যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোয় ডব্লিউটিওর নেতৃত্ব বাছাইয়ে অচলাবস্থা

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের বাগড়ায় নেতা নির্বাচন নিয়ে দোটানার মধ্যে পড়ে গেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বৈশ্বিক বাণিজ্য তদারককারী সংস্থাটির মনোনয়ন কমিটি পরবর্তী মহাপরিচালক হিসেবে যার নাম প্রস্তাব করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন তাকে মেনে নিতে নারাজ। প্রধান তহবিলদাতার ভেটো তো আর একেবারে অগ্রাহ্য করা যায় না। অবস্থায় নতুন মহাপরিচালক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ডব্লিউটিওর সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছেযুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে ভোটাভুটির মাধ্যমে মনোনয়ন কমিটির পছন্দকেই নিয়োগ দেয়া অথবা হোয়াইট হাউজে নতুন কাউকে দেখার অপেক্ষা করা। খবর রয়টার্স।

সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক হিসেবে নাইজেরিয়ার সাবেক মন্ত্রী নগোজি ওকোঞ্জো ইওয়েলার নাম প্রস্তাব করেছিল সংস্থাটির তিন সদস্যের মনোনয়ন কমিটি। প্রচলিত চর্চা অনুযায়ী তারই নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভেটো দিয়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন ওকোঞ্জোর মনোনয়নের বিরোধিতা করে বলেছে, তারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ইউ মিউং-হিকে ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক পদে দেখতে চায়।

কিন্তু কেন এই বিরোধিতা? যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা সংস্থাটির প্রধান হিসেবে এমন একজনকে চায়, যার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে কাজ করার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর মিউং-হিকে এমনই একজন মনে হয়েছে ওয়াশিংটনের কাছে।

তাহলে কি ওকোঞ্জো এই পদের জন্য অনুপযুক্ত? তার মুখপাত্র মলি টুমে এমনটা মনে করেন না। তিনি বলেছেন, ওকোঞ্জোর যদি কোনো যোগ্যতাই না থাকত তাহলে মনোনয়ন কমিটি নিশ্চয়ই তার নাম সুপারিশ করত না।

নাইজেরিয়ার একাধিক মন্ত্রণালয় সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে ওকোঞ্জোর। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের জুন পর্যন্ত দেশটির ফিন্যান্স মিনিস্টার ছিলেন তিনি। এরপর মাসখানেকের জন্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১১-১৫ মেয়াদে ফের ফিন্যান্স মিনিস্টার নিযুক্ত হন ওকোঞ্জো। পাশাপাশি সময়ে কো-অর্ডিনেটিং মিনিস্টার অব ইকোনমির দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

অভিজ্ঞতার ঝুলি দেখে বোঝাই যাচ্ছে, যোগ্যতার দিক থেকে ওকোঞ্জোও ছেড়ে কথা বলার নন। মনোনয়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তিনি মহাপরিচালক নির্বাচিত হলে প্রথমবারের মতো কোনো আফ্রিকান নেতা পেত ডব্লিউটিও। উল্লেখ্য, ওকোঞ্জোর মার্কিন নাগরিকত্বও রয়েছে। সুতরাং তাকে দায়িত্ব দেয়া হলে তা কোনো বিবেচনাহীন সিদ্ধান্ত হবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাগড়ায় শেষ মুহূর্তে প্রক্রিয়াটি আটকে গেল।

জেনেভাভিত্তিক একজন কূটনীতিক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র জল ঘোলা করে গতিপথ পাল্টে দিল। একেবারে শেষ মুহূর্তে ইউকে সমর্থন জানানোর মাধ্যমে তারা ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়াটিই জটিল করে তুলল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক কর্মকর্তা বলেছেন, ওয়াশিংটনের এই শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত বদলের নেপথ্যে নিশ্চয়ই ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো ক্রোধোন্মত্ত আলোচনার ভূমিকা রয়েছে।

ডব্লিউটিওর ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসনের যে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে, তার প্রমাণ এরই মধ্যে পাওয়া গেছে। ট্রাম্পের কাছে ডব্লিউটিও একটি ভয়ানক সংস্থা। তিনি সংস্থাটির বিরুদ্ধে চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে এটি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন।

ডব্লিউটিও নিয়ে যার এমন নেতিবাচক অবস্থান, সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে আগামী নভেম্বরের মধ্যে তাদের মত পরিবর্তন করে ওকোঞ্জোর মনোনয়ন সুপারিশ মেনে নেবে, সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ওইদিন নতুন নেতা চূড়ান্ত করার জন্য বৈঠকে বসবেন সংস্থাটির সদস্যরা। এমনকি ট্রাম্প যদি নভেম্বরের নির্বাচনে হেরেও যান, তবুও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের দিন পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি বহাল থাকবে।

ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে এই প্রথম সংকট তৈরি হলো, তা নয়। এর আগেও একাধিকবার অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে দুজন প্রার্থীকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত দুই প্রার্থীকেই একটি করে মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে অচলাবস্থার অবসান হয়।

ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ২০০৩ সালে নতুন নিয়ম চালু করা হয়। এই নিয়ম অনুযায়ী, যে প্রার্থীর সর্বসম্মতি অর্জনের সম্ভাবনা তুলনামূলক কম, তাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আর এর মাধ্যমেও যদি অচলাবস্থা না কাটে তাহলে শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটির মাধ্যমেই সমাধান খুঁজে নিতে হবে। বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে দক্ষিণ কোরিয়ার ইউয়ের পক্ষে সমর্থন ওকোঞ্জোর চেয়ে কম। অবস্থায় ইউ তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। তবে এমন কোনো ইচ্ছা তার রয়েছে কিনা, ইউয়ের প্রতিনিধির কাছে তা জানতে চাওয়া হলেও কোনো জবাব মেলেনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন