ক্রেডিট কার্ড নিয়ে রয়েছে ১০ ভুল ধারণা

ছবি : বণিক বার্তা

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলেই সুদ দিতে হয়

এটা একদম ভুল ধারণা। মাসের একটা নির্দিষ্ট দিনে ক্রেডিট কার্ডের স্টেটমেন্ট জেনারেট হয়। সাধারণত যে তারিখে কার্ড বরাদ্দ হয়, সে তারিখেই ওই কার্ডের স্টেটমেন্ট জেনারেট হয়ে থাকে। একবার স্টেটমেন্ট জেনারেট হওয়ার পর পরের স্টেটমেন্ট জেনারেট হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত দিনসহ ব্যাংকভেদে প্রায় ৫০ দিনের ‘ইন্টারেস্ট ফ্রি’ সময় পাওয়া যায়। অতিরিক্ত দিনে বিল মিটিয়ে দিলে সুদ গুনতে হয় না। তবে এটিএম থেকে নগদ টাকা তুললে সে ক্ষেত্রে এ ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড প্রযোজ্য হয় না।


কার্ডে লুক্কায়িত অনেক ধরনের মাশুল

এ ধারণা ভিত্তিহীন। এটা ঠিক যে ক্রেডিট কার্ডের আবেদনের সঙ্গে করসংক্রান্ত রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক। তবে এতে অতিরিক্ত কোনো ধরনের মাশুল দিতে হয় না। ক্রেডিট কার্ডের বাজার এখন খুব প্রতিযোগিতামূলক এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশের কারণে মাশুল নির্ধারিত করা হয়েছে।


প্রতি মাসে বিলের ন্যূনতম অংশ মেটালেই আর কোনো সমস্যা থাকে না

এটা ভুল ধারণা। স্টেটমেন্টের ন্যূনতম বকেয়া মিটিয়ে দিয়ে যদি ভাবা হয় বাকিটা পরে মিটিয়ে দিলে চলবে, তাহলে ভুল করা হবে। ন্যূনতম বকেয়া মেটালে, কিছু না দেয়ার জন্য পেনাল্টি হিসেবে যে টাকাটা কাটে সেটা শুধু দিতে হয় না, আর ডিউ ডেট পেরিয়ে গেলেই ডিউ ডেট থেকে না, ট্রানজেকশনের দিন থেকে সুদ গণনা শুরু হয়। তার ওপর পরের মাসে যে সব ট্রানজাকশন হয় সেগুলোয় আর ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড থাকে না।


এই কার্ড ‘শপাহলিক’ করে দেয়

কেনাকাটা বা শপিং করা যাদের নেশা, তাদের বলে ‘শপাহলিক’। এটা একটা মানসিক ব্যাপার। সাধারণত আর্থিকভাবে শৃঙ্খলাহীন মানুষ এ রকম হন। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে প্রায়ই ক্রেডিট কার্ডের লিমিট পেরিয়ে যায়। তাই ক্রেডিট কার্ড থাকলে অপ্রয়োজনীয় শপিং থেকে বিরত থাকতে হবে।


নতুন কার্ডের জন্য আবেদনে ক্রেডিট স্কোর কমে যায়

একটি কার্ড থাকা অবস্থায় নতুন আরেকটি কার্ডের জন্য আবেদন করলে সংশ্লিষ্টরা প্রথম কার্ডের অতীত রেকর্ড নিয়ে একটি তদন্ত করে। কম সময়ের ব্যবধানে যদি একাধিক কার্ডের জন্য আবেদন করা হয়, শুধু তখনই ক্রেডিট স্কোরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। অন্যথায় এটা ভুল ধারণা ছাড়া আর কিছু নয়।


একটা কার্ডই যথেষ্ট

বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রকম কার্ডে আলাদা আলাদা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। তা ছাড়া একাধিক কার্ড ব্যবহার করলে ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন সমীকরণও কমে যায় এবং ক্রেডিট স্কোর বাড়াতে সাহায্য করে। তবে একাধিক কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে খরচ বাড়িয়ে ফেলাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।


ক্রেডিট লিমিট বাড়ানো ভালো না

ক্রেডিট লিমিট বাড়ানোর অফার পেলে প্রয়োজন না থাকলেও সেটা গ্রহণ করে লিমিট বাড়িয়ে নেয়া ভালো। কারণ ক্রেডিট লিমিট বাড়ানো থাকলে বেশি টাকার দরকারের সময় তা কাজে লাগে।


পুরনো বা অপ্রয়োজনীয় ক্রেডিট কার্ড বাতিল করা

কার্ড বাতিল করলে সামগ্রিক ক্রেডিট লিমিট কমে যায় এবং তার সঙ্গে বেড়ে যায় ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিও, যেটা ক্রেডিট স্কোরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। পুরনো কার্ড ব্যবহার না হলে সেটা এমনি ফেলে রাখা বা নষ্ট করে দেয়াই ভালো বিকল্প।


ক্রেডিট কার্ড চাকরিজীবীদের জন্য

সাধারণত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন চাকরিজীবীরা। ক্ষুদ্র বা মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীরা টাকার প্রয়োজন পড়লে আশপাশের বা পরিচিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেন। এখানে না পেলে উচ্চ সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেন। এর তুলনায় ক্রেডিট কার্ড সহনীয়।

ক্রেডিট কার্ড শহুরেদের জন্য

রাজধানী বা বিভাগীয় শহরের বাসিন্দারা সাধারণত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। কিন্তু মফস্বল বা গ্রামের মানুষ এ কার্ড ব্যবহার করেন না। মূলত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে এবং নির্ধারিত মাসিক আয় থাকলে যে কেউ এই কার্ড পেতে পারেন।

সব মিলিয়ে ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহকের সচেতনতা এখানে মুখ্য। কোনো পরিস্থিতিতে কার্ড নম্বর, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, সিভিভি, ওটিপি ইত্যাদি কারো সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন