গবেষণার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়

গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণসহ নিরাপদ প্রাণিজ প্রোটিন উৎপাদনের আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকার খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

প্রাণিসম্পদ শিল্পে ভেটেরিনারিয়ানদের অবদান জনসম্মুখে তুলে ধরতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারো বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসের প্রতিপাদ্য- ভেটেরিনারিয়ানগণ অপরিহার্য স্বাস্থ্য কর্মী।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আহুত সবুজ বিপ্লব কৃষি দর্শনের ফলে আজ আমরা খাদ্য উৎপাদনের প্রায় সবগুলো খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবার সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়েছে, বেড়েছে গড় আয়ু ও গড় উচ্চতা। আর এক্ষেত্রে ভেটেরিনারিয়ানদের অবদান অনস্বীকার্য।

ভেটেরিনারিয়ানদের প্রাণিসম্পদের প্রাণ হিসেবে অভিহিত করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের পুষ্টি ও আমিষ জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন নয় বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের রাস্তাও তৈরি করতে হবে। এজন্য ভেটেরিনারিয়ানদের যোগ্যতম জায়গায় কাজ করার সু্যোগ করে দিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নিরাপদভাবে প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, আমাদের উৎপাদিত পশু যদি নিরাপদ না হয় তাহলে তা খেলে আমাদের দেহেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। মানব শরীরে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হবে। সুতরাং শুধু উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার না করে বরং প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে পশুকে রোগমুক্ত রাখা যায় সে বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করতে হলে প্রতিটি ইউনিয়নে ভেটেরিনারিয়ানদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। ভেটেরিনারি সার্ভিসের ইমার্জেন্সি সার্ভিস হিসেবে স্বীকৃতি থাকা দরকার বলে মন্তব্য করে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনবেন বলে এ সময় তিনি ভেটেরিনারিয়ানদের আশ্বস্ত করেন।

প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, সবার সহযোগিতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে। সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন হলে কোনো চ্যালেঞ্জই মোকাবেলা করা অসম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার নীতি তথা কৃষি দর্শন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকৌশলের ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথ ধরে অনুন্নত দেশ থেকে এরই মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। ২০৪১ সালের মধ্যেই উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।

উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন মেধাবী ছাত্রদের কৃষি শিক্ষায় আকৃষ্ট করতে জাতির পিতা কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে এ মর্যাদা দিয়েছিলেন সেটি মাথায় রেখে কাজ করার জন্য ভেটেরিনারিয়ানদের প্রতি আহবান জানান মন্ত্রী।

অধিকতর গুণগত উৎপাদনের প্রতি ভোক্তার চাহিদা বৃদ্ধি, হাইব্রিড জাত নির্বাচন এবং সংরক্ষণ, আধুনিক জলবায়ু কৌশলের আবির্ভাব এবং গ্রিনহাউজ গ্যাস নিয়ন্ত্রণ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ভোক্তার পরিবর্তিত চাহিদা, জৈব-নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য ও ঝুঁকি মোকাবেলা এবং প্রাণিসম্পদ চাষাবাদের জন্য নির্ধারিত জমির পরিমাণ কমে যাওয়াকে প্রাণিসম্পদ খাতের চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি ভেটেরিনারিয়ানদের সংকট মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

মন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। ভেটেরিনারিয়ানদের নিবিড় পরিশ্রমে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মিত হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকেন তাহলে তৃণমূল থেকে দেশকে গড়ে তুলে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের যে অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা তিনি দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের কারিগর হিসেবে তিনি ভেটেরিনারিয়ানদের স্বীকৃতি দিবেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের মহাসচিব কৃষিবিদ খায়রুল আলম প্রিন্স ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ বক্তব্য রাখেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন