আওয়ামী লীগের বৈঠকে শেখ হাসিনা

সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে বক্তব্য দেন ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে এবং সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ‌শত্রুদের মুখে ছাই দিয়েই এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’ গণভবনে গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এগিয়েছে। মা ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ‌বাংলাদেশে এমন কোনো খাত নেই যা পিছিয়ে আছে। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে কভিড-১৯ অতিমারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করেও দেশ তার অর্থনৈতিক শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে এবং ২০২৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করবে। ‌আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর অবশ্যই ঘটবে।’ 

যে বিএনপি ভোট কারচুপি ও দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের সূচনা করেছে তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের শিক্ষা নেয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যারা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে এবং দলের অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়ে গেছেন। ‌আওয়ামী লীগের শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব মঞ্চে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’ 

বাংলাদেশের সমৃদ্ধির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য তথাকথিত রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের কঠোর সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘‌আমাদের দুর্ভাগ্য যে দেশের কিছু রাজনৈতিক দেউলিয়া, যারা একেবারেই রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া—এদের কিছু বক্তব্য; আর আমাদের দেশের কিছু আছে বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন, সেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত গাচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এ দেশের অতি বাম, অতি ডান সবই এখন এক হয়ে গেছে। এটা কীভাবে হলো জানি না। এ দুই মেরু এক হয়েও সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‌করোনার সময় আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। পৃথিবীর ধনী দেশগুলো দেয়নি, কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে। টেস্ট আমরা বিনা পয়সায় করেছি, কোনো ধনী দেশও করেনি। আমরা দুই হাতে পানির মতো টাকা খরচ করে মানুষকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নিয়েছি। খুব কম দেশই সেটা করতে পেরেছে। আমরা সেখানে সাফল্য অর্জন করেছি।’

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করা প্রতিবেদনেরও সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘‌ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। এখানে আন্দোলন করার সময় একজন মহিলা প্রফেসর বলেছেন, আমি ভার্সিটির প্রফেসর। পুলিশ যেভাবে তাকে ধরে হাতমোড়া দিয়ে মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে চেপে অ্যারেস্ট করেছে! সেখানে ছাত্র-শিক্ষকদের হাতে লাঠিও ছিল না, আগুনও ছিল না। তারা কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে মারমুখীও ছিল না। তার পরও আমেরিকার পুলিশ যে আক্রমণ করেছে, এতে সেই দেশে মানবাধিকার যে কতটুকু আছে, সেটি প্রশ্ন? কথা বলার স্বাধীনতা কতটুকু আছে, সেটি প্রশ্ন? অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার কতটুকু আছে, সেটি আমাদের প্রশ্ন?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‌বাংলাদেশের ওপর মানবাধিকারের রিপোর্ট লেখে, কিন্তু নিজেদের চেহারাটা আয়নায় দেখে না। তারা যেভাবে আচরণ করে, আমাদের পুলিশ তো সেভাবে করেনি। ধৈর্যের পরিচয় দিতে গিয়ে উল্টো পুলিশ বিএনপির হাতে মার খেয়েছে। উল্টো তারা পুলিশকে যেভাবে মাটিতে ফেলে পিটিয়েছে, এভাবে আমেরিকায় যদি একটা পুলিশের গায়ে কোনো দলের লোক হাত দিত, তারা কী করত?’

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফরউল্লাহ এবং সিনিয়র সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন