সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বের নেপথ্য কথা

১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পেয়েছিল সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্ব। অ্যান্থনি হপকিন্স জোডি ফস্টার অভিনীত আইকনিক ছবিটি ৩০ বছর পার করল। মুক্তির পর শুধু দর্শকের মনে ভয় ধরায়নি, সমালোচকরাও কুর্ণিশ করেছিলেন জোনাথান ডেমের ছবিটিকে। সাইকোলজিক্যাল হরর ছবি হয়েও পাঁচটি বিভাগে জিতে নিয়েছিল একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। এমন ঘটনা সিনেমার ইতিহাসে দুর্লভ। সিরিয়াল কিলার হ্যানিবল লেকটারের চরিত্রে অ্যান্থনি হপকিন্স এফবিআই কর্মকর্তা স্টার্লিংয়ের চরিত্রে জোডি ফস্টারের অভিনয়কে সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্সের তালিকায় রাখা হয়। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের মতে, সর্বকালের সেরা ভিলেন চরিত্র অ্যান্থনি হপকিন্সের হ্যানিবল লেকটার। আর হিরোর তালিকায় নম্বরে আছে জোডি ফস্টারের স্টার্লিং চরিত্রটি।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত থমাস হ্যারিসের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয় সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্ব। পরিচালক জোনাথান ডেমের বলেছিলেন, উপন্যাসটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। মনে হয়েছিল যে এটা থেকে দারুণ একটা ছবি তৈরি করা যাবে। ছবিটি মুক্তির পর পাঁচ সপ্তাহ বক্সঅফিসে শীর্ষ অবস্থানে ছিল। কিন্তু মূল উপন্যাসটি যখন ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় তখন সেটি নিউইয়র্ক টাইমসের আমেরিকার বেস্টসেলার বইয়ের তালিকার কোথাও জায়গা পায়নি।

প্রকল্পের শুরুতে হপকিন্স কিংবা ফস্টার কেউই প্রথম পছন্দ হিসেবে ছিলেন না। শুরুতে হ্যানিবল লেকটার স্টার্লিংয়ের চরিত্রে বাছাই করা হয়েছিল জিন হ্যাকম্যান মিশেল ফিফারকে। কিন্তু চিত্রনাট্য পড়ে হ্যাকম্যান ফিফার কেউই ছবিটি করতে রাজি হননি। তবে এটা যে দারুণ ছবি হবে তা নিয়ে হ্যাকম্যানের মনে কোনো সন্দেহ ছিল না। ছবিটি থেকে তিনি বেরিয়ে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে চিত্রনাট্যটি দেয়া হয় অ্যান্থনি হপকিন্সকে। আমি চিত্রনাট্যটি পড়ে খুব আলোড়িত হয়েছিলাম! আমি বুঝেছিলাম কীভাবে হ্যানিবলের চরিত্রটি করতে হবে। সময় বদল হয় ছবির স্বত্ব। ওরিয়ন পিকচারস স্বত্ব কিনে নেয় এবং পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন জোনাথান ডেম। উল্লেখ্য, জোনাথান আগ্রহী ছিলেন ছবির প্রটাগনিস্ট হিসেবে ফিফারকে নিতে, কিন্তু আগেই বলা হয়েছে চিত্রনাট্য পড়ে প্রকল্প থেকে সরে যান তিনি। এবার প্রটাগনিস্ট হিসেবে যুক্ত হলেন জোডি ফস্টার। তখনই বেশকিছু ডার্ক চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিল তিনি। সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্ব ছবিতে প্রটাগনিস্ট হতে পেরে খুশিই হয়েছিলেন জোডি, সেই দৃশ্যগুলো আমার খুব পছন্দ যেখানে কঠিন, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পরিস্থিতি দেখানো হয়। এটাই আমার কাজ। আমি এটা পছন্দ করি। বেশির ভাগ মানুষ যা দেখতে পায় না সেটা আমি নিজের চোখ দিয়ে দেখতে ভালোবাসি। ফিফার সরে দাঁড়ালে জোডি নিজেই জোনাথান ডেমের কাছে চরিত্রটি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি জোনাথানকে বলেছিলেন, ছবিটিতে কাজ করার পেছনে কিছু কারণ আছে। শুধু যে চরিত্রটি দারুণ সেজন্যই কাজ করব তা না, বরং এখানে আমার কিছু ব্যক্তিগত আগ্রহও আছে।

সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্ব ছবিটি নির্মাণে একটি বিশেষ লক্ষ্য মাথায় রাখা হয়েছিল। উপন্যাসে সহিংসতার বিবরণ যতই খোলামেলা হোক না কেন ছবিতে সেটা অনেক নিম্নমাত্রায় দেখাতে হবে। তবে ভয়ের অনুভূতিকে তরল করা যাবে না, বরং হাড় হিম করে দেয়া পরিস্থিতিই তৈরি করতে হবে। সমালোচকরা বলেন, মূল উপন্যাসের তুলনায় সিনেমাটা অনেক বেশি উচ্চমানের। সাধারণত যা হয় তার উল্টো।

অ্যান্থনি হপকিন্সের কথায়, জোনাথান ডেম সত্যিকার কিছু ভয়ানক দৃশ্য থেকে সরে আসেন। একটি দৃশ্য ছিল যেখানে আমার চরিত্রটি (হ্যানিবল লেকটার) একজনের মুখ কেটে টুকরো করছে, কিন্তু জোনাথান রকম দৃশ্য বাদ দিয়েছে। একটা অটোপসি দৃশ্য আছে, যা তিনি দেখিয়েছেন। কারণ এটা কাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জোনাথান দর্শককে সহিংসতার কেবল ঝলক দেখিয়েছেন। উন্মুক্ত সহিংসতার চেয়ে তিনি মনস্তাত্ত্বিক ত্রাস সৃষ্টি করতেই বেশি পছন্দ করেন।

পরিচালক জোনাথান ডেমের মুখেও শোনা যায়, ছবিতে সহিংসতা কোনো মৌলিক প্রয়োজনীয় বিষয় নয়। এখানে ভয় উপস্থাপন করা হয় চরিত্রের মাধ্যমে। এখানে লেকটার চরিত্রটি জানে কীভাবে ভয়ানক অপরাধ করতে হয়। আবার তার চরিত্রে কিছু মানবিকতাও আছে। একটা দৃশ্য আছে যেখানে দেখা যায় স্টার্লিং তার অতীতের একটি ট্রমার বিষয় লেকটারকে খুলে বলছে। ঘটনা শুনে লেকটার তার প্রতি সহানুভূতি দেখায়, এটা তার চরিত্রকে জটিল করে তোলে, কিছুটা অনিশ্চিতও।

জোডি ফস্টারের মতে, ছবিতে তার চরিত্রটি অর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের নারী সংস্করণ নয়। এখানে নারী চরিত্রটি কোনো মেশিনগান হাতে নিয়ে দৌড়ায় না। বরং শত্রুর সঙ্গে সে লড়াই করে আবেগ, অনুমান ঝুঁকিসহকারে। আমার মনে হয় না এমন কোনো নারী প্রটাগনিস্ট চরিত্র আর কখনো দেখা যাবে।

অ্যান্থনি হপকিন্সের কথায়, চিত্রনাট্য পড়েই আমি বুঝেছিলাম কীভাবে সে (হ্যানিবল লেকটার) তাকায়, শব্দ করে। আমি তাকে তিনটা কণ্ঠের মিশ্রণ মনে করেছি। আমি জানি না কীভাবে আমি এটা করেছিলাম।

 

দি এম্পায়ার ম্যাগাজিন

অবলম্বনে শানজিদ অর্ণব

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন