কভিড-১৯ মহামারীর এ সময়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু সহজ নয়। বিষয়টি বিভিন্ন দেশের মতো ইরানের জন্যও সত্য। তাছাড়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করার আগেই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে বছর শুরু করেছিল। যদিও আগে থেকে আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার জন্য ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক ছিল না।
তাছাড়া বেশির ভাগ ভোক্তা যেখানে বিদেশী পণ্যের ওপর নির্ভরশীল, ঠিক তেমন প্রেক্ষাপটে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর জন্য নতুন করে ক্রেতা আকর্ষণের বিষয়টিও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। ঠিক এ ঝুঁকিটাই নিলেন ইরানের ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘কোই’-এর তিন সদস্য। জুলাই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত নারীদের জন্য তৈরি হাজার হাজার ক্রপ টপ ও স্ট্রিপ জিন্স বিক্রি করেছে তারা। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের তেল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সঙ্গে রয়েছে কভিড পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক বাণিজ্যে অংশ নিতে না পারার মতো বিষয়গুলো। তবে আর্থিক সংকটের এমন এক অবস্থায় ‘ইরানের দেশীয় পণ্য’
নতুন করে আশার সঞ্চার করছে। পশ্চিমা বিধিনিষেধ সত্ত্বেও কোই, জি শ্যাম্পু কিংবা বোনমানো কফির মতো ইরানের দেশীয় ব্যান্ডগুলো বিদেশী পণ্যের শূন্যতা বেশ ভালোভাবেই পূরণ করতে সমর্থ হচ্ছে।
কোইয়ের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা আরমিতা ঘাসাবির ভাষ্য হচ্ছে, ‘আমরা জানতাম যে আমাদের উদ্যোগটি কার্যকর হবে, কারণ আমাদের চারপাশের লোকগুলো মৌলিক ও সাধারণ জিনিসগুলোর জন্য বেশ মরিয়া।’
আমদানীকৃত কাঁচামালের ওপর নিজেদের নির্ভরতা ত্যাগ করে পোশাক তৈরির জন্য ব্র্যান্ডটি উত্তর-পশ্চিম ইরানের একটি টেক্সটাইল মিল থেকে কাপড় আনে, যা তাদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে কম দামে ক্রেতাকে পণ্য সরবরাহ করাটা সহজ করেছে।
তাছাড়া দেশটির সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খামেনির তার ‘প্রতিরোধের অর্থনীতি’
বিষয়ক নীতির মাধ্যমেও ইরানের অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থিতিস্থাপকতা এনেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আগে ২০১৫ সালের চুক্তির পর ইরান তার সংবেদনশীল পরমাণু কর্মকাণ্ড সীমিত করতে রাজি হলে দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়াসহ আবারো আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসেন ট্রাম্প। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্য সম্পর্ক আরো বেশি উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে।
২০১৮ সালে নিষেধাজ্ঞার পর তেহরানের রাস্তাগুলো থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া প্রথম পণ্য ছিল বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক। হঠাৎ এ বিপর্যয়ের ফলে রিয়ালের মূল্যও কমে যায়। তাছাড়া পোশাকের মতো অভোগ্য পণ্যের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞার বড় ধরনের প্রভাব পড়ে খুচরা ব্যবসায়ে। স্বল্প আমদানি হওয়ায় বিদেশী ব্র্যান্ডের শ্যাম্পুর দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তবে সে ঘাটতিগুলো পূরণ করে ইরানের দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। দাম কম হওয়ার পাশাপাশি গুণগত মানসম্পন্ন বলে ক্রেতারাও দেশীয় পণ্য ব্যবহারে উৎসাহী হয়।
বেসরকারি খাত সম্প্রসারণের পাশাপাশি ইরানের কর্মকর্তাদের নিকটবর্তী দেশগুলোয় পণ্য রফতানির জন্য বলা হয়েছে। তবে ইরানের অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাবসা এমন পরিস্থিতিতেও ভালো ব্যবসা করছে। গত দুই বছরে নতুন করে নিজেদের তৈরি পণ্য নিয়ে অনেকেই ক্ষুদ্র ব্যবসায় শুরু করেছে। গত বছর যেখানে এ সংখ্যা ছিল মাত্র চার হাজার, সেখানে এ বছর ৪৮ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নতুন করে নিবন্ধিত হয়েছেন।
এটা ঠিক যে ইরানের অর্থনীতি এখনো অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে এ সপ্তাহে। তেহরানসহ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে পাঁচটি শহরের ওপর। তবে ট্রাম্পের চাপ সত্ত্বেও নতুন নতুন উদ্যোক্তা ও ব্যবসা বিকাশের বিষয়টি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।