ক্লদ মোনের চিত্রকর্মের দাম আড়াই কোটি ডলার

মুহম্মদ আল মুখতাফি

‘মিল অ্যাট লিমেটজ’ ছবি: নেলসন-অ্যাটকিনস মিউজিয়াম অব আর্ট

গাছের ডালের আড়াল থেকে দেখা যাচ্ছে নদীর দৃশ্য। ১৮৮৮ সালে এমন একটা চিত্রকর্ম তৈরি করেছিলেন ফরাসি চিত্রশিল্পী ক্লদ মোনে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে ‘মিল অ্যাট লিমেটজ’ নামের চিত্রকর্মটি বিক্রির জন্য নিলামে উঠতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, দাম হতে পারে ১ কোটি ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার পর্যন্ত। চিত্রকর্মটির আংশিক মালিকানা কানসাস শহরের নেলসন-অ্যাটকিনস মিউজিয়াম অব আর্টের। বাকি অংশের মালিকানা ফ্রান্সেরই এক বণিক পরিবারের।

‘মিল অ্যাট লিমেটজ’-এ যে নদী ও মিল দেখা যাচ্ছে, তা মোনের বাড়ি থেকে মাইলখানেক দূরে অবস্থিত। মোনে দীর্ঘদিন ওই বাড়িতে থেকেছেন। মোনের কাছ থেকেই চিত্রকর্মটি প্রথমে নেন ইমপ্রেশনিস্ট চিত্রকর পল দুরাহ-ওয়েল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে জোসেফ এস এবং ইথেল বি আথা কানসাস নগরীর বিখ্যাত সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন। ১৯৩৬ সালে তাদের সংগ্রহে যুক্ত হয় মিল অ্যাট লিমেটজ। আথা পরিবার কানসাসে রয়েছে ১৯০০ সালেরও আগে থেকে। সে সময় ব্যবসায়ী ফ্র্যাংক পেরি আথা ক্যালিফোর্নিয়া ও আশপাশের অঞ্চলে ফোলগার কফি কোম্পানির কাজ করতেন। ১৯৮৬ সালে ইথেল মারা যান। তারপর নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আংশিকভাবে নেলসন-অ্যাটকিনসের অধীনে আসে চিত্রকর্মটি। বিশেষ চুক্তির অধীনে ছবিটিকে জাদুঘরে রাখার অনুমতি দেয় পরিবার। চিত্রকর্মটি ২০০৮ সাল থেকেই জাদুঘরের দেয়ালে ঝুলে আছে।

ইথেলের মেয়ে ইভিলিন আথা চেজের মৃত্যু হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। তার পরই পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় পেইন্টিংয়ের এক-তৃতীয়াংশ শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার। জাদুঘরের সঙ্গে যৌথভাবেই নিলামের আয়োজন করার ব্যাপারে তোড়জোড় দেন। নেলসন-অ্যাটকিনসের নির্বাহী প্রধান জুলিয়ান জুগাজাগোইতিয়া বলেন, ‘আথা পরিবারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের বিনয়ের জন্যই ক্লদ মনের চিত্রকর্মকে এতদিন পরে নতুন করে সামনে আনা সম্ভব হয়েছে। এ নিলামের ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিবার ও শিল্পের জন্য সম্মানজনক হবে। সমৃদ্ধ করবে আমাদের শিল্প সম্পৃক্তটার গল্পকে।’

১৮৮৮ সালে সমাপ্ত করা ‘মিল অ্যাট লিমেটজ’-এর দুটি সংস্করণ রয়েছে। এর আগের সংস্করণটি বিক্রি হয়েছে ২০২৩ সালের নভেম্বরে নিউইয়র্কের এক নিলামে। তখন সোথবি’জের আয়োজিত সে নিলামে চিত্রকর্মটি বিক্রি হয়েছিল ২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। অবশ্য এর মধ্যে সব ধরনের ফিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে সংস্করণের মালিকানা ছিল হাসো প্ল্যাটনার ফাউন্ডেশনের। চলতি বছরের শুরুর দিকেই চিত্রকর্মটি যুক্ত হয় জার্মানির পোস্টডামে অবস্থিত মিউজিয়াম বারবেরিনিতে। সেদিক থেকে বর্তমান সংস্করণের মূল্য আগেরটার কাছাকাছি থাকবে বলেই মনে করছে নেলসন-অ্যাটকিনসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। সংগ্রহে ক্লদ মনের চারটি পেইন্টিং রয়েছে। ইম্প্রেশনিজম ধারার সেরা শিল্পী ক্লদ মোনে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি প্যারিসে মোনে নতুন একটি রীতিতে ছবি আঁকতে শুরু করেন। বিশেষ ধরনের ব্রাশস্ট্রোক ও উজ্জ্বল রঙের বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত এ ধারাকে ক্লদ মোনে তার দীর্ঘ শিল্প জীবনে অবিরাম চর্চার মাধ্যমে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন