গোল্ডেন ভিসার মাধ্যমে বিদেশে আশ্রয় খুঁজছেন হংকংয়ের ধনীরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলমান হংকং বিক্ষোভ ক্রমে তীব্র হওয়ায় শহরটির ভবিষ্যৎ নিয়ে নিরাশ হয়ে পড়ছেন সেখানকার ধনীরা। এমন পরিস্থিতিতে ধনীদের হংকং ছাড়তে নতুন পাসপোর্টের আবেদন বেড়েছে। আর পছন্দের শীর্ষে রয়েছে গোল্ডেন ভিসা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেগোল্ডেন ভিসা নামে একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগের বিনিময়ে এসব দেশে বিদেশীদের অধিবাসী বা নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়া হয়।

এশিয়ার বাণিজ্যিক হাব হিসেবে পরিচিত হংকংয়ে বিক্ষোভ শুরুর পরগোল্ডেন ভিসার আবেদন বেড়েছে বলে জানিয়েছে অভিবাসী নিয়ে কাজ করে, এমন কয়েকটি সংস্থা। চলমান বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও সহসা সমাধানের ইঙ্গিত না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন সেখানকার ধনীরা। এমন পরিস্থিতিতে শহরটির অধিবাসীরা নিজেদের নিরাপত্তা বা বীমা নিশ্চিত করতে চাইছেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুনে একটি বহিঃসমর্পণ বিলকে কেন্দ্র করে হংকংয়ে ব্যাপক গণবিক্ষোভ দেখা দেয়। গণবিক্ষোভের তোপের মুখে একপর্যায়ে বিলটি বাতিল করা হয়। বিলটি বাতিল করা হলেও অন্যান্য ইস্যুতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি গণচীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে শহরটিতে পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। চীনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন গত মঙ্গলবার ১৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শহরটিতে চলমান বিক্ষোভ অচিরে প্রশমিত হওয়ার কোনো আলামত দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় অভিবাসী সংস্থাগুলোয় স্থানীয় ধনীদের আনাগোনা বেড়েছে। ইউরোপ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের বিশেষ কিছু বাণিজ্যিক হাবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ বা অর্থসহায়তার বিনিময়ে গোল্ডেন ভিসা প্রদানের মাধ্যমে অধিবাসী বা নাগরিকত্বের অধিকার প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব দেশে গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার জন্য সাধারণত সম্পদ, সরকারি বন্ড ক্রয় বা সুনির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থসহায়তা দিতে হয়।

যেসব দেশে গোল্ডেন ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলোর নিয়ম একেক দেশে একেক রকম। উদাহরণস্বরূপ অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডার কথা উল্লেখ করা যায়। এসব দেশে গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার জন্য ১ লাখ ডলার অর্থসহায়তা দিতে হয়। অন্যদিকে সাইপ্রাসে গোল্ডেন ভিসা পেতে হলে আবাসন খাতে খরচ করতে হয় ২০ লাখ ইউরো।

এদিকে জুনে বিক্ষোভ শুরু পর হংকংভিত্তিক জন হু মাইগ্রেশন কনসাল্টিংয়ে গোল্ডেন ভিসা বিক্রি ও অনুসন্ধান চার গুণ বেড়েছে। ইউরোপের দেশগুলোয় চলাচলের স্বাধীনতা অপেক্ষাকৃত অবাধ ও নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা তুলনামূলক সহজ হওয়ায় এসব দেশে গোল্ডেন ভিসার আবেদনের ঝোঁক বেশি বলেন জানান ওই সংস্থার প্রধান জন হু। তবে আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল ও মাল্টায় গোল্ডেন ভিসার আবেদন জমা পড়েছে সবচেয়ে বেশি।

আন্দোলন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সংস্থাটি আয়ারল্যান্ডে গোল্ডেন ভিসার ৩০টি নতুন আবেদন পেয়েছে। দেশটিতে এ ভিসা পেতে হলে আবেদনকারীকে কমপক্ষে ৫ লাখ ইউরো অর্থসহায়তা দিতে হয়, নয়তো দেশটির কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ১০ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করতে হয়।

এদিকে একই সময় নিজেদের কাছে গোল্ডেন ভিসার আবেদন দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে আরেক অভিবাসী সংস্থা অ্যারটন ক্যাপিটাল। হংকংবাসীর মধ্যে পর্তুগালে গোল্ডেন ভিসার আবেদনের ঝোঁক বেশি বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান ফিলিপ মে। হংকংয়ের বিপরীতে সেখানে আবাসন খাতের খরচ অতি কম হওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সংস্থাটি প্রতি বছর গড়ে এক হাজার গোল্ডেন ভিসার কাজ করে থাকে। সে তুলনায় চলমান বিক্ষোভকালীন আবেদনের সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে জানান মে।

উল্লেখ্য, হংকং বিশ্বের অন্যতম ধনী শহর। ক্রেডিট স্যুইসের ২০১৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, শহরটির মোট মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৯ হাজার। বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে হংকংয়ের অবস্থান ১৫তম বলে জানিয়েছে বিনিয়োগ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন। সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন