সেই মাশরাফিকে নিয়েই এত টানাপড়েন!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। বারবার ইনজুরিতে পড়েছেন কিন্তু হার মানেননি। অদম্য মানসিকতায় ফিরে এসেছেন মাঠে। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি মর্তুজা ছুটছিলেন দুর্দান্ত গতিতে। এ সময়ের মাঝে ছুঁয়েছেন সাফল্যের দারুণ সব শিখর। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতেও তিনি হয়ে ওঠেন চূড়ান্ত মানদণ্ড। কিন্তু সব ভালোই নাকি কখনো না কখনো শেষ হতে হয়। অধিনায়ক মাশরাফিরও তাই আসে শেষের ডাক। তবে শেষের আগেই এ সময়টা নিশ্চিতভাবেই খুব একটা ভালো যাচ্ছে না ম্যাশের জন্য। তার অবসর নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা মোটেই ভালো কোনো দৃষ্টান্ত তৈরি করছে না। তবে ম্যানেজমেন্ট বারবার ইঙ্গিত দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে, এবার সময় হয়েছে যাওয়ার। দিতে চায় রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনাও। তবে মাশরাফির নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি যেন, শান্তভাবেই সব শেষ করার পক্ষে। যদিও নিজের অবসরের বিষয়ে এখনো প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে রেখেছেন তিনি।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের আগেই বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, এটাই অধিনায়ক মাশরাফির শেষ সিরিজ। ২০২৩ বিশ্বকাপ সামনে রেখে এ সিরিজের পর থেকে নতুন অধিনায়কের সন্ধান করবেন তারা। জানিয়ে দেয়া হয়, মাশরাফিকে খেলা চালিয়ে যেতে হলে নিজের ফিটনেসের প্রমাণ দিয়েই খেলতে হবে। যদিও পরবর্তী সময়ে নিজের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ ইস্যুতে অবশ্য বরাবরের মতোই চুপ আছেন মাশরাফি। নিজের অবসর নিয়েও বলছেন না কিছু। এর আগে বিপিএল চলাকালেও মাশরাফি বলেছিলেন, যতদিন মন চাইবে খেলবেন। তবে সেটি জাতীয় দলে হতে হবে এমন না। আর জাতীয় দল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন তিনি। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, মাশরাফিকে বাদ দিয়েই ভবিষ্যতের কথা ভাবছে তারা। এমনকি কেন্দ্রীয় চুক্তিতে মাশরাফি থাকা না থাকা নিয়েও জল ঘোলা হয়েছে অনেক। নিজে থেকে সরে গিয়ে সেই সমস্যার সমাধান মাশরাফি নিজেই করে দিয়েছেন। কিন্তু তার পরও যেন শেষ হওয়ার না এ জটিলতা। যার হাত ধরে বাংলাদেশের নতুন যুগের শুরু, তাকেই বোঝা ভাবতে শুরু করেছে দল।

মাশরাফিকে নিয়ে এমন টানাহেঁচড়ার ইস্যুর সূত্রপাত হয় বিশ্বকাপের সময় থেকে। বিশ্বকাপটা একেবারেই ভালো যায়নি অধিনায়কের। আট ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছেন একটি। সে সময় মাশরাফির পারফরম্যান্স নিয়ে কথাও হয়েছে অনেক। এমনকি পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ দিয়ে মাশরাফি অবসরের ঘোষণা দিতে পারেন বলেও গুঞ্জন ওঠে। তখনো মাশরাফি বিস্তারিত কিছু বলেননি। শ্রীলংকা সফর দিয়ে চেয়েছিলেন ব্যর্থতা ভুলতে। কিন্তু চোটের কারণে যাওয়া হয়নি। এরপর ওয়ানডে ম্যাচ না থাকায় জাতীয় দল থেকে দূরেই ছিলেন। মাঝে ত্রিদেশীয় সিরিজ চলাকালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে আয়োজন করে মাশরাফির বিদায়ের কথা ভেবেছিল ম্যানেজমেন্ট। সেই ডাকে সাড়া দেননি তিনি।

বারবার ব্যর্থতা কাটিয়ে ফিরে আসা মাশরাফি হয়তো রাজকীয়ভাবেই ফিরতে চেয়েছিলেন। আর কে না জানে, প্রত্যাবর্তনের গল্প তো মাশরাফির এ জীবনে কম না। কিন্তু এবার যেন বয়সটাই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিরতে চাইলেও বেলা পড়ে এসেছে। মাশরাফি নিজেও কি শুনতে পাচ্ছেন না শেষের ডাক! কিন্তু যার হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট নতুন যুগ দেখেছে, সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগটা কি তাকে দেয়া যায় না? বিসিবি সভাপতি বারবার বলেন, অধিনায়ক মাশরাফির কোনো বিকল্প নেই। তবে অধিনায়কের বিদায়টাও কি অধিনায়কোচিতই হতে পারে না?

টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে দেয়া বক্তব্য থেকে অবশ্য পরে সরে এসেছেন বিসিবি প্রধান। অধিনায়ক মাশরাফির শেষ সিরিজ, এমন কিছু তিনি বলেননি। পরবর্তী বোর্ড সভাতেই ঠিক হবে অধিনায়কের ভবিষ্য। কিন্তু খুব নাটকীয় কিছু না হলে এটিই হতে যাচ্ছে মাশরাফির অধিনায়কত্বে শেষ ওয়ানডে সিরিজ। যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিশ্চিত বলতে কোনো কিছুই নেই। এখানে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু হতে পারে। তবে সিলেটে অনুষ্ঠেয় এ সিরিজ শেষ হতেই আরো অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন