যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব সুবিধা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ছাড়িয়েছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে নভেল করোনাভাইরাস হানা দেয়ার পর দেশটিতে বেকারত্ব সুবিধার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা বৃহস্পতিবার চার কোটি ছাড়িয়ে গেছে। যদিও কিছু কর্মী কাজে ফিরতে শুরু করেছেন, তবে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের পণ্য বিক্রিতে বড় আকারের পতন হয়েছে। খবর এএফপি।

গত শতাব্দীর গোড়ার দিকের মহামন্দার পর যুক্তরাষ্ট্রে এত বড় আকারের কর্মী ছাঁটাই হয়নি। নতুন প্রকাশিত উপাত্তে দেখা গেছে, প্রথম ত্রৈমাসিকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটি শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর অব্যাহত প্রভাবে ভবিষ্যতে যে আরো খারাপ দিন আসছে, তার পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে প্রথম প্রান্তিকের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে।

কর্মী ছাঁটাই সর্বোচ্চে পৌঁছলেও এখনো তা সমানতালে চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, ২৩ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে আরো ২১ লাখ ২০ হাজার আমেরিকান নাগরিক বেকারত্ব সুবিধার আবেদন করেছে। ১২ বছর আগে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহের চেয়েও অধিক আমেরিকান বেকারত্ব সুবিধার জন্য আবেদন করলেও তা পূর্ববর্তী সপ্তাহের চেয়ে কমার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বেকারত্ব সুবিধার জন্য আবেদন করেছিলেন ২৪ লাখ ৪০ হাজার আমেরিকান।

এদিকে ১৬ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে বেকারত্ব সুবিধা গ্রহণ বন্ধ করাদের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৬০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। মহামারী শুরুর পর এই প্রথম বেকারত্ব সুবিধা গ্রহণ বন্ধকারীর সংখ্যা বড় আকারে কমল। এর মানে অনেকেই নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। অবশ্য গত বছরের একই সপ্তাহে যেখানে ১৭ লাখ আমেরিকান বেকারত্ব সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন, সেখানে চলতি বছরে ওই সুবিধা গ্রহণকারীর সংখ্যা তার চেয়ে কোটি ১০ লাখেরও বেশি।    

দ্য হোয়াইট হাউজ কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজর্স এক টুইটে জানায়, বেকারত্ব সুবিধা গ্রহণকারীর সংখ্যা কিছুটা কমাতে মানুষ যে কাজে ফিরছে, তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যদি এটা অব্যাহত থাকে, তবে তা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখা দেবে। আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হতে মরিয়া ট্রাম্প অর্থনীতি চালুর জন্য রাজ্যগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন। কারণ স্বাস্থ্য অর্থনৈতিক বিপর্যয় ভোটারদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে।

তবে শ্রমমন্ত্রী ইউজিন স্কালিয়া স্বীকার করেছেন যে জাতীয় বেকারত্বের হার ২০ শতাংশে পৌঁছতে পারে। ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে তিনি বলেন, আমাদের আবারো স্বীকার করতে হবে সারা দেশে কর্মজীবীদের জন্য কঠিন সময় চলছে। অবশ্য আমরা ধীরে ধীরে অর্থনীতি চালু করছি।

অর্থনীতি চালু করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগ্রাসী হিসেবে দেখা যাচ্ছে ফ্লোরিডাকে, যাদের বীমা হারে সর্বোচ্চ পতন হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বীমা হারেও বড় পতন হয়েছে। প্যানথিয়ন ম্যাক্রোনমিকসের আয়ান শেফার্ডসন আশা করছেন, জুনের শেষের দিকে প্রতি সপ্তাহে বেকারত্ব সুবিধা গ্রহণকারীর সংখ্যা ১০ লাখ করে কমবে এবং পরবর্তী সপ্তাহগুলোয় ওই সুবিধার জন্য আবেদন আরো কমে আসবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এপ্রিলে তৈরি পণ্যের ক্রয়াদেশ ১৭ দশমিক শতাংশ কমেছে। গত মার্চেও খাতে ক্রয়াদেশ কমেছিল ১৬ দশমিক শতাংশ। সেবা খাতের ওপর বড় আকারে নির্ভরশীল মার্কিন অর্থনীতির জিডিপি পরিমাপের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এটি। পুরো মাস লকডাউনের ফলে এপ্রিলে তৈরি পণ্যের বিক্রি কমে ১৭ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস আঘাত হানার আগে তার পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের বিশাল পতনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে মার্কিন অ্যারোস্পেস জায়ান্ট বোয়িং। গত মার্চে ৩১টি ক্রয়াদেশ পেলেও এপ্রিলে কোনো ক্রয়াদেশ পায়নি শীর্ষ উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানিটি।

গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে গাড়ি যন্ত্রাংশ বিক্রি কমেছে প্রায় ৫২ দশমিক শতাংশ। মার্চে ৪৩ শতাংশ পতনের পর এপ্রিলে সব ধরনের যানবাহনের ক্রয়াদেশ কমেছে ৪৭ শতাংশের বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন