অর্ধযুগের বেশি সময়ের আঁধার কাটবে, মাঠে গড়াবে নারী ফুটবল লিগ।
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ লিগ ঘিরে যেমনটা প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, ঠিক তেমন উন্মাদনা থাকছে না।
এর কারণ প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলোর অনীহা।
চলতি মাসের শেষ দিকে শুরু হবে এ লিগ।
যেকোনো ক্লাব চাইলেই অংশ নিতে পারবে—এমন উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। খুব বেশি সাড়া মেলেনি।
মাত্র ছয়টি ক্লাব এখন পর্যন্ত অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ছয় ক্লাবের তিনটি ছেলেদের প্রিমিয়ার লিগ খেলে—বসুন্ধরা কিংস, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র।
এছাড়া উত্তরবঙ্গ এফসি, নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি ও বেগম আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাব এ লিগে খেলবে।
লিগ আয়োজনে ১২-২৬ জানুয়ারি খেলোয়াড় নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে।
এ সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ক্লাব আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের স্বাগত জানানো হবে বলে বাফুফে থেকে জানানো হয়।
নতুন কোনো ক্লাব অংশগ্রহণ না করলে ছয় দল নিয়েই হবে লিগ।
দলের সংখ্যা কম হওয়ায় ডাবল লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বাফুফে।
‘আমরা বিভিন্ন ক্লাবে চিঠি দিয়েছি।
দেশের শীর্ষ ক্লাবগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভাও করেছি।
অধিকাংশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ক্লাব টেন্ট একটি।
যেখানে পুরুষ ফুটবল দল অবস্থান করছে।
নারীদের জন্য আলাদা টেন্ট না থাকায় মেয়েদের আবাসনের ব্যবস্থা করা কঠিন।
তাই লিগে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না’—নারী লিগে শীর্ষ ক্লাবগুলোর অনাগ্রহ সম্পর্কে বণিক বার্তাকে বলেন বাফুফের কম্পিটিশনস ম্যানেজার জাবের বিন তাহের আনসারী।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তা ও সাবেক ফুটবলার বাদল রায় লিগে অংশগ্রহণ না করা সম্পর্কে বলেছেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদ নেই।
এ কারণে আমাদের আগ্রহ থাকার পরও নারী লিগে দল গড়তে পারছি না।
বার্ষিক সাধারণ সভার পর ক্লাবের নীতিনির্ধারণী পরিষদ ঠিক হবে।
তখন ক্লাব হয়তো নারী ফুটবল নিয়েও পরিকল্পনা করবে।’
প্রিমিয়ার লিগের ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীর পুরুষ দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ সম্পর্কে বলেন, ‘ক্লাবের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে নারী দল গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে আমরা তা জানাতে পারব।’
সর্বশেষ নারী লিগ হয়েছিল ২০১৩ সালে।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এ লিগ চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে বটে, তা আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৯ সালে বাফুফে কর্মকর্তারা জোর দিয়ে এ লিগ আয়োজনের কথা বললেও নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি বাফুফে নারী বিভাগের সভায় ৩১ জানুয়ারি লিগ শুরুর দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় ফুটবল সংস্থার কম্পিটিশনস বিভাগ থেকে বলা হয়, জানুয়ারির শেষ দিকেই এ লিগ শুরু হবে।
সেটা ৩০ অথবা ৩১ জানুয়ারি হতে পারে।
নারীদের ঘরোয়া কার্যক্রম না থাকায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বয়সভিত্তিক দলের সাফল্যটা সিনিয়র দলে টেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করা হয়।
বয়সভিত্তিক ফুটবলে কেবল সাফ অঞ্চলেই নয়, এশিয়ার শীর্ষ আটে পৌঁছেছে বাংলাদেশ।
কিন্তু সিনিয়র পর্যায়ে এখনো সাফ শিরোপাই পাওয়া হয়নি।
সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ২০১৬ সালের সাফ ফাইনাল খেলা।
সেবার ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ ট্রফিতে সান্ত্বনা খুঁজতে হয়েছে।
‘লিগ শুরু হলে মেয়েরা কিছু অর্থকড়ি পাবে—এটা ইতিবাচক দিক।
কিন্তু এ লিগ ফুটবল উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখবে তা সময়ই বলবে’—বলেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন।
নারী ফুটবল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা এ কোচ আরোও বলেন, ‘লম্বা সময় ধরে লিগ চললে মেয়েরা খেলার মধ্যে থাকতে পারবে, ওটা আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে।
কিন্তু এখন তো লিগ শুরু হচ্ছে ক্ষুদ্র পরিসরে।
স্বল্প সময়ের মধ্যেই তা শেষ হবে।’
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাঠে গড়াতে যাওয়া এ লিগ বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে আয়োজন করতে চান বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
সাবেক এ ফুটবলারের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার ব্যাপার।