অ্যাঞ্জেলা ত্রিনদাদির শক্তি ছিল রিয়ালিজম

আহমেদ দীন রুমি

টাউন সিন ছবি: ফুনদাচাও অরিয়েন্তে

১৯৩৬ সাল। প্রথমবারের মতো আয়োজিত হলো অল ইন্ডিয়া উইমেন আর্টিস্ট এক্সিবিশন। সেখান থেকে গোল্ড মেডেল জিতে নিল ২৭ বছর বয়সের এক তরুণী, যার নাম অ্যাঞ্জেলা ত্রিনদাদি। তুলির আঁচড়ে তার যুগ পরিবর্তনের গান। রঙের ব্যবহারে নতুনত্ব। সেদিন অনেকেই বুঝে নিয়েছিলেন তরুণীর ভবিষ্যৎ। যেন দেখতে পাচ্ছিলেন, অ্যাঞ্জেলা অল্প সময়ের মধ্যে জগদ্বিখ্যাত হয়ে উঠবে। তার প্রত্যাশা মিথ্যা হয়নি। আজকে চিত্রকর্মের সঙ্গে যুক্তরা তাকে চেনে বেশ ভালোভাবেই।

গত শতকের ত্রিশের দশক ভারতের তিন নারী শিল্পী গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম জন হাঙ্গেরি থেকে আসা অমৃতা শের-গিল। দ্বিতীয়জন অম্বিকা ধুরন্ধর ও তৃতীয় জন অ্যাঞ্জেলা ত্রিনদাদি। অম্বিকার কাজগুলো প্রায়ই ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকত। প্রদর্শনীতে আনা হতো না। অন্যদিকে অমৃতা ছিলেন পুরো বিপরীত মেরুর। প্রথম দিক থেকেই তিনি ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত আর্টিস্টদের একজন। ভারত সরকার তাকে জাতীয়ভাবে

সম্মানিত করেছে। ত্রিনদাদির অবস্থান অম্বিকা ও অমৃতার ঠিক মাঝখানে। তিনি অমৃতার মতো খ্যাতি অর্জন করতে না পারলেও অম্বিকার মতো অপরিচিত ছিল না। তার স্বাতন্ত্র্যই তাকে তুলে ধরেছে। অ্যাঞ্জেলা জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৯ সালে ভারতের গোয়ায়। তার পিতা আন্তোনিও জেভিয়ার ও মা ফ্লোরেন্তিনা ত্রিনদাদি। পিতা নিজেও ছিলেন ঔপনিবেশিক ভারতের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। সৃজনশীল ও উদারনৈতিক পরিবেশ অ্যাঞ্জেলার মধ্যে শৈশব থেকেই চিত্রকর্মের চেতনা তৈরি করে। ১৯২৬-৩২ সালের মধ্যে তিনি জে জে স্কুল অব আর্টে পড়াশোনা করেন। বাবা ছিলেন সেখানকার শিক্ষক। সে সময় বাংলার সমান্তরালে বোম্বেতেও চিত্রকলায় আধুনিকতার তোড়জোড় চলছে। তবে ত্রিনদাদির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন চিত্রশিল্পী গ্ল্যাডস্টোন সলোমন। প্রথম জীবনে তার ওপর প্রভাব ফেলেছিল রিয়ালিজম। তবে ত্রিনদাদির সর্বাধিক পরিচিতি খুব সম্ভবত তার ধর্মীয় চিত্রকর্ম ধরে। তিনি যেন খ্রিস্টীয় থিমকে অনেক বেশি মুক্ত করতে পেরেছিলেন। প্রায় দুই ডজন চিত্রকর্ম আঁকেন মেরি সংশ্লিষ্ট। কখনো তার কোলে যিশু ছিল, কখনো ছিল না। জলরঙে আঁকা আওয়ার লেডি অব দ্য লোটাস (১৯৪১), আওয়ার লেডি অব কনসেপশন (১৯৫৬) এমন চিত্রকর্মের প্রকৃষ্ট দুই উদাহরণ। তবে এসব অঙ্গনে ছিল ভারতীয় মিশেল। ইউরোপীয় না; মেরি যেন হয়ে উঠেছেন ভারতীয় কোনো দেবী।

ম্যাডোনা সিরিজের কথা বাদ দিলে অন্তত ৪৫টি চিত্রকর্ম পাওয়া যায় অ্যাঞ্জেলার, যা কম-বেশি যিশুর জীবনের সঙ্গে যুক্ত। চিত্রকর্মের অধিকাংশই জলরঙ কিংবা চীনা রঙে। তাদের মধ্যে অন্যতম ক্রাইস্ট প্রিচিং (১৯৪৮), বাপটিজম অন দ্য রিভার জর্ডান (১৯৪৮) ও ক্রাইস্ট (১৯৫৬)। ১৯৪৯ সালে ত্রিনদাদি ইউরোপ সফরে বের হন। প্রথমে দাওয়াত পান লিটারজিক্যাল আর্ট সোসাইটি থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে তিন বছর অবস্থানকালে তিনি ছয়টি প্রদর্শনী করেন। সেখানে বক্তৃতা দেন। যোগাযোগ হয় অন্যান্য শিল্পীর সঙ্গে। ১৯৭৮ সালে তিনি আমেরিকার নাগরিক হন। আরো দুই বছর পর তিনি মারা যান ব্রাজিলের সাও পাওলো ভ্রমণের সময়। 

অ্যাঞ্জেলার চিত্রকর্ম এখন সামনে থেকে দেখা অতটা সহজ না। কিছু হারিয়ে গেছে, কিছু চুরি হয়ে গেছে। বাকিগুলোর অধিকাংশই এখন ভারতের গোয়ায় সীমাবদ্ধ। ভারতের যে শিল্প আন্দোলন, তাতে অ্যাঞ্জেলার অবদান উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন