স্মার্ট ব্যাংকিংয়ের সব সুবিধাই মিলছে সেলফিনে

ছবি : বণিক বার্তা

ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপ ‘সেলফিন’। যাত্রা শুরুর চার বছরের মাথায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪০ লাখ। সেলফিনের মাধ্যমে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ২ লাখ লেনদেন হয়। লেনদেনকৃত মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করে একজন গ্রাহক আধুনিক ও স্মার্ট ব্যাংকিংয়ের প্রায় সব সেবাই পাচ্ছেন। এ অ্যাপের নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা


সেলফিন এতটা জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ কী? 

সেলফিন অ্যাপের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে লেনদেন শুরু হয় ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। গত চার বছরে অ্যাপটি বাজারে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এটি দ্রুত, নিরাপদ ও তাৎক্ষণিক লেনদেনের ভার্চুয়াল প্রিপেইড ভিসা বা মাস্টার কার্ড যুক্ত স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপ। এর ব্যবহার অত্যন্ত সহজ। ব্যবহারকারীরা সহজেই গুগল প্লে অথবা অ্যাপ-স্টোর থেকে অ্যাপটি নামিয়ে নিবন্ধন করতে পারেন। গ্রাহক সেলফিনের মাধ্যমে ঘরে বসেই ইলেকট্রনিকভাবে কেওয়াইসি সম্পন্ন করছেন। সেলফিন ব্যবহারকারীরা সপ্তাহের সাতদিন ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকের সব ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারেন। সেলফিনে রয়েছে বহুমুখী ট্রানজেকশন সুবিধা। সেলফিনের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, রেমিট্যান্স সংগ্রহ এবং এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর করা যায়। ই-কমার্স পেমেন্টের সুবিধাও আছে। সরাসরি টাকা পাঠানো যায় এমক্যাশ, বিকাশ ও নগদের মতো এমএফএস অ্যাকাউন্টেও। আর যেকোনো ব্যাংকের ভিসা বা মাস্টারকার্ড, ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ও এমক্যাশ থেকে অ্যাড মানি করে টাকা আনা যায় সেলফিনে। এসব সেবার কারণে সেলফিন এতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

সেলফিন কীভাবে অন্য এমএফএস থেকে আলাদা?

সেলফিন মূলত এমএফএস একটি বৃহত্তর ব্যাংকিং পরিষেবা, যা গ্রাহক ঘরে বসেই পেতে পারেন। এমএফএস বলতে চিরাচরিত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে বোঝায়, যেখানে ছোট ছোট লেনদেন করা যায়। কিন্তু সেলফিন নানা কারণে এমএফএস থেকে আলাদা। যেমন সেলফিনে ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত করে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করা যায়। বিনা খরচে তাৎক্ষণিক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টও দেখা যায়। গ্রাহক সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করে নিজে নিজে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলতে পারেন। এর মাধ্যমে গ্রাহক ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্ট, যেমন সেলারি অ্যাকাউন্ট ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। আবার মাসিক স্পেশাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট যেমন মুদারাবা হজ সেভিংস অ্যাকাউন্ট, মুদারাবা মোহর সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং মাসিক মুনাফাভিত্তিক জমা হিসাবও খোলা যায়। আবার এ অ্যাপের মাধ্যমে কিস্তিও পরিশোধ করা যায়। 

লেনদেনের খরচের দিক থেকেও সেলফিন অন্য এমএফএস থেকে আলাদা। যেমন এমএফএসে লেনদেনের জন্য গ্রাহক পর্যায়ে সার্ভিস চার্জ তুলনামূলক বেশি দিতে হয়। কিন্তু সেলফিনের ‘ক্যাশ বাই কোডের’ মাধ্যমে হাজারে মাত্র ১ টাকা সার্ভিস চার্জ দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের যেকোনো এটিএম/সিআরএম থেকে টাকা তোলা যায়। এমএফএস চ্যানেলে ‘ক্যাশ আউট’ (নগদ উত্তোলন) অনেক ব্যয়বহুল। লেনদেনের সীমাও কম। যেমন প্রতিদিন ‘ক্যাশ ইন’ করা যায় মাত্র ৩০ হাজার টাকা। আর ক্যাশ আউট করা যায় মাত্র ২৫ হাজার টাকা । আর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (পিটুপি) পর্যায়ে লেনদেন করা যায় প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। সেলফিনের মাধ্যমে স্বল্প খরচে বড় লেনদেন, যেমন দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ফান্ড ট্রান্সফার করা যায়। এছাড়া দেশে ২ হাজার ২০০ এটিএম বুথ থেকে সেলফিনের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সুযোগ আছে।  

সেলফিনের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য কী কী?

এটি ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব ডেভেলপকৃত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ভার্চুয়াল প্রিপ্রেইড ভিসা। এটি মাস্টারকার্ডযুক্ত স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী। গ্রাহক পর্যায়ে অ্যাপ ব্যবহারে বার্ষিক সার্ভিস চার্জ দিতে হয় না। এ অ্যাপের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের সঞ্চয়ী অথবা চলতি হিসাবের জন্য চেক বইয়ের অর্ডার দেয়া যায়। অসম্পন্ন লেনদেনের জন্য সেলফিনের মাধ্যমে গ্রাহক অভিযোগ জানাতে পারেন। এ অ্যাপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর বহুমুখী ব্যবহার। ব্যাংক হিসাব ছাড়াই এ অ্যাপ ব্যবহার করা যায়। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এর ‘ক্যাশ বাই কোড’ অন্যতম। সেলফিন ব্যবহারকারী একজন ব্যক্তির মোবাইল নম্বরে কোড পাঠিয়ে টাকা পাঠাতে পারেন। মোবাইলে কোড পাওয়া ব্যক্তি ব্যাংকের যেকোনো এটিএম বুথে গিয়ে ওই কোড ব্যবহার করে ২০ হাজার টাকায় মাত্র ২০ টাকা খরচ করে নগদ টাকা উত্তোলন করতে পারেন। ই-কমার্স পেমেন্টের সুবিধা তো আছেই। এর মাধ্যমে ডেসকো, ডিপিডিসি, নেসকো, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস ও খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডের বিল দেয়া যায়। করা যায় মোবাইল রিচার্জও। বাস, লঞ্চ কিংবা বিমানের টিকিট কাটার পাশাপাশি চুক্তিবদ্ধ স্কুল-কলেজের ফি দেয়ার সুযোগও সেলফিনে রয়েছে।

কেন গ্রাহক অন্য এমএফএস ছেড়ে সেলফিনের সেবা নেবেন?

অন্যান্য এমএফএসের চেয়ে সেলফিনের সুবিধা বেশি। অনেক এমএফএসে টাকা লেনদেনে নানা সীমাবদ্ধতা আছে এবং লেনদেনের সার্ভিস চার্জ তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সেলফিন অ্যাপটি একটি বহুমুখী চ্যানেল হওয়ায় গ্রাহককে লেনদেনে সমস্যায় পড়তে হয় না। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করে নিলে সেলফিন অ্যাপ দিয়ে অন্যান্য ব্যাংকেও টাকা পাঠানো যায়। সেলফিন অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করলেই একটি ভার্চুয়াল প্রিপেইড কার্ড পাওয়া যায়। কার্ডে ডুয়াল কারেন্সি সার্ভিসও নেয়া যায়। ফ্রিল্যান্সার এবং অনলাইন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা যেকোনো দেশ থেকে সরাসরি পেমেন্ট নিতে পারেন সেলফিনে। এরই মধ্যে ৪০ লাখ গ্রাহক সেলফিনের ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। এক কথায় বলতে গেলে সেলফিনের সেবা সাধারণ এমএফএস থেকে অনেক বেশি।

সেলফিনে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কেমন?

সেলফিনের মাধ্যমে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ২ লাখ লেনদেন হয়। টাকার হিসাবে যা প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৩ সালের এ সময়ে দৈনিক গড়ে প্রায় ৮০ হাজার লেনদেন হয়, লেনদেনকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি টাকার মতো। গাণিতিক হিসাবে আমরা বলতে পারি, সেলফিনে এক বছরে প্রায় ২০০ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে।

বিদেশে সেলফিন ব্যবহারের সুযোগ আছে কি?

বর্তমানে ৩৭টি দেশে সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করা যাচ্ছে। বিশেষত যেখানে আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা বসবাস করছেন, সেসব দেশে সেলফিন ব্যবহারের সুযোগ রেখেছি। এ তালিকায় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, সুইডেন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশও রয়েছে।

সেলফিনের ডেবিট কার্ডের বিকল্প হয়ে ওঠার সুযোগ কেমন?

সেলফিন ডেবিট কার্ডের বিকল্প হিসেবে এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গ্রাহক ডেবিট কার্ড দিয়ে যেসব সেবা নেন, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এটিএম থেকে নগদ উত্তোলন। এ সেবা সেলফিনেও মিলছে। সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহক এটিএম বুথ থেকে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা তুলতে পারবেন। ব্যাংকের যেকোনো শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংক থেকে তোলা যাবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ডেবিট কার্ডের মতো সেলফিনের মাধ্যমে যেকোনো মার্চেন্ট পেমেন্ট করা যায়। বাংলা কিউআরের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগও আছে।

অধিকাংশ গ্রাহক ব্যাংকের ভিসা কার্ডের বিকল্প হিসেবেই সেলফিনই ব্যবহার করছেন। সরকারের স্মার্ট ও ক্যাশলেস স্যোসাইটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেলফিন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাই বলা যায় সেলফিন ডেবিট কার্ডের বিকল্প হওয়ার সুযোগ আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন