মার্চের কুয়াশাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বণিক বার্তা অনলাইন

মার্চের মাঝামাঝিতে তোলা ছবিতে রাজধানীর একটি এলাকা। ছবি: বণিক বার্তা

কয়েক বছর আগেও মার্চের মাঝামাঝি থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহ শুরু হয়ে যেত। কিন্তু এখন এ সময়ে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারাদেশের সকাল কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে। এ প্রবণতাকে ‘অস্বাভাবিক’ মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। খবর বিবিসি বাংলা।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, গত ১০-১২ বছর ধরেই পুরো মার্চ মাস জুড়েই বাংলাদেশে এমন কুয়াশা থাকছে এবং অসময়ে তাপপ্রবাহ শুরু হচ্ছে। একে তারা ঋতু পরিবর্তনের ধারায় পরিবর্তন বলছেন এবং এই পুরো পরিবর্তনটাকে ‘অস্বাভাবিক আচরণ’ বলেও মনে করছেন।

আবহাওয়া যদি স্বাভাবিক হতো, তাহলে বছরের এই সময়ে দিনেরবেলা মানুষ গরম অনুভব করতো ও ঘামতো। কিন্তু এখন মানুষ দিনে ‘গরম অনুভব করলেও ঘাম হয় না’ বলেন আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ।

তিনি বলেন, কুয়াশা শুরু হয় সকাল আটটা-নয়টার দিকে। এই সময়টাতে মরু অঞ্চলের সকাল যেমন ধোঁয়াশার মতো মনে হয়, ঠিক সেরকম মনে হয়। কারণ, এখনকার বাতাসে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা নেই। এসময় মানুষের শরীর টেনে ধরছে। এর মানে, ওয়েদার শীতকালের প্যাটার্ন ফলো করছে।

এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘(ঋতু অনুযায়ী) বাতাস এখনো ঘুরে নাই। এদিকে দিন বড় হয়ে গেছে। বাতাস আবার উত্তর দিক থেকে আসছে। সব মিলিয়ে দিনে হালকা গরম লাগছে। কিন্তু ওই গরমের ক্ষেত্রে মানুষ ঘামছে না। বাতাস দক্ষিণ দিক থেকে এলে ময়েশ্চার আসবে, ঘাম হবে, গরম লাগবে।’

তবে শুধু বাতাসের গতিতেই পরিবর্তন আসেনি, এর ফলে তাপপ্রবাহের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে।

আগে মার্চের মাঝামাঝিতে তাপপ্রবাহ শুরু হলেও এখন মার্চের শেষের দিকে বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের একদম শেষের দিকে তাপপ্রবাহ শুরু হচ্ছে।

এই আবহাওয়াবিদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াতে বছরের এই সময়টাতে সাধারণত দিনের তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। কিন্তু এবছর ওখানে দিনের তাপমাত্রা গড়ে ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে। সেইসঙ্গে, রাতের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার এই লক্ষণীয় শুধুমাত্র ঐ অঞ্চলে না, সারা দেশেই কম বেশি হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এ বছর গ্রীষ্মে ‘তাপমাত্রা বেশি থাকবে। এপ্রিলের শেষের দিক থেকে হিট ওয়েভ চলে আসবে এবং সেটার দৈর্ঘ্য বেশ দীর্ঘ হবে।’

‘তাপপ্রবাহ চলাকালীন মাঝে মাঝে বৃষ্টি হবে। তবে সাধারণ বৃষ্টি না, কালবৈশাখী ঝড় হবে আর কি তখন।’

তবে আগামী কয়েকদিন আবহাওয়া কেমন থাকতে পারে, সে প্রসঙ্গে তার ধারণা, ‘শর্ট টাইম প্রেডিকশন অনুযায়ী, আপাতত দুই তিন দিন বৃষ্টি হবে সামান্য। এরপর তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়বে।’

গত ফেব্রুয়ারিতে ৪৩ বছর, অর্থাৎ চার দশকেরও বেশি সময়কালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। মো. বজলুর রশীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও নরওয়ের আরও পাঁচজন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ এই গবেষণাটি করেছেন।

তাতে উঠে এসেছিল যে বছরের প্রতি ঋতুতেই তাপমাত্রা আগের তুলনায় বাড়ছে। এছাড়া মৌসুমি বায়ু দেরিতে প্রবেশ করায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্ষাকাল পিছিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস ২০২৩’ শীর্ষক নামক এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশদূষণে বাংলাদেশে ২০২৩ সালে দুই লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। ওই বছর বায়ুদূষণে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। আর নগর হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ নগর ছিল ঢাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন