প্লাস্টিক মানি : ক্রেডিট কার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

অনলাইনে কিংবা সরাসরি দোকানে গিয়ে কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনেকেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন। নগদ টাকা বহনের চেয়ে আরামদায়ক ও ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আধুনিক বিশ্বে ক্রেডিট কার্ডকে বলা হয় প্লাস্টিক মানি। এর বৈশিষ্ট্য হলো হাতে নগদ টাকা না থাকলেও এটি দিয়ে কেনাকাটা করা যায়। তবে একজন গ্রাহক তার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত অর্থ ব্যবহার করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় পর তাকে ওই অর্থ পরিশোধ করতে হয়। অন্যথায় দিতে হয় বাড়তি ফি। 

ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। একজন ব্যক্তিকে এ কার্ড প্রদানের ক্ষেত্রে তার মাসিক আয় বা বেতনসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি বিবেচনা করা হয়। সেই সঙ্গে সব ব্যাংকেরই রয়েছে সাধারণ কিছু শর্ত। এসব যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ যে কেউ তার জন্য সুবিধাজনক যেকোনো ব্যাংকে আবেদন করতে পারেন। তবে মাসিক আয় বা বেতন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের কম হলে আবেদনের সুযোগ নেই। লিমিট নিয়ে প্রতিটি ব্যাংকের জন্য যদিও আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। ক্রেডিট লিমিট বা কত টাকা পর্যন্ত খরচ বা উত্তোলন করা যাবে সেটি সাধারণত ব্যাংকগুলো হিসাব করে গ্রাহকের মাসিক আয়ের ভিত্তিতে। 

ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বাড়তি খরচ এড়াতে প্রতি মাসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ করা অর্থ পরিশোধ করে দেয়া জরুরি। এতে কোনো ধরনের সুদ ছাড়াই আপনি কার্ডের পুরো সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। নিজের ইচ্ছা অনুসারে নয় বরং প্রয়োজনের ভিত্তিতে কার্ড ব্যবহার করুন। কার্ডের অর্থ খরচ করুন সতর্কতার সঙ্গে। ইচ্ছামাফিক ব্যবহার আপনাকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে পারে। জরুরি পরিস্থিতি কিংবা প্রয়োজনে ক্রেডিট কার্ডের অর্থ ব্যয় করুন। এতে আপনার প্রয়োজনও মিটবে সেই সঙ্গে বাড়তি ঋণের ফাঁদেও পড়বেন না। কার্ডের বিল পরিশোধে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত সুদবিহীন সুবিধা পাওয়া যায়। তবে বিল পরিশোধের জন্য শেষ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা না করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। 

আপনি যদি দায়িত্বশীলভাবে কার্ড ব্যবহারে আত্মবিশ্বাসী হন তাহলে ক্রেডিট কার্ডকে বাজেট সহায়ক টুল হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। সব ধরনের কেনাকাটা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে করার পর মাস শেষে দেখতে পারেন কত টাকা খরচ হলো। অবশ্যই মাস শেষে বিল পরিশোধের সক্ষমতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের ব্যয় যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেজন্য এক মাস চলার জন্য আপনার ব্যাংক হিসাবে যে পরিমাণ অর্থ আছে তার চেয়ে বেশি খরচ করবেন না। 

সবচেয়ে ভালো হয়, ক্রেডিট লিমিটের ৩০ শতাংশের মধ্যে ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখুন। অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং ঋণের ফাঁদ এড়াতে এটি আপনাকে সাহায্য করবে। ধরা যাক, আপনার লিমিট ১ লাখ টাকা। তাহলে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করুন। এতে আপনার ক্রেডিট স্কোরও ভালো থাকবে। 

কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফি ও চার্জ রয়েছে। আপনার চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে এসবের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সঠিক কার্ডটি বাছাই করুন। বড় অংকের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিস্তিতে বিল পরিশোধের সুবিধা রয়েছে কিনা জেনে নিন। কার্ডের রিওয়ার্ড পয়েন্টের সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করুন। রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাওয়া যায় এমন ক্রেডিট কার্ড বাছাই করুন। নিয়মিত বিল পরিশোধের মাধ্যমে একদিকে আপনি সুদ ছাড়াই কার্ডের সুবিধা নিতে পারছেন, অন্যদিকে রিওয়ার্ড পয়েন্টের মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা পাবেন। 

আপনার কার্ড এমন স্থানে রাখুন, যেন সহজে তা অন্যের দৃষ্টিগোচর না হয়। নারীরা পার্স বা ভ্যানিটি ব্যাগে এটি বহন করলে তার চেইন বন্ধ রাখা উচিত। কেউ যেন তার মোবাইলে আপনার কার্ডের ছবি তুলতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। কেনাকাটার ক্ষেত্রে দাম পরিশোধের পরপরই আপনার কার্ড বুঝে নিন। কার্ড-সংক্রান্ত কোনো তথ্য অন্য কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না। কোনো কারণে হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে কার্ড লক করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন