পেট্রলকে অকটেনে রূপান্তর

পাঁচ বছরের প্রকল্প আট বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি

আবু তাহের

পেট্রলকে অকটেনে রূপ দিতে ২০১২ সালে সিলেটের রশিদপুরে ক্যাটালাইটিক রিফর্মিং ইউনিট (সিআরইউ) স্থাপনের একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। পেট্রোবাংলার আওতায় প্রকল্পের দায়িত্ব পায় সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফএল) প্রকল্পের মাধ্যমে পেট্রলকে রিফর্ম করে অকটেনে রূপ দেয়া হবে। কিন্তু পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প আট বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়িত হয়নি। বরং প্রকল্পের মেয়াদ এবং খরচ বাড়িয়ে প্রকল্প বিলম্বিত করার অভিযোগ রয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় একদিকে অকটেনের মান যেমন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয়ও বাড়ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়িত হলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেত সরকার। তাছাড়া পেট্রল অকটেনের মান নিয়ে বিএসটিআই কর্তৃক যে স্ট্যান্ডার্ড স্পেসিফিকেশন মান রয়েছে, তা নিশ্চিত করা যেত। পেট্রলের স্পেসিফিকেশন মান নিশ্চিত না হওয়ায় তিন মাস ধরে বিপিসি তার নিয়ন্ত্রণাধীন শোধনাগারগুলো থেকে তেল কেনা বন্ধ রেখেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ . বদরুল ইমাম বলেন, দেশে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কনডেনসেড থেকে পেট্রল, কেরোসিন ডিজেল তৈরি হয়। তবে রিফর্মিং করে সেটি অকটেনে রূপান্তর করা গেলে বাজারও প্রসারিত হবে। ধরনের প্লান্ট বাস্তবায়িত হলে আরো পরিসরে জ্বালানিকে ব্যবহার করা যাবে।

দেশে বর্তমানে বার্ষিক লাখ ৩০ হাজার টনের মতো অকটেনের চাহিদা রয়েছে। আর দৈনিক চাহিদা রয়েছে হাজার ৯০০ ব্যারেল। রশিদপুরে প্লান্ট চালু হলে তার পুরোটাই এখান থেকে পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া দেশে বর্তমানে অকটেনের বার্ষিক বাজার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার মতো। বাজারও প্রসারিত হতো প্লান্ট চালু হলে। তবে গত আট বছরে প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় অকটেনের বাজার বড় হচ্ছে না।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশকে অকটেনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে ২০১২ সালে সিলেটের রশিদপুরে হাজার ব্যারেল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যাটালাইটিক রিফর্মিং ইউনিট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে রশিদপুরের গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া কনডেনসেড পেট্রল থেকে অকটেনে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। এজন্য ওই বছরের মার্চে ৩৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার প্রাথমিক ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে একটি প্রকল্প পাস করা হয়। সময়সীমা ধরা হয় ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে না পারায় পরে জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর সে সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় জ্বালানি বিভাগ থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়।

এদিকে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় পুনরায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সময় বাড়ানোর দাবি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধিত সময়সীমা ধরা হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। সেই সঙ্গে প্রকল্প ব্যয় ৩৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা করা হয়।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ, প্রকল্পের কাঠামো বাড়ানোসহ নানা কারণে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শোয়েব বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের কাজ ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পে কমিশনিং চলছে। এটি একটি টার্নকি প্রজেক্ট হওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি, চলতি বছরের মার্চের মধ্যে আমরা উৎপাদনে আসতে পারব।

বারবার সময় বাড়িয়ে কেন প্রকল্প শেষ করা যায়নি জানতে চাইলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চারবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়া দেশীয় একটি কোম্পানির সঙ্গে দরপত্র ঠিক করা হয়। কিন্তু তাদের নকশা ঠিক করতেই প্রায় এক বছর লেগে যায়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে বেশির ভাগ সময় কেটে গেছে প্রকল্পে আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির কোটেশন পেতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন