদের সব ভাষায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করছেন তারা। গতকাল কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিলও করেছেন ক্যাম্পাসে। এদিন বেলা ৩টার দিকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবার গোলচত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এদিন সন্ধ্যায় করা হয় মোমবাতি প্রজ্বালন।

গত বুধবার বেলা আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে নামেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। গতকাল আন্দোলনের দশম দিন অনশনের চতুর্থ দিন অতিবাহিত করেন শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মৃত্যুর দিকে গেলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে তিনি জানান, আমরা চাই তারা অনশন প্রত্যাহার করুক, তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। যদি অনশনরত অবস্থায়ও বসতে চায় তাও হতে পারে। যেকোনো সমস্যার একমাত্র সমাধান আলোচনা। শিক্ষার্থীদের জন্য আলোচনার দ্বার সবসময় উন্মুক্ত।

যদিও আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, কিছু শিক্ষক হাসপাতালে গিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস খাওয়াতে চেষ্টা করেন। তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, আমাদের একটাই দাবি ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ। দাবি থেকে পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। মারা যাব, তবু আন্দোলন থেকে পিছপা হব না। যারা অনশন করছে কেবল তারাই নয়, প্রয়োজনে সবাই মারা যাব। তবু ভিসির পদত্যাগ চাই।

এখনো ভিসির বাসভবনের সমানে অবস্থান করছে পুলিশ। তাদের সামনেই গায়ে কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায় অনশনরত শিক্ষার্থীদের। তাদের সঙ্গে অনশনে না থাকলেও আশপাশে কাঁথা নিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায় আরো অনেক শিক্ষার্থীকে।

শাবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম জানান, শিক্ষকরা অনশনরতদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

এর আগে ১৩ জানুয়ারি প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে ভিসি কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন শুরু করেন শাবিপ্রবির সিরাজুন্নেসা ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা। পরে ১৫ জানুয়ারি ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক . আলমগীর কবিরের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শাবিপ্রবি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ . আনোয়ারুল ইসলাম আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যান। কোষাধ্যক্ষ ভেতরে ঢোকার জন্য আন্দোলনকারীরা তালা খুলতে যাওয়ার মুহূর্তে পেছনের দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করেন পুলিশ সদস্যরা। পরে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র-ছাত্রীরা। তখন অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন। ঘণ্টা তিনেক পর অবরুদ্ধ ভিসিকে উদ্ধার করেন পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের সদস্যরা। পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর শাবিপ্রবি উপাচার্য (ভিসি) ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে

নামেন শিক্ষার্থীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। তার পর থেকেই উত্তপ্ত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

১৬ জানুয়ারি রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরদিন দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়। নির্দেশনার পর কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে গেলেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে থেকে যান। তারা আবার একত্র হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আজ ১১তম দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি চলছে।

এসব আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেন সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ। ওই হলের নতুন প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ পান পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের . নাজিয়া চৌধুরী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন