পিআরআইয়ের সেমিনার

খাতভিত্তিক করছাড় প্রত্যাহারের প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের ‘না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় গতকাল পিআরআইয়ের সেমিনারে বক্তারা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বিদ্যমান রাজস্ব ব্যবস্থায় খাতভিত্তিক করছাড় প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। তবে এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী নেতা। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মনে করে, কর আহরণ কম হওয়া হতাশার কিছু নয়। বরং উৎপাদনের স্বাভাবিকতা ধরে রাখা এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

গতকাল গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় রাজস্ব বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব মতামত উঠে আসে। পিআরআই এ সেমিনার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কর-জিডিপি ১০ শতাংশের নিচে রেখে কোনো দেশ উন্নত হতে পারেনি, বাংলাদেশও পারবে না। রাজস্ব কম থাকায় ব্যয় সংকোচন করতে করতে স্বাস্থ্য ব্যয় দাঁড়িয়েছে জিডিপির ১ শতাংশের কম। শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তায় ২ শতাংশের কম। এসব খাতে বাজেটের অবস্থা গোশত ছাড়া হাড্ডির মতো হয়ে গেছে; দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। রাজস্ব বাড়াতে সংস্কারের বিকল্প নেই।’ তাই বিদ্যমান খাতভিত্তিক করছাড় উঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সংস্কার পদক্ষেপ নিলেও তার ফল পেতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। খাতভিত্তিক করছাড় তুলে দিলে আগামী তিন-চার বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব। আর সংস্কারের ফলে ২০৪১ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ৪৯ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে। তখন বর্তমানের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বাজস্ব বেড়ে কর-জিডিপি হার দাঁড়াবে ১৮ শতাংশে। এত স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় দুই-তিন গুণ বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব হবে। তবে রাজনৈতিক অর্থনীতির কারণে সংস্কার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই সরকারের প্রথম বছরই সংস্কারের সময়।’ সেমিনারে কোনো কোনো ব্যবসায়ী নেতা করছাড় তুলে নেয়ার প্রস্তাবে আপত্তি জানান। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ‘শিল্প খাত থেকে করছাড় তুলে নেয়া উচিত হবে না। করছাড় থাকলে ১০ বছর পর রাজস্বের বড় উৎস হতে পারবে শিল্প খাত। কিন্তু তা করা না হলে শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে, দীর্ঘমেয়াদে শিল্প টিকবে না।’ 

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ও ব্যাক টু ব্যাক এলসির মতো ভালো নীতির কারণেই পোশাক খাত প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে।’ 

সেমিনারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ব্যাংকের সুদহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটি ১৪ শতাংশের বেশি হলে তা অসহনীয় হয়ে যাবে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ না পেলে আমরা উৎপাদন ঠিক রাখতে পারব না। ডলার সংকট এখনো রয়েছে। আমদানি ব্যয় বাড়ায় গত চার-পাঁচ বছরে ব্যবসায়ীদের অনেক লোকসান হয়েছে। তাই আগামী অর্থবছরের জন্য ব্যবসাবান্ধব একটি বাজেট হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘জিডিপির তুলনায় কর আহরণ কম হওয়া হতাশার কিছু নয়। আমরা উৎপাদন ঠিক রাখব, নাকি রাজস্ব বাড়াব? আমরা রাজস্ব না বাড়িয়ে উৎপাদন ঠিক রাখার দিকে নজর দিচ্ছি। শিল্পকে সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ছে। গত কয়েক বছর আমরা শিল্পকে নীতিসহায়তা দেয়ার বিষয় নিয়ে কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে আনছি। কিন্তু অনবরত আমাদের অভিযোগ শুনতে হয়। আমরা বদনামের কাজ করি না।’

করবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেকেই কর দিতে চান না। সরকারি প্রতিষ্ঠানও করছাড়ের জন্য অনবরত তদবির করে। তাই করবৃদ্ধি সহজ বিষয় নয়। নেপাল, মালদ্বীপসহ প্রতিবেশী যেসব দেশের রাজস্ব আহরণ বেশি বলে বলা হয়, তারা পর্যটন থেকে বেশি রাজস্ব পায়। আমাদের সে সুযোগ কম। গত কয়েক বছরে আমরা টিনধারীর সংখ্যা বাড়িয়েছি। রাজস্বও দ্বিগুণ করতে পেরেছি।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘শুধু রাজস্ব আয় করলেই হবে না। এটার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে বেসরকারি খাতকে সোচ্চার এবং জনগণকে সচেতন হতে হবে। করছাড় যৌক্তিক করা প্রয়োজন। ২৫ বছর ধরে কোনো খাত করছাড় পেতে পারে না। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য অটোমেশনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের ইনফরমাল সেক্টর অনেক বড় বিধায় এ সেক্টর থেকে কর আহরণ গুরুত্বপূর্ণ।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন