কভিড-১৯ মহামারীর বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। দীর্ঘ বিধিনিষেধ শেষে তৈরি হয়েছে তীব্র ভোক্তা চাহিদা। বেড়েছে ক্রেডিট কার্ডের ব্যয় ও বাড়ি কেনার হার। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে গৃহস্থালি ঋণের পরিমাণ। এ সময়ে মোট ঋণের ব্যালান্স বেড়েছে ৩১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এটি ২০০৭ সালের পর সবচেয়ে দ্রত বৃদ্ধি। সম্প্রতি প্রকাশিত নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুন শেষে মার্কিন ভোক্তাদের মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ঋণের পরিমাণ দেশটির ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ। এর আগে মহামন্দার সময় ২০০৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে এ ঋণ সর্বোচ্চ ১২ লাখ ৬৮ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছিল।
গৃহস্থালি ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ঋণ নিয়ে প্রান্তিক প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক ফেড জানিয়েছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট ঋণ ১৪ লাখ ৯৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে বন্ধকি ঋণ সবচেয়ে বড় চালক হিসেবে কাজ করেছে। জুন শেষে বন্ধকি ঋণ ২৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার বেড়ে ১০ লাখ ৪৪ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।
নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সেন্টার ফর মাইক্রোইকোনমিক ডাটার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল স্ক্যালি বলেন, আমরা গত চার প্রান্তিকে বন্ধকি ও গাড়ি ঋণের জন্য খুব শক্তিশালী গতি দেখছি।
কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০২০ সালের শুরু থেকে ভোক্তা ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ কমে যায়। এরপর কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রমের সঙ্গে বাড়তে শুরু করে ভোক্তা ব্যয়। চলতি বছরে এসে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভোক্তা ব্যয় ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বেড়েছে। ফলে এ সময়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যালান্সও বেড়েছে। তবে এমন বৃদ্ধি সত্ত্বেও ক্রেডিট কার্ডের ব্যালান্স এখনো ২০১৯ সালের শেষে ১৪ হাজার কোটি ডলারের স্তরের তুলনায় পিছিয়ে আছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে বন্ধকি ও গাড়ির ঋণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ঋণ ও ভাড়াসহ গাড়ির ঋণ ২০ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে পুনঃতফসিলসহ নতুন বন্ধকি ঋণ ১ লাখ ২২ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
গত চার প্রান্তিকে মোট ৪ লাখ ৫৮ হাজার কোটি ডলার বন্ধকি ঋণ নেয়া হয়েছে। এ সংখ্যা মোট বন্ধকি ঋণের ৪৪ শতাংশ। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের গবেষকরা জানিয়েছেন, এ ঋণের প্রায় ৪০ শতাংশ নেয়া হয়েছে বাড়ি কেনার জন্য এবং বাকি ৬০ শতাংশ পুনঃতফসিলের জন্য।
ক্রেডিট কার্ড ও গাড়ির ঋণের ব্যালান্স শিক্ষার্থী ঋণ কমার কারণে কিছুটা প্রভাবিত হয়েছিল। ঋণের একমাত্র বিভাগ হিসেবে গত প্রান্তিকে শিক্ষার্থী ঋণ কমে গেছে। এপ্রিল থেকে জুনের এ সময়কালে শিক্ষার্থী ঋণের ব্যালান্স ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার কমে ১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
২০২০ সালের মার্চে মার্কিন সরকারের প্রণোদনা সহায়তার কারণে শিক্ষার্থী ঋণে এমন পতন হয়েছে। সরকার শিক্ষার্থী ঋণের পরিশোধ কার্যক্রম ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করে। আগামী ১ অক্টোবর এ ঋণ পরিশোধ পুনরায় শুরু হওয়ার কথা। ১৯ মাসের এ স্থগিতাদেশ প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন নাগরিককে উপকৃত করেছে।