অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা আমদানি জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) করোনাভাইরাসের টিকা আমদানির বিষয়টি গতকাল সারা দিনই ছিল আলোচনায়। ভারতে টিকা রফতানিতে আপাতত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এমন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের একাধিক মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আমদানি জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজিডিএর উপপরিচালক মুখপাত্র মো. আইয়ুব হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভারত যুক্তরাজ্য পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টিকার অনুমোদন দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের ভূ-প্রাকৃতিক সামঞ্জস্য রয়েছে। সেটি বিবেচনায় নিয়ে টিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

ভারতের ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা রোববার ওই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিলে বাংলাদেশেও দ্রুত টিকা পাওয়ার আশা জোরালো হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এর আগে জানিয়েছিলেন, ভারত অনুমোদন দিলে জানুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম চালান পেয়ে যাবে। তবে ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালার বরাত দিয়ে রোববার রাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়, রফতানি শুরুর আগে আগামী দুই মাস তারা ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেই জোর দেবে। তার ওই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের টিকা পাওয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়।

এদিকে গতকাল সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ভ্যাকসিন-সংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ভারতের নিষেধাজ্ঞার পরও টিকা পেতে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না। বেক্সিমকো, ফরেন মিনিস্ট্রি ভারতের মিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, আমাদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তি ব্যাহত হবে না। কোনো সমস্যা হবে না, আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ডব্লিউএইচও অনুমতি দিলেই আমাদের টিকা দেবে। আলোচনা অনুযায়ী আমরা ভ্যাকসিন পাব। চুক্তিটি আন্তর্জাতিক, তাই এর ওপর আমরা আস্থা রাখি। সব বিষয়ে আমরা আশাবাদী। টিকার জন্য চুক্তি অনুযায়ী খুব দ্রুত ১২ কোটি ডলার পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে এবং আজকের মধ্যে সেই টাকা জমা হয়ে যাবে বলেও জানান মন্ত্রী।

বাংলাদেশে কবে নাগাদ টিকার প্রথম চালান আসতে পারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি দেখা হচ্ছে, কারণ সমস্যাটা গতকালও ছিল না। এখনই বিষয়টি বলা যাচ্ছে না, দু-চারদিনের মধ্যে জানাতে পারব।

টিকার বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের টিকার বিষয়ে আলোচনা চলমান আছে। তবে তাদের এখনো ট্রায়াল শেষ হয়নি। ট্রায়াল শেষ না হলে তো চুক্তি করা যাবে না। চীনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের কাছে বিস্তারিত কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।

সময় স্বাস্থ্য সচিবও জানিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি সাপেক্ষে আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ দেশে টিকা চলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার জানিয়েছেন, আমরা যে চুক্তি করেছি, এটার ফাইন্যান্সিয়াল ট্রানজেকশন, কীভাবে টাকাটা যাবে, কীভাবে ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে সেসব কাজ হয়েছে জিটুজি বা সরকার টু সরকার। যে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার কথা ভারত সরকার বলেছে শুধু কর্মাশিয়াল অ্যাক্টিভিটিজের ওপর, আমাদেরগুলোর ওপর না। কারণ আমাদেরটা সরকার টু সরকার।

সচিব বলেন, সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ভারত সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার পর তারা ডব্লিউএইচওর কাছে অনুমোদনের জন্য যাবে, সেখানে তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগবে। আমাদের সময় বলা ছিল ফেব্রুয়ারিতে পাব। তিন সপ্তাহ পর অর্থাৎ ডিলে হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। দুশ্চিন্তা হওয়ার মতো এখনো কিছু হয়নি। টাকা পাঠানোর বিষয়টি আজই (গতকাল) চূড়ান্ত হয়ে গেছে এবং পাঠানো হচ্ছে।

গতকাল অন্য এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেনও দাবি করেন, টিকা আসা নিয়ে শঙ্কা নেই। তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটা নিয়ে উদ্বেগ, আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, উনি বলেছেন, সিরাম কোম্পানির প্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা ভারত সরকারের কোনো পলিসি না। এটা ব্যক্তিগত এবং এটা প্রিম্যাচিউরড। একটু বেশি বেশি আগে বলেছেন। ভারতীয় সরকার বলেছে, কমিটমেন্ট হ্যাজ বিন মেড অ্যাট দ্য হাইয়েস্ট লেভেল উইল বি ইমপ্লিমেন্টেড। সুতরাং নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

এদিকে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশে সরবরাহের দায়িত্বে থাকা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসও দাবি করেছে, চুক্তির নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশ টিকা পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন