ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে সেরা ৫ অঘটন

ক্রীড়া ডেস্ক

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের দীর্ঘ ৬০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস পরিপূর্ণ নানা অঘটনে, চমকে। ডেনমার্ক (১৯৯২) ও গ্রিসের (২০০৪) অপ্রত্যাশিত শিরোপা জয় আর ২০১৬ আসরে দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ডের চমক সৃষ্টির গল্প এখনো মানুষের মুখে মুখে।

২০১৬ সালের ইউরোতে ২৯ শতাংশেরও বেশি ম্যাচ জিতেছে আন্ডারডগ দলগুলো, এর মধ্যে রাখতে হবে হট ফেভারিট স্বাগতিক ফ্রান্সকে হারিয়ে পর্তুগালের শিরোপা জয়ের ম্যাচটিও। 

আগামী শুক্রবার ইউরোপের ১২টি দেশের ১২টি শহরে শুরু হবে ‘২০২০ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ’ আসর। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের আসরটি এক বছর পিছিয়ে আগামী ১১ জুন মাঠে গড়াচ্ছে। এ আসর সামনে রেখে ফুটবল অনুরাগীরা এখন ইতিহাসের দিকেও খানিকটা চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। তাদের জন্যই বিবিসির বিশেষজ্ঞ দল ১০টি সেরা অঘটন বের করে এনেছে। তার মধ্যে ৫টি তুলে ধরা হলো:

১. ইংল্যান্ড ১-২ আইসল্যান্ড (ইউরো ২০১৬, শেষ ১৬)।

‘আমাদের সবার বিশ্বাস ছিল। বাকি বিশ্বের এই বিশ্বাস ছিল না, কিন্তু আমরা করে দেখিয়েছি।’

২০১৬ সালের ইউরোতে পেছন থেকে উঠে এসে রয় হজসনের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ গোলের অপ্রত্যাশিত জয় তুলে নেয়ার পর অভিব্যক্তি প্রকাশ করে এ কথাগুলো বলেছিলেন আইসল্যান্ড ডিফেন্ডার কারি অ্যান্ডারসন। ইংল্যান্ডের জন্য এ হারটি ছিল যেকোনো বড় আসরে অন্যতম বৃহত্ লজ্জাজনক। 

সাবেক ইংলিশ স্ট্রাইকার অ্যালান শিয়েরার তো বলেই দেন, আমার দেখা ইংল্যান্ড দলের সবচেয়ে বাজে ফল। 

অথচ চতুর্থ মিনিটে ওয়েন রুনির পেনাল্টি গোলের পর ধরেই নেয়া হচ্ছিল, একটি সহজ জয় পেতে যাচ্ছে ইংলিশরা। যদিও ১৪ মিনিটের ব্যবধানে র্যাগনার সিগার্ডসন ও কলবেইন সিগথরসন গোল করে আইসল্যান্ডের ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করেন এবং এর মধ্যে দিয়ে রয় হজসনের পদত্যাগও নিশ্চিত হয়ে যায়।

২. ফ্রান্স ০-১ গ্রিস (ইউরো ২০০৪, কোয়ার্টার ফাইনাল)। 

‘এটা গ্রিক ফুটবলের ইতিহাসে সেরা মুহূর্ত’—জয় শেষে এমন ঘোষণাই দিলেন ম্যাচের নায়ক অ্যাঙ্গেলোস চেরিস্টিয়াস। 

ওই সময়ের জন্য মন্তব্যটি যথার্থই ছিল। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় গ্রিস। চেরিস্টিয়াস দ্বিতীয়ার্ধে হেডে যে গোলটি করেছিলেন তার কোনো জবাব ছিল না জিনেদিন জিদান, রবার্ট পিরেস আর থিয়েরি অঁরিকে নিয়ে গড়া ফ্রান্স দলের কাছে। যদিও টুর্নামেন্টজুড়ে চলছিল গ্রিক রূপকথা, আর চেরিস্টিয়াসের কথাটি শিগগিরই ‘পুরনো’ হয়ে যায়। কেননা ওই টুর্নামেন্টেই আরো বড় চমক অপেক্ষা করছিল তাদের জন্য। সেমিফাইনালে চেক রিপাবলিককে ১-০ গোলে হারিয়ে গ্রিস তাদের ইতিহাসে প্রথম বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নেয়। 

৩. বেলজিয়াম ১-৩ ওয়েলস (ইউরো ২০১৬, কোয়ার্টার ফাইনাল)।

‘আমি যদি প্রিমিয়ার লিগের কোনো ক্লাবের চেয়ারম্যান হতাম তবে শিগগিরই দলে সই করিয়ে নিতাম হাল রবসন-কানুকে। কি দুর্দান্ত গোল। ’

কথাটি বলছিলেন ওয়েলসের সাবেক ফরোয়ার্ড জন হার্টসন। রবসন-কানুর অবিশ্বাস্য গোলের পর কথাগুলো বলছিলেন তিনি। ওই জয়টি ওয়েলস ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছে। কেননা ৫৮ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বড় কোনো আসরে খেলতে এসেই শক্তিশালী বেলজিয়ামকে ৩-১ গোলে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয় ওয়েলস। এমনই এ জয়টি প্রথমবারের মতো বড় কোনো আসরের সেমিফাইনালে তুলে দেয় ওয়েলসকে। 

৪. বেলজিয়াম ০-২ তুরস্ক (ইউরো ২০০০, গ্রুপ পর্ব):

‘এটা গোটা তুরস্কের জন্য বিরাট এক উপহার। তুরস্ক ফুটবলের ৭৭ বছরের ইতিহাসে এটা সবচেয়ে বড় অর্জন।’

২০০০ ইউরোর গ্রুপ পর্বে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় তুলে নেয়ার পর কথাগুলো বলছিলেন তুরস্ক জাতীয় দলের কোচ মুস্তাফা ডেনিজলি। 

এ জয়ের মধ্য দিয়ে যৌথ আয়োজক বেলজিয়ামকে বিদায় করে প্রথমবারের মতো বড় কোনো আসরের নকআউট পর্বে জায়গা করে নেয় তুরস্ক। ম্যাচের দুটি গোলই করেছিলেন হাকান সুকুর। 

৫. নেদারল্যান্ডস ০-১ ডেনমার্ক (ইউরো ২০১২, গ্রুপ পর্ব):

২০১০ বিশ্বকাপের রানার্সআপ হিসেবে ২০১২ ইউরোতে নেদারল্যান্ডস ছিল অন্যতম ফেভারিট। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ডাচ কোচ বার্ট ফন মারউইক নিজের দলকেই শিরোপার ফেভারিট ঘোষণা করেন। যদিও গ্রুপ পর্বেই বড় হোঁচট খেল ডাচরা। মাইকেল ক্রোন-ডেলির প্রথমার্ধের গোলটির কোনো জবাব দিতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। পরিশেষে গ্রুপ পর্বে নিজেদের তিন ম্যাচেই পরাজিত হয়ে বিদায় নেয় ডাচরা। অবশ্য ডাচদের হারিয়ে চমক সৃষ্টি করা ডেনিশরাও অবশ্য উঠতে পারেনি নকআউট পর্বে।   

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন