নাগরিক সমাবেশে আনু মুহাম্মদ

পাকিস্তানের ২২ পরিবার থেকে বাংলাদেশের ২২ পরিবার বেশি সম্পদশালী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে গতকাল নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

পাকিস্তান আমলের ২২ পরিবার থেকে বর্তমান বাংলাদেশের ২২ পরিবার অনেক বেশি সম্পদশালী বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের ২২ পরিবারের শাসন, শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আজকে বাংলাদেশে ২২ পরিবারের তালিকা করেন, সেই ২২ পরিবার থেকে বাংলাদেশের ২২ পরিবার অনেক বেশি সম্পদশালী।’

গতকাল রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে এসব বলেন তিনি। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও দফায় দফায় বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। 

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এ ২২ পরিবারের মধ্যে প্রথম দিকে আপনি পাবেন বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, এস আলম, ইউনাইটেড, সামিট। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা কীভাবে বানিয়ে ফেলল। তাদের জন্য আমাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়ছে, তাদের জন্য ব্যাংক লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, ব্যাংক খালি হয়ে যাচ্ছে।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কিন্তু দেশে যে সরকার আছে এটি বোঝা যায় না। যখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ে—এত বিপুল পরাক্রমশালী সরকার, যারা যা তা করতে পারে, পুরো নির্বাচন গায়েব করে দিতে পারে, যাকে তাকে তুলে আনতে পারে, আদালত থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানকে পকেটের মধ্যে ভরতে পারে, সেই সরকার বলে আমাদের কিছু করার নেই, সিন্ডিকেটে হাত দেয়া যাবে না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে, খাবারের অভ্যাস বদলান। এখন এমন একটা অবস্থা যে সরকার নেই। কিন্তু আপনি প্রতিবাদ করতে যান, তখন আবার রাষ্ট্র, সরকার খুবই সক্রিয়। একেবারে পূর্ণ উদ্যমী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের দাম বাড়ছে বলছে। কেন বাড়ছে? এটা কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়েছে? না, ডলারের চাহিদা বেড়েছে। অনেক ধরনের আমদানি হচ্ছে, যেগুলো আমাদের প্রয়োজন নেই। আরেকটি কারণ হচ্ছে, এ ২২ পরিবার এখানে টাকা বানায়, এ টাকা ডলার বানিয়ে তাদের বিদেশে পাঠাতে হয়। তারা ক্রমান্বয়ে ডলার কিনতে থাকলে তখন সংকট তৈরি হয়।’ 

লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা বলেন, ‘দেশের5৫০ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এ সময়ে কীভাবে কৃষকের ন্যায্যমূল্য আদায় করতে হবে, সে সিস্টেম রাষ্ট্র তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু কীভাবে কৃষক-শ্রমিককে বিপর্যস্ত করে রাখতে হয় তা করতে কী করতে হবে সে ব্যবস্থা করে রাখছেন।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের তিন-চার কোটি টন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। কৃষককে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাইয়ে দেয়ার জন্য সরকারি ক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার সে ফসল কিনে রাখবে। আমাদের সরকারি ক্রয় কেন্দ্র আছে, কিন্তু মজুদ সক্ষমতা ভীষণ রকমের লজ্জাজনক। আমাদের যেখানে তিন-চার কোটি টন ফসল উৎপাদন হচ্ছে সেখানে মজুদ সক্ষমতা আছে মাত্র ২০ লাখ টন। সত্যিকারের কৃষক সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেন না। এটা সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে নেই, এটা নিয়ে কেউ চিন্তাও করে না। কারণ কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন—এটা কখনো কোনো সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে ছিল না।’ 

মাহা মির্জা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার পরিষদ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে তাদের চড়-থাপ্পড় মারা, কান ধরে উঠবস করায়। খুচরা পর্যায়ে গিয়ে তাদের প্রভাব দেখানো হয়। তারা কি জানেন না আড়তে গিয়ে দাম বেড়ে যায়—এটার সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কোনো হাত নেই, এটার সঙ্গে আছে অত্যন্ত শক্তিশালী, মহাপরাক্রমশালী সিন্ডিকেটের, সরকারের অংশ।’ 

আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি শিমা দত্ত, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস আব্দুল্লাহ আল কাফী রতন, ডা. হারুনুর রশিদ প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন