আলোকপাত

কপ২৭ কি অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধানে অগ্রগামী করেছে?

মোহাম্মদ জমির

কপ ২৭ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর পুরো পৃথিবী একটি প্রশ্ন অবশিষ্ট রেখেছে, আমরা কি সমষ্টিগত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষুদ্র কিছু অর্জন করেছি নাকি অনেক দেরি করে ফেলেছি?

সম্প্রতি কিছু বিশ্লেষক এবং পরিবেশবিদ বিজ্ঞানীদের একটি দলেরক্রমবিকাশের সীমাশিরোনামে তৈরি করা প্রতিবেদনের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, যেটি ১৯৭২ সালে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতিসংঘ পরিবেশ সম্মেলনে উত্থাপিত হয়েছিল। প্রতিবেদনটি কার্যত কম্পিউটার মডেলকে সমন্বিত করেছে যা ১২টি অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশের চিত্র এবং পরিবেশ প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে সেগুলোর দীর্ঘমেয়াদি ফল অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হতো। অন্যদিকে ২১০০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ, খাদ্য উৎপাদন, শিল্পায়ন, দূষণ এবং প্রত্যাশিত নবায়নযোগ্য সম্পদের ওপর দৃশ্যত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষেত্রেও প্রতিবেদন গুরুত্ব দিয়েছে। ১৯৭২ সালের গবেষণাটি যদিও নব্য ম্যালথুসিয়ান ভবিতব্যের ফলে বড় সংখ্যক জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, যা প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য মানব অভিযোজনকে অবমূল্যায়ন করেছে বলে তখন ধারণা করা হয়েছিল।

প্রতিবেদনটি বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছিল যখন ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওয় আয়োজিত ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইউএনসিএডি) ধরিত্রী সম্মেলনে মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে আসন্ন পরিবেশগত বিপর্যয় পর্যালোচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করা রাষ্ট্রগুলো জোর দেয় যে প্রশমন অভিযোজনের মাধ্যমে সঠিক পথ অনুসরণের ব্যর্থতা প্রধান সম্পদকে শঙ্কিত করে যার বিম্বিত ফল হিসেবে খাদ্য জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি, অধিক দূষণ এবং নিম্নমানের জীবনযাপনের মান দেখা দিতে পারে। সেখানে আরো জোর দেয়া হয় যে বিশ্বের অভিন্ন বিভাজক অনুসন্ধান করা প্রয়োজন, যা মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পদের অবক্ষয় ত্বরান্বিত করার সঙ্গে সম্পর্কিত। এর মধ্যে কিছু দেশ ইতিবাচক আর্থসামাজিক গতিময়তার মধ্য দিয়ে টেকসই বৈশ্বিক ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান শনাক্ত করার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে। অন্যরা কিছু উন্নত রাষ্ট্রের জন্য অগ্রহণযোগ্য প্রযুক্তিগত পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সংকট এড়ানোর প্রয়োজনে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা সম্পদ আহরণ লভ্যাংশকে প্রাধান্য দিচ্ছিল। প্রসঙ্গে আমাদের মনে করা প্রয়োজন গত দশকে সম্পদের উদ্ভাবনী সক্ষমতার ফলে প্রযুক্তিগত সূক্ষ্মতায় পরিবর্তন এসেছে।

এইচএ আদনান এবং জেকে সুন্দরমের মন্তব্যের ফলে এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব অনুমিত হয়, যখন পৃথিবীর সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে বাস্তবভিত্তিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কঠিন চিত্রপটের স্বরূপ এবং তা সামলাতে ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (কপ২৭) ইচ্ছা পুরো বিশ্ব যত্নসহকারে পর্যবেক্ষণ করছে।

এমন চিত্র প্রকাশের পর ক্লাব অব রোমের রূপান্তরমূলক অর্থনীতি কমিশন, ২০২২-এর প্রতিবেদন কপ২৭- অংশগ্রহণকারী অনেক দেশের প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেখানে বলা হয়েছে, পৃথিবী সবার জন্য যা জলবায়ু পরিবর্তনশীলতার হুমকির ক্ষেত্রে কেবল আশু প্রয়োজনীয়তা, বিন্যাস এবং সুযোগের ক্ষেত্রেই গুরুত্বারোপ করে না বরং এটিও নিশ্চিত করে যে সবার সুস্থতা নিশ্চিত করা এখনো সম্ভব, কিন্তু এক্ষেত্রে জরুরি মৌলিক পরিবর্তন জরুরি। এটি ইতিবাচক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে যে পরিপ্রেক্ষিতে দারিদ্র্য বিমোচন, অসমতা হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্য এবং জ্বালানি ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটাতে সাধারণ প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। এভাবে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে আক্রান্ত দেশগুলোর বিশেষ কৌশল প্রয়োজন, যা অধিক সর্বজনীন খরচসংবলিত গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এক্ষেত্রে বিশেষ করে সমাজের সমৃদ্ধ স্তরের ক্ষেত্রে আরো গতিশীল কর ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে, এর সঙ্গে অযথা ব্যয় নিবারণও প্রয়োজন হবে।

মিসরে অনুষ্ঠিত কপ২৭ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নিতে না পারলেও ঢাকা থেকে তার বক্তব্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ধনী দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি পরিবর্তনশীলতার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দ্রুত সহায়তা করার ক্ষেত্রে তারা তাদের প্রতিজ্ঞা রাখেনি। তিনি বিশ্বকে এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে আর্থিক খাতে প্রশমন এবং অভিযোজনের ঘাটতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার নিজস্ব ইতিবাচক মাপকাঠিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সঙ্গে সংযুক্ত থেকেছে এবং দেশজুড়ে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণ করায় ভূমিকা রেখেছে। এটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা মোকাবেলায় সহযোগিতা করবে এবং কাঙ্ক্ষিত সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু অর্থনীতি অন্যতম মুখ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে, যা কপ২৭ সম্মেলনে দেশটির প্রতিনিধিরা সব পক্ষের কাছে তুলে ধরেছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল তাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোকে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করেছে, যা তারা আগে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা প্রসঙ্গে এটি পুনরায় স্মরণ করেছিল যে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যে নির্দেশিকা মানতে সবাই সম্মত হয় এবং পরবর্তী সময়ে গত বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় অনুষ্ঠিত কপ ২৬ সম্মেলনে যেটি অনুমোদিত হয়েছে। তারা এটিও উল্লেখ করেছে গত এক বছরজুড়ে উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দীর্ঘায়িত করেছে এবং সহায়তা বিতরণের ক্ষেত্রে দুঃখজনকভাবে সংকীর্ণতা দেখিয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন গুরুতরভাবে উন্নয়ন সম্ভাবনাগুলোয় আপস করছে। এর ফলে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা মধ্য শতাব্দীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পরও যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্ব অর্থনীতির পরিমাণ হ্রাস করেছে। কপ২৭ এটি পুনর্ব্যক্ত করেছে যে জলবায়ু পরিবর্তন অনেক ব্যয়বহুল হবে, কিন্তু এটির নিষ্ক্রিয়তার মতো মূল্যবান নয়। আমাদের সাম্প্রতিক জলবায়ুর ঘটনাগুলো মনে করা উচিত, সাইক্লোন, বন্যা, দাবানল যা নির্দেশ করে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে এবং ধীরগতিতে কার্বনভিত্তিক জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে দেরিও হয়েছে। এটি তুলনামূলক প্রতিকূল প্রভাবের ক্ষেত্রে প্রদর্শনের সূচনাকে মূল্যবান করে তুলেছে।

রকম দৃশ্যপট জলবায়ু পরিবর্তনের স্বরূপ প্রকাশ করে, এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক টেকসই উন্নয়ন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যুগপৎ অগ্রগতি প্রয়োজন। এটি একমাত্র নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য এবং রাজনৈতিকভাবে কার্যকর প্রক্রিয়া। স্বল্প সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কপ২৭ বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলো আরেকবার কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে উন্নতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তাদের জনগণের মৌলিক জ্বালানি চাহিদার ওপর জোর দিয়েছে। এজন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে উন্নত বিশ্বের বড় আকারের ভর্তুকি প্রয়োজন। কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার বদৌলতে সরকারি খাতের জোরদার ভূমিকা দরকার। বিশেষজ্ঞরা এটাও চিহ্নিত করেছেন, দুর্বল এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি অবকাঠামো এবং উন্নয়ন নকশার ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার অগ্রণী গুরুদায়িত্ব প্রয়োজন, সম্ভব হলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মধ্য দিয়ে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

এটি এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সামনের বছরগুলোয় চীন শুধু তাদের কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি মন্থর করার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে না, এর সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং অন্যান্য নিম্ন কার্বন ব্যবহার করা জ্বালানি উৎসের ক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করছে।

আলোচনার সামগ্রিক দৃষ্টান্তের ক্ষেত্রে ভারতসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ, ধনী রাষ্ট্র নতুন বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থনীতি লক্ষ্যমাত্রা নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল অন ক্লাইমেট ফাইন্যান্সের (এনসিকিউজি) ক্ষেত্রে সম্মত হয়েছে, যেখানে তারা জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের ক্ষেত্রে খরচ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার কথা বলেছে। প্রস্তাবিত উদ্যোগটি গত বছর বিশ্বের বৃহৎ দূষণকারী দেশগুলোর ৬০০-এর অধিক লবিস্ট মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করেছে, যেখানে দূষণকারী দেশগুলোর ২৫ শতাংশের বেশি দেশের অন্তর্ভুক্তি ছিল। নভেম্বর কপ২৭-এর এনসিকিউজি অংশের মন্ত্রীদের উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে এটি তুলে ধরা হয় যে জলবায়ু পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনসের (এনডিসি) জন্য উন্নত দেশগুলো থেকে অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং সক্ষমতা নির্মাণের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর সহায়তা প্রয়োজন।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) পর্যবেক্ষণের ওপরও জোর দেয়া হয়েছে। সেখানে এরই মধ্যে লক্ষ করা হয়েছে যে ধনী দেশগুলো বায়ুমণ্ডলে কার্বন মজুদ করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। স্পষ্টভাবে এক্ষেত্রে ইউএনএফসিসিসি এটির প্যারিস চুক্তির মুখ্য নীতি কমন বাট ডিফরেনশিয়েটেড রেস্পন্সিবিলিটিজ অ্যান্ড রেসপেক্টিভ ক্যাপাবিলিটিজের (সিবিডিআর-আরসি) ওপর জোর দেয়া হয়। এখন এটি স্পষ্ট যে জলবায়ু অর্থনীতিতে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের ভিত প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সম্পদের সংস্থানের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর নেতৃত্ব দেয়া প্রয়োজন এবং তা দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু নির্দেশিত ক্ষেত্রে অভিযোজন প্রশমন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে ন্যায়সংগত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে ছাড় দেয়া উচিত।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা কপ২৭- অংশ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন যে চলতি বছর প্রশমন অভিযোজন প্রকল্পগুলোয় অর্থনৈতিক সহায়তার ক্ষেত্রে প্রতিপত্র এখনো বেশ দূরবর্তী। কার্যত গ্লাসগো থেকেই গুরুতর দায়িত্বশীলতার ঘাটতির কারণে জলবায়ু অর্থনীতি ট্রিলিয়ন ডলারের ধারেকাছেও নেই, যা বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছরই দুর্যোগ আঘাত হানার পর সংস্কার পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে।

অঙ্গীকার দূরেই রয়ে গিয়েছে, গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে স্কটল্যান্ড প্রথম ক্ষতি এবং বিপর্যয় তহবিলের প্রস্তাব করে, সেখানে প্রতীকী মিলিয়ন পাউন্ডের অঙ্গীকার করা হয়। কপ২৭ সম্মেলনে তাদের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন আরো মিলিয়ন পাউন্ডের অঙ্গীকার করেছে। গত সেপ্টেম্বরে আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে সহায়তা পাঠানোর জন্য ডেনমার্ক ১০০ মিলিয়ন ডলার পাঠাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ অভিমত দিয়েছেন জার্মানি ১০০ মিলিয়ন ইউরোগ্লোবাল শিল্ডকে প্রদান করবে, যে উদ্যোগটি জি- এর ধনী দেশগুলো এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত জলবায়ু প্রভাবের ফলে সম্মুখভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৮টি উন্নয়নশীল দেশের অর্থমন্ত্রীদের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। অস্ট্রিয়া জানিয়েছে, তারা আগামী চার বছরে ক্ষতি এবং বিপর্যয় মোকাবেলায় ৫০ মিলিয়ন ইউরো সরবরাহ করবে। এটি বোঝা যাচ্ছে আয়ারল্যান্ড এবং বেলজিয়াম তাদের অংশগ্রহণের সময় যেসব বিষয়ে জোর দিয়েছে, এক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ডগ্লোবাল শিল্ডউদ্যোগকে ২০২৩ সালে ১০ মিলিয়ন ইউরো অনুদান প্রদান করবে এবং বেলজিয়াম ২০২৩-২৮-এর মধ্যে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিককে জলবায়ু সহায়তা প্যাকেজ হিসেবে যে ২৫ মিলিয়ন ইউরো দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার অংশ হিসেবে দশমিক মিলিয়ন ইউরো অনুদান দেবে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও কপ২৭ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতির বিষয়টি ব্যক্ত করে বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র তার কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে সঠিক পথেই ছিল। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতার বিপর্যয় এড়াতে সব দেশকে তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় এগোতে হবে বলে মত দেন। প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু সংকট মানুষের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, পরিবেশগত নিরাপত্তা, জাতীয় নিরাপত্তা এবং পৃথিবীর মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।বাইডেন এটিও উল্লেখ করেন যে যুক্তরাষ্ট্র ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০-৫২ শতাংশের নিচে কার্বন নির্গমনের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করবে। এক্ষেত্রে মিথাইন নিঃসরণের প্রচেষ্টার মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়া হবে, যা বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রধান অনুঘটক। এজন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ এবং বিশ্বাসযোগ্য তৃতীয় পক্ষের কোম্পানির প্রয়োজন হবে।

যা হোক নতুন গবেষণা দেখাচ্ছে যে প্রাকশিল্প পর্যায়ে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর রাখা এবং ২০৩০ সালে এটি অর্ধেকে কমিয়ে আনার উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য পূরণ কঠিন হয়ে যাবে, যা শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সম্মতি জানিয়ে উপসংহারে এসে উপনীত হয়। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জলবায়ু নরকের মহাসড়কে রয়েছি এবং আমাদের পা প্রতিনিয়ত এক্সেলেটরে চাপ দিচ্ছে।

 

মোহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত; বৈদেশিক সম্পর্ক, তথ্য অধিকার সুশাসনবিষয়ক বিশ্লেষক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন