চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিরোধে লাভবান মেক্সিকো

বণিক বার্তা ডেস্ক

মেক্সিকোয় ম্যান ওয়াহ ফার্নিচারের কারখানা ছবি: বিবিসি

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য বিরোধে লাভবান হচ্ছে মেক্সিকো। মূলত ভূরাজনৈতিক টানাপড়েন এড়াতে চীনা সংস্থাগুলো মার্কিন সীমান্তবর্তী দেশটিকে বেছে নিচ্ছে। মেক্সিকোর সরকারি সহযোগিতা, সস্তা শ্রম, কর্মীদের পরিশ্রমী মনোভাব ও উচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা চীনা সংস্থাগুলোকে দেশটিতে বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করছে। খবর বিবিসি।

বৈশ্বিক আসবাবপত্র জায়ান্টগুলোর অন্যতম ম্যান ওয়াহ ফার্নিচার। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হওয়া এ ব্র্যান্ডের আর্মচেয়ার ও চামড়ার সোফাগুলো শতভাগ মেক্সিকোয় তৈরি, লেখাও থাকে ‘মেড ইন মেক্সিকো’। মন্টেরির কারখানায় তৈরি পণ্যগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে কস্টকো ও ওয়ালমার্টের মতো বড় মার্কিন রিটেইল আউটলেটে।

ম্যান ওয়াহ উত্তর মেক্সিকোয় শিল্প পার্কে স্থানান্তর হওয়া চীনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। নিজেদের উৎপাদন ব্যবস্থা মার্কিন বাজারের কাছাকাছি রাখতেই মেক্সিকোর দ্বারস্থ হতে হয়েছে চীনকে। এতে শিপিং খরচ সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি চূড়ান্ত পণ্যটি মেক্সিকান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে দেয়া শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা এড়ানো যাচ্ছে।

ম্যান ওয়াহ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক ইউ কেন ওয়েই বলেন, ‘আমাদের কারখানা মেক্সিকোয় স্থানান্তর হওয়ায় অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক অর্থে একটি ভালো সিদ্ধান্ত ছিল।’

মেক্সিকোয় তিন গুণ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে চার গুণ উৎপাদন আশা করেন বলেও জানান ইউ কেন ওয়েই। তিনি জানান, মেক্সিকোর উৎপাদন ক্ষমতাকে ভিয়েতনামের কাছাকাছি করে তোলাই বর্তমানে তাদের লক্ষ্য।

২০২২ সালে মন্টেরিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কারখানায় ম্যান ওয়াহ ৪৫০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। ইউ কেন ওয়েই বলেন, ‘আগামী বছরগুলোয় প্ল্যান্টে বেশ কয়েকটি নতুন লাইনআপ চালু হবে। তখন সব মিলিয়ে ১ হাজার ২০০-এর বেশি কর্মসংস্থান হবে।’

বেইজিংয়ের কৌশলগত এ সিদ্ধান্ত মেক্সিকান অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর প্রভাবে ২০২৩ সালে জুনে মেক্সিকোর মোট রফতানি এক বছরের আগের তুলনায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ২৯০ কোটি ডলার হয়েছে।

মেক্সিকোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ২০২৭ সাল পর্যন্ত দেশটির পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল এরই মধ্যে বরাদ্দ হয়ে গেছে। অনেক মেক্সিকান অর্থনীতিবিদ মনে করেন, মেক্সিকোর সঙ্গে চীনের এ সম্পৃক্ততা অস্থায়ী নয়। এ প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে চলমান থাকবে।

মেক্সিকোর সাবেক বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক উপমন্ত্রী জুয়ান কার্লোস বেকার পিনেদা জোর দিয়ে বলেন, ‘মেক্সিকোয় মূলধন আকর্ষণ করার অন্তর্নিহিত কারণগুলো স্থায়ী। কারণ অদূর ভবিষ্যতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা হ্রাসের কোনো লক্ষণ নেই।’ তবে মেক্সিকোয় আসা বিনিয়োগের চীনা উৎস কিছু দেশের নীতির জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর চায়না-মেক্সিকো স্টাডিজের এনরিক ডুসেল বলেন, ‘চীনকে স্বাগত জানানো মধ্যমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ভালো হবে না তা বলতে আপনার পিএইচডি করার প্রয়োজন নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন