স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল প্রচারবিমুখ প্রতাপ শঙ্কর

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিজয় দিবস এলে বেশ ব্যস্ত হয়ে ওঠেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা। সভা-সেমিনার, টক শোএমন নানা আয়োজনের মধ্যমণি হয়ে থাকেন ফুটবল দিয়ে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা দলটির সদস্যরা। তবে এসব একদমই টানে না প্রতাপ শঙ্কর হাজরাকে।

দেশ স্বাধীন করার কাজে ফুটবলের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পেরেছেন। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন দলের সদস্যরাএতেই খুশি প্রচারবিমুখ মানুষটি। তার বাইরে নিজেকে দেশের একজন সাদামাটা নাগরিক হিসেবেই মনে করেন প্রতাপ শঙ্কর।

ফুটবলার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখতে পেরেছি, দেশ স্বাধীন হয়েছে। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কী হতে পারে? এজন্য আমি গর্ববোধ করি’—গতকাল বণিক বার্তাকে জানান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম এ সদস্য। তিনি যোগ করেন, ‘প্রকৃত বীর তারাই, যারা অস্ত্রের মুখে নিজেদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। সে হিসেবে আমরা তো অনেক পেছনের কাতারে আছি।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে এখনো দাবি ওঠে। দলের অনেক সদস্য সে দাবি তোলেন। এ জায়গায় ব্যতিক্রম প্রতাপ শঙ্কর, ‘রাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর বাইরে আর কি স্বীকৃতি দেবে। এ জায়গায় অন্যদের সঙ্গে আমার দ্বিমত। এমন স্পষ্ট কথা বলার কারণে অনেকেই হয়তো আমাকে অপছন্দ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হাতড়ে একই সঙ্গে ফুটবল ও হকির সাবেক এ তারকা বলেন, ‘আরমানিটোলায় আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে পাক বাহিনী। এরপর কলকাতায় সতীর্থদের সঙ্গে যোগ দিলাম। ভারতের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু ম্যাচ খেললাম। ডিসেম্বরের ১০-১২ তারিখ হবে। বিভিন্ন স্থানে ম্যাচ খেলে আমরা কলকাতায় ফিরেছি। পাকিস্তানিদের পক্ষে জোট সংঘবদ্ধ হওয়ায় আমরা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ি। আমার মতো অনেকেই চিন্তিত ছিলেন। ওই দুশ্চিন্তা কাটতেও অবশ্য সময় লাগেনি।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের বিভিন্ন সদস্যের জীবন যুদ্ধ নিয়ে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। শোনা যায় দলের অনেক সদস্য মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ নিয়ে ওই দলের অনেক সদস্য ক্ষোভও প্রকাশ করেন। এ সম্পর্কে প্রতাপ শঙ্কর বলেছেন, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য লুত্ফর জটিলতার মধ্যে ছিল। তসলিমের অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। তাদের দুজনকে সরকারের তরফ থেকে ২০ ও ৩০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তারা খুব ভালো আছেন, এমনটা বলা না গেলেও; এটাও বলা যাবে না যে, তারা মন্দ আছে। দলের আরেক সদস্য আইনুল হক জীবনের শেষদিকে অনেক কষ্ট করে গেছেন। এ সম্পর্কে তার ভাষ্য, ‘আইনুলের বিষয়টা ছিল ভিন্ন। ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল। যে কারণে তাকে কষ্ট করতে হয়েছে।

কথাবার্তার মতো এ মহান ক্রীড়াবিদ ব্যক্তিগত জীবনেও সাদামাটা। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল সম্পর্কে আপনার প্রতি পরিবারের সদস্যদের মনোভাব কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতাপ শঙ্কর হাজরা বলেন, ‘আমাদের যৌথ পরিবারে আমি সাধারণ একজন সদস্য ছিলাম। এখনো আছি। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন কাজে বরাবরই আমার ওপরই বেশি দায়িত্ব দিতেন, স্বাধীনতার পরও ওই দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। স্বাধীন বাংলা ফুটবলার নয়, পরিবারে আমার পরিচয় একজন সাধারণ সদস্য।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন