লিটারে ১ টাকা বাড়ল ডিজেলে, পেট্রল ও অকটেনে আড়াই টাকা

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ল ৭৫ পয়সা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে চলতি মে মাসের জন্য ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। আড়াই টাকা করে বেড়েছে পেট্রল ও অকটেনের দাম। নতুন দর অনুযায়ী, গতকাল রাত ১২টা থেকে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম পড়ছে ১০৭ টাকা। পেট্রলের দাম পড়ছে ১২৪ টাকা ৫০ ও অকটেন বিক্রি হচ্ছে ১২৮ টাকা ৫০ পয়সা।

জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে গতকাল বিকালে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত মার্চ থেকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ চালু করা হয়। এ হিসাবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করছে সরকার। আগের দুই মাসের প্রজ্ঞাপনেই জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমিয়েছিল মন্ত্রণালয়। 

গত এপ্রিলের জন্য প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা থেকে কমিয়ে ১০৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অপরিবর্তিত রাখা হয় পেট্রল ও অকটেনের দাম। গত মাসে প্রতি লিটার পেট্রল ১২২ ও অকটেন বিক্রি হয় ১২৬ টাকায়।

এর আগে গত ৭ মার্চ ঘোষিত দামে চার ধরনের জ্বালানি পণ্যের দাম কমায় সরকার। ওই সময় প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনে ১০৯ টাকা থেকে ৭৫ পয়সা কমিয়ে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। অকটেনের দাম ১৩০ থেকে কমিয়ে ১২৬ ও পেট্রলের দাম ১২৫ থেকে কমিয়ে ১২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সককার। এরই অংশ হিসেবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ ফর্মুলার নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রল ব্যক্তিগত যানবাহনে অধিক পরিমাণে ব্যবহার হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাসদ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সবসময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রলের দাম বেশি রাখা হয়। ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৩ দিনের মাথায় সব জ্বালানি তেলের লিটারে ৫ টাকা করে কমানো হয়। 

ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম জ্বালানি বিভাগ নির্ধারণ করে। এছাড়া উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

এদিকে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। শিল্প-কলকারখানায় ব্যবহৃত ক্যাপটিভ বিদ্যুতের (শিল্প-কারখানার গ্যাসভিত্তিক নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্র) গ্যাসের দামও প্রতি ঘনমিটার ৭৫ পয়সা বাড়িয়েছে সরকার। তবে বাসাবাড়ি, সার উৎপাদন, সিএনজি ও চা শিল্পসহ কিছু খাতে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ মূল্যবৃদ্ধি চলতি মে মাস থেকে কার্যকর হবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আরো বাড়বে; ব্যয় বাড়বে শিল্প-কারখানায় পণ্য উৎপাদনেও।

গতকাল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের নতুন দর ঘোষণা করে। সরকারি, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আইপিপি), ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ছিল প্রতি ঘনমিটার ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। এখন বাড়িয়ে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিল্প-কারখানার গ্যাসভিত্তিক নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (ক্যাপটিভ) সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ছিল ৩০ টাকা ৭৫ টাকা। সেটি বেড়ে এখন ৩১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছরের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটারে ৫ টাকা ২ পয়সা বাড়িয়ে করা হয় ১৪ টাকা। শিল্প খাতের গ্রাহকদের ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা করা হয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশে গ্যাস ব্যবহারকারীদের আটটি গ্রাহক শ্রেণী রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৭ শতাংশ, শিল্পে ২৩, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ১৮, গৃহস্থালিতে ১০, সার উৎপাদনে ৭, সিএনজিতে ৪ এবং বাণিজ্যিক ও চা শিল্পে ১ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন