তালিকা যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে

১০ বছরেও শিক্ষার্থী বাড়েনি রংপুর বিভাগের আট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

এস এম পিয়াল, রংপুর

পঞ্চগড়ের কে আর এস মাগুড়া সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৮ শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

একই স্থানে অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুর্গম পথ, নদীভাঙন কভিডের কারণে রংপুর বিভাগের কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীস্বল্পতা দেখা দেয়। অবস্থা চলে আসছে বছরের পর বছর। ১০ বছর ধরে ৫০ জনের কম শিক্ষার্থী রয়েছে এমন ২৪টি বিদ্যালয় চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৬টিতে শিক্ষার্থী বাড়লেও আগের অবস্থানেই রয়েছে আটটি।

এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল করতে কাছাকাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানিয়েছেন, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০-এর কম হলে পাশের বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করা হবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয়। তবে এটি চূড়ান্ত নয়। তালিকায় আরো সংযোজন অথবা বিয়োজন হতে পারে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০-এর কম হলে পাশের বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। সচিবালয়ে গতকাল প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তথ্য জানান। তালিকাভুক্ত আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে গাইবান্ধায় রয়েছে তিনটি। এগুলো হচ্ছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর কাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ২৪ জন। পলাশবাড়ী উপজেলার তেকানী রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১। একই উপজেলার হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৩।

এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার রাঘবপুর রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৫ শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে। একই উপজেলার পিএ রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে ৪০ জন শিক্ষার্থী। পঞ্চগড় সদর উপজেলার কে আর এস মাগুড়া সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ঘোনা বিছানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩০ জন। এছাড়া রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৬ জন।

জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর কাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৪৭ সালে যমুনা নদীবেষ্টিত চরে নির্মাণ করা হয়। জাতীয়করণ  হয় ১৯৭৬ সালে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হুদা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নদীভাঙনে অনেক পরিবার চলে গেছে। চার বছর ধরে অপেক্ষা করছি, বসতি গড়ে উঠলে শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। বিদ্যালয়টির অবস্থান কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্ত এবং গাইবান্ধা জেলার মাঝামাঝি প্রত্যন্ত চরে। তাই বসতি গড়ে না উঠলে শিক্ষার্থী বাড়ার সুযোগ নেই। বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৪ জন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার কে আর এস মাগুড়া সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আহসান হাবিব বলেন, ‘এখনো চূড়ান্ত কাগজ না পেলেও জানতে পেরেছি বিদ্যালয়টি মাগুড়া প্রধান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত হবে। বিদ্যালয়ের আশপাশে বাড়ি আছে প্রায় ৬৬টি। তবে প্রতি বাড়িতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার মতো শিক্ষার্থী নেই। এছাড়া বিদ্যালয়টির দুই কিলোমিটারের মধ্যে কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০২০-২১ সালে কভিডের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ রাখা শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৮ জন।

তবে আটটি ছাড়াও বিভাগের আরো ১৬টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০-এর নিচে ছিল। অভিভাবক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও গাইবান্ধায় তিনটি করে, রংপুর, দিনাজপুর গঞ্চগড়ে দুটি করে এবং নীলফামারী জেলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে।

ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুজাহিদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আয়তন বিদ্যালয়ের সংখ্যা বিবেচনায় অন্য বিভাগের চেয়ে রংপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর চিত্র ভালো। মাত্র ২৪টি বিদ্যালয়ে ৫০ জনের নিচে শিক্ষার্থী ছিল। তবে এর মধ্যে ১৬টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে। বাকি আটটি বিদ্যালয়ে কোনোভাবে শিক্ষার্থী বাড়াতে পারছি না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন