কভিড-১৯ মহামারী চলাকালে বিশ্বে আরো প্রকট হয়েছে সম্পদের ব্যবধান।
কভিডজনিত বিধিনিষেধে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে আরো দরিদ্র হয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
অন্যদিকে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে ধনীদের সম্পদের পরিমাণ।
এ সময়ে বিশ্বে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫২ লাখ।
আর তাদের কারণে বেড়েছে শেয়ার ও বাড়ির দাম।
খবর দ্য গার্ডিয়ান।
বার্ষিক ক্রেডিট সুইস গ্লোবাল ওয়েলথ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কীভাবে সুদের হার হ্রাস ও সরকারের দেয়া প্রণোদনার কারণে কিছু মানুষ উপকৃত হয়েছে।
অর্থনৈতিক মন্দার পরেও এসব সহযোগিতার কারণে তাদের সম্পদের বৃদ্ধি ঘটেছে।
ফলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অতিধনীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশের বেশি।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালে ৫ কোটি ৬১ লাখ মানুষের সম্পদের পরিমাণ ৭২ কোটি পাউন্ডের বেশি।
শীর্ষ ধনী ও অতিদরিদ্রদের কথাই মূলত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেখানে দেখা যায়, যাদের আয় আগে থেকেই কম ছিল তারা চাকরি হারানোসহ নানা সমস্যার মুখে পড়েছে।
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তাদের উপার্জন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্পদের বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ মহামারী নয়।
অর্থনীতির ওপর সরাসরি মহামারীর প্রভাবের কারণেও এটি ঘটেনি।
বরং মহামারীর প্রভাব হ্রাস করার জন্য সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই এমনটি ঘটেছে।
কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবের কারণে সম্পদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
ফলে ২০১৬ সালের পর এবারই প্রথম বিরাট ব্যবধানে বৈষম্য দেখা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বে নতুন যে ধনী শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশই যুক্তরাষ্ট্রের।
৫২ লাখ নতুন ধনীর মধ্যে ১৭ লাখ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
এর পরেই আছে জার্মানি।
তাদের নব্য ধনীর সংখ্যা ৬ লাখ ৩৩ হাজার।
নতুন ধনীদের তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য।
মহামারীকালে দেশটির ধনীর সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার।
ফলে দেশটিতে এখন ১০ লাখ ডলারের বেশি সম্পদের মালিকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখে।
এ তালিকায় ৪১ হাজার ৪২০ জন অতিধনী যুক্ত হয়েছে, যাদের প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি ডলারের বেশি।
২০১৯-এর তুলনায় এ শ্রেণীর ধনীর সংখ্যা বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
১৭ বছরের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন।
সব মিলিয়ে এখন বিশ্বে অতিধনীর সংখ্যা ২ লাখ ১৫ হাজার ৩০ জন।
যে দেশের সরকার মহামারী ও লকডাউনকালে যথাযথ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে পারেনি, সেসব দেশের দরিদ্রদের অবস্থা খুবই খারাপ।
উচ্চ আয়ের দেশ, যেমন যুক্তরাজ্যে সরকারের দেয়া বিভিন্ন সহায়তার কারণে চাকরি হারানো বা ছোট ব্যবসায়ীদের আয় কমে যাওয়ার পরেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে।
কিন্তু যারা জরুরি সহায়তা পাননি এবং বিপদে পড়ে সঞ্চয় খরচ করতে হয়েছে কিংবা উচ্চসুদে ঋণ নিতে হয়েছে, তাদের অবস্থা সঙ্গিন।
বিশেষ কিছু ক্ষেত্রের মানুষ, যেমন সংখ্যালঘু, নারী, তরুণদের ওপর বেশি প্রভাব পড়েছে।
এরই মধ্যে অতিধনীরা শেয়ারবাজার ও সম্পদের বাজারের বড় অংশ নিজেদের দখলে নিয়েছে।
যাদের ওপর অর্থনৈতিক মন্দা কম প্রভাব ফেলেছে।
এ বছরের শুরুতেই দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় বাড়ির দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বে ধনীর সংখ্যা ৩৯ শতাংশ বাড়বে।
সে হিসাবে ৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ধনীর ঘরে পৌঁছে যাবে।
আর তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ হবে ৫৮৩ ট্রিলিয়ন ডলার।