বৈশ্বিক শিপিং খাত

কার্বন নিঃসরণ কমাতে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে আইএমও

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম হলো সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন। হাজার হাজার সুমদ্রগামী জাহাজ এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বিশ্ববাণিজ্যের চাকা সচল রাখছে। তবে একই সময়ে তারা পরিবেশেরও কিছু ক্ষতিসাধন করছে। কার্গো জাহাজগুলোর নিঃসরণ হ্রাসের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি কীভাবে কমানো যায়, সে বিষয়ে অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলে আসছিল। অবশেষে বিষয়ে একটি সর্বসম্মত সমাধান পেতে চলেছে বিশ্ব। পণ্যবাহী জাহাজগুলোর দ্বারা পরিবেশ দূষণ কমানোর আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছতে চলেছে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ। খবর ব্লুমবার্গ।

সমুদ্রগামী প্রায় ৬০ হাজার বড় জাহাজের কার্বন নিঃসরণ মাত্রা পরিমাপের জন্য একটি নতুন রেটিং ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়ে আলোচনার জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) উদ্যোগে আজ থেকে ধারাবাহিক ভার্চুয়াল আলোচনা শুরু হচ্ছে।

চলতি শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে কার্গো শিপমেন্ট খাতে কার্বন নিঃসরণ প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে আইএমও সদস্য দেশগুলোর। লক্ষ্যে ২০১৮ সালে একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তারা। তবে লক্ষ্য কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি সেই চুক্তিতে। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এবারের ভার্চুয়াল আলোচনায় আইনি বাধ্যবাধকতা জারিপূর্বক কোনো চুক্তি হলে সেই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার সফল সমাপ্তি ঘটবে।

২০১৮ সালের ওই চুক্তির সময় আইএমওর সব সদস্য দেশই জাহাজগুলোর কার্বন নিঃসরণের হার পরিমাপের জন্য একটি রেটিং ব্যবস্থা চালুর পক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু এই রেটিং কীভাবে নির্ধারণ করা হবে কিংবা এর আইনি প্রয়োগ কী রূপ হবে, সে বিষয়ে দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়।

কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে চুক্তির লক্ষ্যে জাপান, চীন, জার্মানি, ভারতসহ ১৪টি দেশের সঙ্গে মিলে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিং। তারা বলেছে, চুক্তি স্বাক্ষর হলে তা হবে বৈশ্বিক শিপিং খাতের জন্য বড় একটি অগ্রগতি। উল্লেখ্য, পরিবেশবাদী গ্রুপগুলো অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে জাহাজ মালিকরা সিদ্ধান্ত নিতে বড্ড দেরি করছেন। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঝুঁকি প্রশমনে আইএমওর উদ্যোগও এখন পর্যন্ত তেমন উল্লেখযোগ্য নয় বলে মত তাদের।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিংয়ের উপমহাসচিব সাইমন বেনেট বলেছেন, আমরা জানি, আমাদের আরো কাজ করতে হবে। এছাড়া আমরা যা কিছু সিদ্ধান্ত নিই, তা কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। সেগুলোর বাস্তব চর্চাও নিশ্চিত করতে হবে। শিপিং খাতে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমানোর বাস্তবসম্মত সমাধানে পৌঁছতে হলে সম্পূর্ণ নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তিসম্পন্ন সলিউশন খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।

কয়েকটি বিষয়ে আইএমওর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে, যেগুলো আজ থেকে শুরু হওয়া আলোচনায় সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। ইউরোপীয় দেশগুলোর মতে, ২০২৯ সালের মধ্যে যেসব পরিবেশ দূষণকারীর জাহাজ কার্বন নিঃসরণের কমপ্লায়েন্স মানতে ব্যর্থ হবে, সেগুলোকে স্ক্র্যাপে পরিণত করতে হবে। তবে চীন, জাপানসহ কয়েকটি দেশ ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিং ইউরোপের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছে, ধরনের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন নেই। কারণ এমনিতেই বর্তমানে জাহাজগুলোয় নিয়মিত জ্বালানি নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। সময় কোনো জাহাজ কমপ্লায়েন্স পরিপালনে ব্যর্থ হলে তাকে জরিমানা করা হয় অথবা তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো বলছে, বর্তমানে যেসব নিয়ম-নীতি চালু রয়েছে, সেগুলোর কোনোটিই যথেষ্ট কঠোর নয়। এমনকি ইউরোপীয় দেশগুলো যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি মেনে নেয়ার অর্থ হলো আরো এক দশক জাহাজগুলোকে কার্বন নিঃসরণের সুযোগ করে দেয়া।

প্রকৃত অর্থেই এখন পর্যন্ত শিপিং খাতকে পরিবেশবান্ধব করার উদ্যোগে অগ্রগতি খুব সামান্য। ১৯৯৫ সালে আলোচনা শুরু করে ২০১৮ সালে এসে একটি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিতে সমর্থ হয়েছে আইএমও। ২০৩০ সালের মধ্যে খাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা ২০০৮ সালের অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে আইএমওর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন