সোনাম সুলতানা সোমাদের বাড়ির পাশেই নড়াইল ক্লাব। তাদের ঘরের নির্দিষ্ট একটা জায়গায় ক্লাবের চাবি ঝুলিয়ে রাখা হতো। ওখান থেকে চাবি নিয়েই চলত স্থানীয়দের টেবিল টেনিস (টিটি) চর্চা। এভাবেই একের পর এক তারকা উঠে আসা। সোমার তো টিটি ছাড়া ভিন্নপথে যাওয়ার সুযোগ ছিল না!
টিটি ধ্যানজ্ঞান ছিল, এখনো আছে। ফুপাতো বোন সালেহা পারভীনকে দেখে খেলাটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন সোমা। সাদিয়া রহমান মৌ ও নওরীন সুলতানা মাহি অনুসরণ করেছেন সোমার পথ। মাহি সোমার ছোট বোন, মৌ খালাতো বোন। তিনজনই আসন্ন এসএ গেমসের চূড়ান্ত দলে জায়গা করে নিয়েছেন।
নারী ও পুরুষ মিলিয়ে ১০ জনের দল এসএ গেমসে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে; যার সাতজনই নড়াইলের! মৌমিতা আলম রুমি ও সালেহা পারভীন পেশাগত ব্যস্ততার কারণে অনুশীলন ক্যাম্পে ঠিকভাবে সময় দিতে পারেননি। তাই চূড়ান্ত দল নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য তাদের বিবেচনা করা হয়নি। না হলে ১০ জনের দলে নড়াইলের সংখ্যাটা আরো বড় হতে পারত।
নড়াইলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে টিটির বীজ বপনের ইতিহাস বেশ পুরনো। আশির দশকে গায়েস আতিক আঁখি দক্ষিণাঞ্চলের জেলা থেকে উঠে আসা প্রথম বড় তারকা। জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেলা আঁখি বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। পরবর্তী সময়ে তার দেখানো পথে হেঁটেই উত্তরসূরিরা এ জেলাকে ‘টিটির রাজধানী’ খেতাব দিয়েছেন।
আঁখির পর ফেডারেশনের বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুর রহমানের হাত ধরে উঠে আসেন দুই সহোদর—মোস্তফা বিল্লাহ ও মাহবুব বিল্লাহ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তারকা আসছে নিয়মিতভাবে। মোস্তফা খেলা ছেড়ে কোচিংয়ে মনোযোগ দিলেও বর্ষীয়ান মাহবুব এখনো অক্লান্ত! আছেন পরবর্তী এসএ গেমসের চূড়ান্ত দলে।
সাবেক খেলোয়াড় ইসমাইল ও প্রয়াত ইসরাফিল সম্পর্কে সোমার চাচা, সালেহার মামা। তাদের দেখেই সালেহা টিটি জগতে প্রবেশ করেন। পরবর্তী সময়ে সোমা, মাহি, মৌ, সুমাইয়া রহমান মিম, আঁখি আক্তার সিনথী, পরাগ, পাপ্পু ও অন্তুরা এসেছেন। উল্লিখিতরা সোমার নিকটাত্মীয়।
‘পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশই শৈশবের পুরোটাই টেবিল টেনিসে বুঁদ হয়ে ছিল। ওই অবস্থা থেকে খেলাটির বিকল্প নিয়ে ভাবা কঠিনই ছিল আমাদের জন্য। টেবিল টেনিস এখন আমার জীবনের অঙ্গ। অবসরে পরিবারের সদস্যদের আড্ডার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও’—বণিক বার্তাকে বলছিলেন সোমা।
সোমার উঠে আসার গল্পটা ছিল মজার। ৪০-৫০ জন খেলোয়াড় অনুশীলনের জন্য তৈরি।