নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে মাহমুদউল্লাহদের ইতিহাস

ক্রীড়া প্রতিবেদক

টাইগারদের উৎসবের কেন্দ্রে স্পিনার নাসুম আহমেদ। গতকাল ৪ ওভারে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে তিনিই বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি২০ সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে কিউইদের উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল। সিরিজে বাংলাদেশ অনতিক্রম্য - ব্যবধানে এগিয়ে থেকে আগামীকাল পঞ্চম শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে।

তিন মাসের মধ্যে তৃতীয় টি২০ সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখাল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে - অস্ট্রেলিয়াকে -- হারানোর পর এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সিরিজ জয়ের গৌরবের অধিকারী হলো মাহমুদউল্লাহর দল। অথচ সিরিজের আগে কিউইদের বিপক্ষে টি২০তে ১০ বারের মুখোমুখিতে কখনই জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। এবার চার ম্যাচের মধ্যেই তিনটি জয় লেখা হয়ে গেল বাংলাদেশের নামের পাশে। পঞ্চম ম্যাচে আরেকটি জয় পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। মাসখানেক আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও প্রথমবারের মতো টি২০ ম্যাচ জয়ের পর সিরিজও জিতে নেয় বাংলাদেশ। একই কীর্তি টাইগাররা গড়ল কিউইদের বিপক্ষেও।

গতকাল নাসুম আহমেদের স্পিন আর মুস্তাফিজুর রহমানের স্লোয়ারে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। প্রথম দুই বাংলাদেশী বোলার হিসেবে তারা একই টি২০ ইনিংসে নিয়েছেন চারটি করে উইকেট। এর পরও জয় সহজে আসেনি, স্বাগতিকদের লড়াই করতে হয়েছে শেষ ওভার পর্যন্ত। ১০০ রানের নিচে পুঁজি গড়েও হাল ছাড়েনি কিউইরা। কোল ম্যাককঞ্চির নিষ্প্রভতায় এদিন নিয়মিত বিরতিতে আঘাত হানতে পারেনি অতিথি দলের বোলাররা। আজাজ প্যাটেল আগের ম্যাচের মতোই ছিলেন ভয়ংকর, নিয়েছেন দুটি উইকেট। তার চাতুর্যপূর্ণ একটি বলে পরাস্ত মাহমুদউল্লাহকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস করেন টম ল্যাথাম। হয়তো সেটিই ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দেয়। সেই মাহমুদউল্লাহই অপরাজিত থেকে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নোঙর করিয়েছেন।

৪৮ বলে বাউন্ডারি ছক্কায় ৪৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। মোহাম্মদ নাইমের সঙ্গে ৫০ বলে ৩৪ রান, আর আফিফ হোসেনকে নিয়ে ২৮ বলে ২৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তিনিই দলের জয় নিশ্চিত করেন।

এর আগে ওপেনিং জুটিতে লিটন কুমার দাস নাইম ১৪ বলে মাত্র রান বোর্ডে তুলতে পেরেছেন। লিটন রান করে ম্যাককঞ্চির শিকার হয়ে ফেরেন সাজঘরে। দ্বিতীয় উইকেটে ১৯ বলে ২৪ রান করে দলে স্বস্তি এনেছিলেন সাকিব আল হাসান নাইম। যদিও সাকিবকে () স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে জুটি ভাঙেন আজাজ প্যাটেল। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম বলের মোকাবেলায় নামের পাশে কোনো রান যোগ না করেই আউট হয়ে যান। এরপর মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া পার্টনারশিপ গড়েন নাইম। ৩৫ বলে ২৯ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলা নাইম রানআউটের শিকার হন। তার বিদায়ের পর অবিচ্ছিন্ন পার্টনারশিপে দলকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ আর আফিফ হোসেন। যদিও তাদের ২৯ রানের মধ্যে আফিফের অবদান মাত্রই , লড়াকু মাহমুদউল্লাহ করেন ২২ রান।

ক্রমেই উন্নতি করা নিউজিল্যান্ডের কাছে তৃতীয় ম্যাচ বাজেভাবে হারের পর অজানা এক শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল সমর্থকদের। যদিও মাহমুদউল্লাহদের দৃঢ়তায় উড়ে গেল সব আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তা। এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নেয়ার পর বাংলাদেশ দলনায়ক বলেন, বোলাররা আরেকবার দুর্দান্ত বোলিং করে নিউজিল্যান্ডকে অল্প রানে আটকে দিল। নাসুম, মেহেদী, মুস্তাফিজুরসব বোলারই ভালো করেছে। ব্যাটাররা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করেছে। আমাদের শুধু মাঝে একটি ভালো পার্টনারশিপের প্রয়োজন ছিল, যা আমি নাইম চেষ্টা করেছি। নাইম ভালো ব্যাট করেছে, এরপর আফিফও। আমরা চেষ্টা করেছি পার্টনারশিপ গড়ে খেলাটাকে শেষদিকে নিয়ে যেতে। সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দলের ছেলেগুলো আর টিম ম্যানেজমেন্টের। আরেকটি ম্যাচ বাকি আছে। আমরা দলগত প্রচেষ্টায় ম্যাচটি জিতে নিতে চেষ্টা করব।

ওভারে মাত্র ১০ রানের বিনিময়ে কিউইদের উইকেট তুলে নেন নাসুম আহমেদ। মুস্তাফিজুর রহমান উইকেট নেন ১২ রানের খরচায়। যদিও শুরুর দিকে গুরুত্বের বিচারে নাসুমের চার উইকেটকেই এগিয়ে রেখে তাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার দিলেন ম্যাচ রেফারি। জয় শেষে নাসুম বলেন, সিরিজ জিততে পেরে খুশি আমি। যতটা সম্ভব কম রান দেয়ার চেষ্টা করেছি আমি। উইকেটে বল ঘুরছিল, তাই আমার একমাত্র চেষ্টা ছিল বলকে সঠিক জায়গায় ফেলা।

উজ্জীবিত নিউজিল্যান্ড তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে স্রেফ উড়িয়ে দেয়। চতুর্থ ম্যাচটি জিতে সিরিজে সমতা আনার আশা ছিল অতিথিদের। যদিও তা হতে দেয়নি বাংলাদেশ। সিরিজ হারের পর কিউই দলনায়ক টম ল্যাথাম বলেন, আমাদের অল্প কিছু রানের ঘাটতি ছিল। ভেবেছিলাম অন্তত ১০০-১১০ রান পাব। এরপর ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখিয়ে উতরে যায় বাংলাদেশ। দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়লেও পরে নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তারা। মাহমুদউল্লাহ যেভাবে শেষ করেছেন, তাতে কৃতিত্ব তার পাওনা। তবে আমরা যেভাবে খেলাটিকে শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়েছি, তাতে খুশি।

নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে ল্যাথাম বলেন, উইল ইয়াং ভালো একটি ইনিংস খেলে আমাদের জন্য লড়াই করার মতো সংগ্রহ গড়ে দিয়েছে। আমরা দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়েছি এবং এর পরও ছন্দটা ধরে রাখা কঠিন ছিল। খানিকটা ভিন্ন একটি পিচে আমরা যেভাবে মানিয়ে নিলাম, আমাদের তারুণ্যনির্ভর দলের অধিকাংশই আবার এখানে আগে কখনো খেলেনি, তাই আমরা আশা করি পঞ্চম ম্যাচে প্রায় পরিপূর্ণ একটি খেলা হবে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড: ১৯. ওভারে ৯৩/১০ (উইল ইয়াং ৪৬, টম ল্যাথাম ২১; নাসুম /১০, মুস্তাফিজুর /১২, সাইফউদ্দিন /১৬, মেহেদী হাসান /২১) বাংলাদেশ: ১৯. ওভারে ৯৬/ (মাহমুদউল্লাহ ৪৩*, নাইম ২৯; আজাজ প্যাটেল /, কোল ম্যাককঞ্চি /৩৪) ফল: বাংলাদেশ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাসুম আহমেদ (বাংলাদেশ) সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ -- এগিয়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন