সপ্তম ব্যালন ডি'অর

মেসির বিশ্বকাপ অপূর্ণতা ঘুঁচবে কী?

ক্রীড়া ডেস্ক

আগেই রেকর্ড ছয়বার ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন লিওনেল মেসি। এবার সপ্তমবারের মতো এই পুরস্কারটি জিতে নিজেকে আরো ছাড়িয়ে গেলেন ফুটবলের খুদে জাদুকর। ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবলের’ জরিপে ২০২০-২১ মৌসুমে বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এই মহাতারকা। গতকাল সোমবার রাতে প্যারিসের শ্যালেট থিয়েটার থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

ব্যালন ডি’অর জিতে গর্বিত অনুভব করছেন মেসি। ধন্যবাদ জানিয়েছেন সবাইকে। তিনি বলেন, আবারো ফ্রান্স ফুটবলের ব্যালন ডি’অর জিতে আমি সত্যিই গর্বিত। সপ্তমবারের মতো এটি জিততে পারাটা অবিশ্বাস্য। ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার পরিবার, বন্ধুদের এবং যারা আমাকে অনুসরণ করে, সবসময় আমাকে সমর্থন করে। তাদেরকে ছাড়া আমি এটি অর্জন করতে পারতাম না।

কভিড মহামারীর কারণে গত বছর ব্যালন ডি’অর দেয়া হয়নি। সেবার পুরস্কারটি জয়ের বড় দাবিদার ছিলেন ২০২০ সালের ফিফা বর্ষসেরা হওয়া লেভানদোভস্কি। ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে দারুণ মৌসুম কাটানো পোলিশ তারকা এ ব্ছর দ্বিতীয় হয়েছেন। একদিন লেভানদোভস্কিও পুরস্কারটি জিতবেন বলে মনে করেন মেসি। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড বলেন, রবার্ত, ব্যালন ডি’অর তোমার প্রাপ্য। গত বছর সবাই তোমার এই পুরস্কার জয়ের ব্যাপারে একমত ছিল।

সাংবাদিকদের ভোটে মেসি পিছনে ফেলেছেন রবার্ত লেভানদোভস্কি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, করিম বেনজেমা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কিংবা জর্জিনহোর মতো তারকাকে। আর রোনালদোর সঙ্গে তার ব্যবধান আরো বাড়লো। পর্তুগাল তারকা পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ।

মেসি বার্সেলোনার অনেক ট্রফি জিতলেও আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত সাফল্য পাওয়া হয়নি। একবার বার্সেলোনার হয়ে কোপা দেল রের ট্রফি জিতেছেন। ৩০ গোল করে রেকর্ড অষ্টমবারের মতো পিচিচি ট্রফিও জিতেছেন মেসি। এছাড়া কোপা আমেরিকা প্রতিযোগিতায় ব্রাজিলকে হারিয়ে ট্রফিও উঠেছে তার হাতে। তাই ব্যালন ডি’অর জেতার দৌড়ে এই তারকাই সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন।

মেসি আগের ছয়বার জিতেছেন ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে। বর্তমানে প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে খেললেও আগের সব ট্রফি বার্সেলোনায় থাকার সময় পেয়েছেন।

ব্যক্তিগত প্রাপ্তির জয়াগায় কোথাও অপূর্ণতা নেই আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের। ক্লাব ফুটবলে বাকি বলতে কিছু নেই মেসির, সবই পেয়েছেন, জিতেছেন। অপূর্ণতার জায়গা ছিল জাতীয় দলের জার্সিতে ট্রফি জয়। সেটিও কিছুটা ঘুঁচেছে। এ বছর তার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা জিতেছে কোপা আমেরিকা শিরোপা। তাতে আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা খরাও কেটেছে। কিন্তু এতেই কি মেসি থামবেন? বিশ্বসেরা ফুটবলার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত তিনি অবসরে যাবেন না। আবেগ আর বাস্তবতার পথ ভিন্ন। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপই হয়তো লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ। সব পেলেও শুধু পাওনার খাতায় এখনও ফাঁকা বিশ্বকাপ ট্রফির জায়গাটা। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও চ্যাম্পিয়ন হয়নি মেসির আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপে মেসি কি সেই দুঃখ ঘুঁচাতে পারবেন? প্রস্তুতি নিচ্ছেন মেসি। দলকে এরই মধ্যে বিশ্বকাপের মূলপর্বে নিয়ে গেছেন। বিশ্বকাপ জিততে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। সে স্বপ্ন হয়তো পূরণ হবে, নয়তো হবে না। তবুও মেসি যে সর্বকালের সেরাদের একজন তা হয়তো বিশ্বকাপ না পওয়ার অপূর্ণতায় ঢেকে যাবে না। কারণ বিশ্বকাপ না জিতলেও মিশেল প্লাতিনি ও জোহান ক্রুয়েফদের কথা ফুটবল দুনিয়া আজীবন মনে রেখেছে।

এবারের ব্যালন ডি’অরের আলোচনায় ছিলেন না রোনালদো। জাতীয় দল কিংবা ক্লাব ফুটবলে সময়টা খুব একটা ভালো যায়নি তার। নেইমারও খুব একটা আলোচনায় নেই। পোলিশ তারকা লেভানদভস্কি ও ইতালিকে ইউরো জেতানো জর্জিনহো ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তবে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে গত মৌসুমের শুরু থেকে ৬০ ম্যাচে ৭৩ গোল করা লেভানদভোস্কি পেয়েছেন প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত সেরা স্ট্রাইকারের পুরস্কারটি। দ্বিতীয় হয়েছেন পোলিশ তারকাই। তৃতীয় চেলসির ইতালিয়ান মিডফিল্ডার জর্জিনহো। চতুর্থ ও পঞ্চম ফ্রান্সের দুই তারকা করিম বেনজেমা ও এনগোলা কন্তে।

স্পেন ও বার্সেলোর মিডফিল্ডার পেদ্রি হয়েছেন সেরা তরুণ খেলোয়াড়। ইতালির গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোনারুম্মা সেরা গোলকিপারের পুরস্কার পেয়েছেন।

মেয়েদের মধ্যে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন স্পেন ও বার্সেলোনার মিডফিল্ডার আলেকজিয়া পিউতেলাস। ইংলিশ ক্লাব চেলসি অন্যদের টপকে সেরা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন