সৌদি-বাংলাদেশ জিটুজি বাণিজ্য চুক্তি আগামী সপ্তাহে —সালমান এফ রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি আরব। নিয়ে আগামী সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে জিটুজি পর্যায়ে একটি বাণিজ্য চুক্তি হবে। এছাড়া তারা বিভিন্ন ইকোনমিক জোনেও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে দেশটি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি আগ্রহী। সৌদি ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশে স্পেশাল ইকোনমিক জোন তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আটদিনের সৌদি সফর শেষে দেশে ফিরে গতকাল দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকের এসব কথা বলেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য সৌদি আরব খুব আগ্রহী। বিশেষ করে সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী বিনিয়োগমন্ত্রী বলেছেন, তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। তারা একটি দল নিয়ে শিগগিরই আসবেন। নিয়ে আমাদের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির একটি বৈঠক হবে। সেই বৈঠক নিয়েও আমরা আশাবাদী। সৌদির বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি অথবা দেশটির বিনিয়োগমন্ত্রী আসবেন।

তিনি বলেন, সৌদি বাদশা সালমানের নেতৃত্বে গত মঙ্গলবার একটি মন্ত্রিপরিষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কথা হয়েছে, আমাদের সঙ্গে জিটুজি, পিপিপি এগ্রিমেন্ট যেটা করার কথা ছিল, সেটি অনেক দিন ধরে ঝুলে রয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা সই করবেন।

তিনি আরো বলেন, ভার্চুয়ালি এটা সই করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমি আশা করি, -১০ দিনের মধ্যে চুক্তি সই হয়ে যাবে।

সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা দুটি প্রজেক্টের বিষয়ে কথা বলেছি। যেটি নিয়ে আমরা রিকোয়েস্ট করেছিলাম সেটি নিয়ে তারা বলেছেন, তারা ইন্টারেস্টেড। তবে ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ আরো অনেক কাজ করা বাকি আছে।

একটি হলো ঢাকা থেকে পায়রা রেল। সেটিতে তারা ইন্টারেস্টেড। প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে করতে চায় বাংলাদেশ। বিষয়টি ভেবে দেখবে বলে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেছে সৌদি সরকার। আরেকটা আমরা বলেছি কক্সবাজারের উন্নয়ন পর্যটন নিয়ে। সেটিতেও তারা খুব আগ্রহী। আমরা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করলে, এর ফলাফল তাদের সঙ্গে শেয়ার করলে তখন তারা এটি নিয়ে এগিয়ে আসবে। এছাড়া চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন বে টার্মিনাল পতেঙ্গা টার্মিনালে বিনিয়োগেও আগ্রহী সৌদি সরকার। তারা প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা বলেছি আমাদের জিটুজি এগ্রিমেন্ট না হওয়া পর্যন্ত তাদের ওই প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করতে পারি না। চুক্তি হয়ে গেলে আমরা বিষয়টা দেখব।

একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগ করতেও সৌদি আরবের প্রতি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, আমরা একটা স্পেশাল ইকোনমিক জোন তাদের দিতে চাই। প্রস্তাবেও তারা খুবই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। প্রথম সভায়ই আমি তাদের বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম। এটিও তাদের জন্য খুবই ইন্টারেস্টিং প্রস্তাব। তারা বলেছে, এটা নিয়ে তারা স্টাডি করে আমাদের জানাবেন।

দেশটির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, বাওয়ানি নামে একটা কোম্পানি বেজাকে একটা প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে ইকোনমিক জোনের জন্য। ইকোনমিক জোনটি হবে শুধু সৌদি আরব নিয়ে। প্রস্তাব নিয়েও ওরা কাজ করছে।

সফরের সার্বিক মূল্যায়ন নিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, নিশ্চিতভাবেই সফল হয়েছে। আমরা অনেক খুশি। আরেকটি বিষয় আমাদের প্রতিনিধিদের তারা যেভাবে স্বাগত জানিয়েছে, যে সম্মান তারা আমাদের দিয়েছে, সেটি অসাধারণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়টি নিয়ে তারা খুবই প্রশংসা করেছে। তারা আসলেই এখন মনে করে, বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।

বছরের ২৮ ২৯ নভেম্বর ঢাকায় একটি বিনিয়োগ সম্মেলন করা হবে বলেও জানান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, সেখানেও আমরা তাদের দাওয়াত দিয়েছি। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন সে বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগদান করবেন।

সময় বাংলাদেশ সৌদি আরবে ১৩৮ পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, তাদের একটা তালিকা দিয়ে আমরা পণ্যগুলোর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছিলাম। তারা বলেছে, সেটি দ্বিপক্ষীয়ভাবে না করে তাদের একটা জিসিসি ট্রেড এগ্রিমেন্ট আছে, সেটির মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে একটা এফটিএ অথবা পিটিএ করার জন্য। তারা কাজ করতে চায়।

প্রসঙ্গত, সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ১৮ সেপ্টেম্বর সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বেসরকারি বাণিজ্য সংগঠনের নেতাসহ ২২ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফরে যায়। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীত্ব কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) সুলতানা আফরোজসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন