প্রদর্শনী

পুরান ঢাকা ও বুড়িগঙ্গা নিয়ে ‘পাঁচমিশালী’

ফারিহা আজমিন

ছবি: তাওহীদুজ্জামান তপু

লালমাটিয়ার কলা কেন্দ্রে বছরজুড়েই চলে নানা প্রদর্শনী। এবারে কলা কেন্দ্রের আয়োজন ‘পাঁচমিশালী’। সেখানে থাকছে পুরস্কারপ্রাপ্ত ভাস্কর সুস্মিতা মুখার্জ্জী মিষ্টির একক প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর কিউরেটর হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষক নাসিমা হক মিতু। তিনি বণিক বার্তার সঙ্গে প্রদর্শনী নিয়ে কথা বলেছেন। দর্শকের সাড়া পাওয়ার কারণেই প্রদর্শনীর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আয়োজন শুরু হয়েছিল ৮ মার্চ। ৯ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এটি চলবে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত। বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী ও হামিদুজ্জামান খান। দেশের বরেণ্য দুই চিত্র শিল্পীকে সঙ্গে নিয়ে এ আয়োজন আরো বর্ণিল হয়ে উঠেছে। আয়োজক ভাস্কর নাসিমা হক বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থী সুস্মিতা। তার ব্যক্তিজীবনের নানা অভিজ্ঞতা, পরিবেশ পরিস্থিতির ছাপ রয়েছে তার কাজগুলোয়।’ 

তবে এ প্রদর্শনী ও শিল্পী সুস্মিতার কাজের বৈশিষ্ট্য বুড়িগঙ্গা নদী ও পুরান ঢাকাকে ঘিরে। নানান ধরনের সহজলভ্য উপকরণের সাহায্যে তৈরি হয়েছে প্রতিটি স্থাপনা ও ভাস্কর্য। এমনকি ডিমের খোসা, উল, রড ও বেলুনের ব্যবহারও হয়েছে। এছাড়া প্রধান উপকরণ হিসেবে কাঠ, লোহা, পলি ব্যাগ, চিপস প্যাকেট দিয়ে তৈরি হয়েছে ছয়টি ভাস্কর্য, দুটি স্থাপনা মিলে মোট আটটি শিল্পকর্ম। সেই সঙ্গে প্রদর্শনীতে রয়েছে একটি স্কেচ সিরিজও। কাজগুলোকে দেখতে দর্শকদের ভিড় ক্রমবর্ধমান। শিল্পীরা এসে দেখছেন, পাশাপাশি শিল্পকর্ম হিসেবে উপভোগ করেছেন। বিষয়টি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আয়োজক ও শিল্পীর মনে।

ভাস্কর সুস্মিতা তার এবারের কাজগুলোয় হাইলাইট করেছেন দূষিত বুড়িগঙ্গাকে। তিনি বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায়। তাই সেখানকার পরিবেশ, মানুষ, তাদের জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রায় বিষয়াদিই শিল্পীকে ভাবায়। তার কাজে রয়েছে সেই ছাপ, যা শিল্পীর কাজের ধারণা, উপকরণ ও করণ কৌশলকে প্রভাবিত করেছে। কিউরেটর নাসিমা হক মনে করেন, ‘ভাস্কর্য নিয়ে ধারাবাহিক চর্চার বিষয়টি আমাদের দেশে কম। কারণ ভাস্কর্য তৈরি করতে যে পরিমাণ সময় এবং একজন শিক্ষার্থী যে শ্রম দিতে হয় বা  যে জায়গার প্রয়োজন হয় এসব পরিস্থিতি সামলে ভাস্কর্য চর্চা খুবই কঠিন। তবে অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদের কাজ খুব ভালো। কিন্তু পাস করে যাওয়ার পর তারা আগের ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখতে পারে না। এটি আমাদের দেশের আর্থিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভাস্কর্য চর্চায় সংকট। তবে এখন বেশ পজিটিভ একটি বিষয় হলো ভাস্করদের কাজগুলো অনেক বিক্রি হচ্ছে। তার পরও একজন ফ্রিল্যান্স ভাস্কর হিসেবে জীবন চালিয়ে যাওয়া ভীষণ কঠিন।’

নাসিমা হক বলেন, ‘যারা এ পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে তাদের আমি ভীষণভাবে অনুপ্ররণা দিই। তেমনি একজন শিক্ষার্থী সুস্মিতা। জীবনের যে পরিস্থিতিতে ও আছে, ওর আশেপাশে সবকিছু মিলেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন। নামটিও তাই হয়েছে পাঁচমিশালী। স্থাপনা ও ভাস্কর্যকে আলাদা করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই স্থাপনার বেশকিছু বিষয় চলে আসে ভাস্কর্য তৈরিতে। ওভারল্যাপিং যাকে বলা হয়। কারণ এ রকম তুচ্ছ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে। সবাই তা দেখছে এটিই একজন শিল্পীকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’

কিউরেটর মনে করেন, স্থাপনা শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্থান। যে জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হবে দর্শক ঘুরে ঘুরে তা দেখবে আর ভার্স্কযের বিষয়টি হলো এটিকে ইনডোর, আউটডোর যেকোনো জায়গাতেই রাখা যায়। মূলত ভাস্কর্যের গড়নটাই দর্শকের কাছে প্রাধান্য পায়। তবে স্থাপনা, ভাস্কর্য এ কাজগুলোর মধ্য দিয়ে শিল্পী সুস্মিতার করোনা মহামারী-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে করা কাজগুলোর মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি করেছে। প্রদর্শনীতে সে বিষয়গুলোই ফুটে উঠেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন