পাঁচ মাস পর কমল এলপিজির দাম

আবু তাহের

দীর্ঘ পাঁচ মাস পর দেশের বাজারে কমেছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির কাঁচামালের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় দেশের বাজারেও দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম মূসকসহ হাজার ৩১৩ থেকে কমিয়ে হাজার ২২৮ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

কমিশনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে পাঁচ মাস পর বাংলাদেশে এলপিজির সিলিন্ডারের দাম ৮৫ টাকা কমল। যদিও গত পাঁচ মাসে দাম বেড়েছে ৪২২ টাকা।

এলপিজির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত হয় প্রোপেন বিউটেন। সৌদি আরামকো কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি মাসে পণ্য দুটি টনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৭৯৫ ৭৫০ ডলারে, যা গত মাসের চেয়ে টনপ্রতি ৭৭ ডলার কম।

দাম কমে যাওয়ায় বাজারে এলপিজি সহজলভ্য হবে বলে জানিয়েছে বিইআরসি।

কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বণিক বার্তাকে বলেন, এলপিজির কাঁচামালের দাম গত মাসে অনেক কমে গেছে। বাংলাদেশের ভোক্তারা যেন সেই সুফল পেতে পারেন, সেজন্য সৌদি আরামকো কোম্পানি মূল্য ঘোষণার পরপরই আমরা দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করেছি। যে পরিমাণ দাম কমেছে তা ভোক্তার জন্য বড় ধরনের সাশ্রয়। আগামীতে দাম আরো কমে গেলে ভোক্তারাও সে সুফল পাবেন।

চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য দুটির দাম ওঠানামা করতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে এলপিজির বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত এপ্রিলে মূল্য সমন্বয় শুরু করে বিইআরসি। সৌদি আরামকো কোম্পানির ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী দেশের বাজারে সব ধরনের খরচ হিসাব করেই মূল্য সমন্বয় করা হয়। সে হিসেবে গত নয় মাসে তিন দফা দাম কমলেও বিইআরসি বাড়িয়েছে পাঁচ দফা।

বিইআরসির তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে বেসরকারি ১২ কেজি এলপিজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৭৫ টাকা। মে মাসের জন্য তা কমিয়ে করা হয় ৯০৬ টাকা জুনে ৮৪২ টাকা। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়তে থাকে। জুলাইয়ে সিলিন্ডারপ্রতি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৮৯১ টাকা, আগস্টে ৯৯৩, সেপ্টেম্বরে হাজার ৩৩, অক্টোবরে হাজার ২৫৯ নভেম্বরে হাজার ৩১৩ টাকা। অর্থাৎ গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসে দাম বেড়েছে ৪২২ টাকা।

অবশ্য দাম কমানোর সুফল ভোক্তারা পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ের কথাও উঠে এসেছে। ভোক্তা অধিকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো পণ্যের দাম একবার বেড়ে যাওয়ার পর আবার কমানো হলে ভোক্তা পর্যায়ে খুব অল্প সময়ই তার সুফল পাওয়া যায়।

তবে যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির কাঁচামালের দাম কমেছে, দেশের ক্রেতারাও তার সুফল পাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আজম জে চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, এলপিজির কাঁচামালের দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। ফলে সেখানে দাম ওঠানামা হলে দেশের বাজারেও ওঠানামা করে। বিইআরসি যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দাম সমন্বয় করে, তারাও সেটি অনুসরণ করছেন। ব্যবসায়ীরা সবসময়ই ভোক্তাদের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।

তবে ব্যবসায়ীর কথার প্রতিফলন বাজারে দেখা যায় না। এর আগে কমিশন যতবার এলপিজির দাম সমন্বয় করেছে, কোনোবারই নির্ধারিত দামে তা কিনতে পারেননি ভোক্তা। সবসময়ই নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০০-২০০ টাকা বেশি দিয়েই সিলিন্ডার কিনতে হয়েছে তাদের। ভোক্তার কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নেয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি এমন কারণ দেখিয়ে বাজার তদারকিও হয়নি। কারণে ব্যবসায়ীরা বাজারে ইচ্ছামতো এলপিজি বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করছেন বলে দাবি ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর।

বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এলপিজির দাম কমানোর খবরটি ভোক্তার জন্য স্বস্তির। তবে কেবল দাম কমিয়ে বসে থাকলেই চলবে না, যথাযথ দামে ভোক্তা কিনতে পারছেন কিনা সেটিও তদারক করতে হবে। কেউ কমিশন নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি না করলে তার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থাও নিতে হবে। তা না হলে দাম কমানোর সুফল কখনই ভোক্তা পাবেন না।

পাইপলাইনের গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় গত এক দশকে দেশের বাজারে এলপিজি  জনপ্রিয় হয়েছে। প্রতি বছর দেশের বাজারে ১১ লাখ টন এলপিজির  ৯৮ শতাংশ সরবরাহ করে বেসরকারি অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো। বাকি শতাংশ সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে বেসরকারি ২৭টি প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারে এলপিজি সরবরাহ করছে। সারা দেশে বাসাবাড়িতে অন্তত ৪০ লাখ গ্রাহক এলপিজি ব্যবহার করে, সব মিলিয়ে যার সুফল পায় তিন কোটি মানুষ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন