ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিজয় নিশ্চিত ছিল আগেই। অপেক্ষা ছিল শুধু ঝুলে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোর আনুষ্ঠানিক ফলাফলের। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখনো পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের (মতান্তরে তিনটি) ফল ঘোষণা বাকি। তবে এর মধ্যেই পেনসিলভানিয়ার ২০টি নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোটের হার্ডল অতিক্রম করে ফেলেছেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। আগামী ২০ জানুয়ারি ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন তিনি।

এরই মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক ভোট অর্জনের মাধ্যমে ইতিহাস গড়েছেন জো বাইডেন। রোনাল্ড রিগানকে সরিয়ে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবেও অভিষেক হতে যাচ্ছে তার। তবে এবারের ঘটনা উত্তেজনাবহুল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রেকর্ড শুধু কয়টিই নয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অভিবাসনবিরোধী উত্তেজনা তৈরি করে ক্ষমতায় আসা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে মার্কিন জনগণ তাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে কমলা হ্যারিসকে, যিনি শতভাগ মার্কিন বংশোদ্ভূত নন মোটেও। ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে জাত্যভিমান উগ্র জাতীয়তাবাদের ওপর মার্কিন জনগণের স্পষ্ট চপেটাঘাতই বলা চলে।

হোয়াইট হাউজে ক্ষমতার শীর্ষে যেতে যেকোনো প্রার্থীর ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের প্রয়োজন। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, পেনসিলভানিয়ার ২০টিসহ বাইডেনের ঝুলিতে জমা পড়েছে ২৭৩টি ইলেক্টোরাল ভোট। ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা আলাস্কা পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের ফলাফল এখনো চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা বাকি। অন্যদিকে অ্যারিজোনার ১১টি নেভাদার ছয়টি ইলেক্টোরাল ভোট যোগ করে কয়েকটি গণমাধ্যম বলছে, বাইডেনের ঝুলিতে পর্যন্ত নিশ্চিতকৃত ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ২৯০। জর্জিয়াতেও জয়ের পথে এগিয়ে চলেছেন বাইডেন। সেক্ষেত্রে তার প্রাপ্ত মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা হবে ৩০৬। অন্যদিকে ট্রাম্প এগিয়ে আছেন আলাস্কা নর্থ ক্যারোলাইনায়। অঙ্গরাজ্যগুলোয় বিজয়ের অপেক্ষাও এখন ট্রাম্পের জন্য গুরুত্বহীন।

প্রেসিডেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন কমলা হ্যারিস কেমন পারফরম্যান্স দেখাবেন, তা সময়ই বলে দেবে। তবে নিজের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের অঙ্গীকার করেছেন দুজনেই।

বিজয়ের জন্য গতকাল মার্কিন জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে এক টুইট বার্তায় জো বাইডেন বলেন, আমেরিকা! দেশকে নেতৃত্বদানে আমাকে বেছে নেয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের সামনে যে কাজ, তা অনেক কঠিন হবে। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, যারা আমাকে ভোট দিয়েছে বা দেয়নিসব মার্কিন নাগরিকেরই প্রেসিডেন্ট হব আমি। আপনারা আমার প্রতি যে বিশ্বাস রেখেছেন, তা পূর্ণ প্রতিপালনের অঙ্গীকার করছি আমি।

অনেকটা একই বক্তব্য রেখেছেন পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, নির্বাচন শুধু জো বাইডেন বা আমাকে জেতানোর চেয়েও অনেক বেশি কিছু ছিল। আদতে তা ছিল মার্কিন চেতনা তার সুরক্ষায় লড়াই চালানোয় আমাদের অঙ্গীকারেরই বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সামনে অনেক কাজ। এবার তা শুরু করা যাক।

বাইডেনের বিজয়ে উচ্ছ্বসিত ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর সঙ্গে ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের শুধু অবনতিই হয়েছে। এবার বাইডেন ক্ষমতায় না এলে ট্রাম্প প্রশাসনকে নিয়ে কূটনৈতিকভাবে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো ইউরোপীয় নেতাদের। বাইডেনের বিজয় তাদের সে দুশ্চিন্তা অনেকাংশেই দূর করেছে।

অন্যদিকে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনার মাধ্যমে পরিবেশবাদী মহলে ট্রাম্প যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিলেন, সেটিও দূর করেছে বাইডেনের বিজয়।

পেনসিলভানিয়ায় বাইডেনের বিজয়ের ঘোষণা আসার পর তাত্ক্ষণিকভাবে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন ট্রাম্প। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী গতকাল গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এর আগে বিজয় প্রায় নিশ্চিত অবস্থাতেই জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় অনুযায়ী শুক্রবার রাতে ডেলওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটন থেকে মার্কিন জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যে সবার জন্য ছিল ধৈর্য ঐক্যের বার্তা। বক্তব্যে ওভাল অফিসে বসার পর করোনা মোকাবেলা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, তার রূপরেখা তুলে ধরেন বাইডেন। সময় কমলা হ্যারিসও তার সঙ্গে ছিলেন।

ভাষণে বাইডেন বলেছিলেন, আমি চাই প্রত্যেকে জানুক, করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় আমরা খুব দ্রুত কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি।

মহামারী, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, জলবায়ু পরিবর্তন জাতিগত বৈষম্য দূর করার জন্য ভোটাররা এরই মধ্যে ম্যান্ডেট দিয়েছে। মার্কিনরা প্রমাণ করেছে, তারা দেশকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চায়।

ওই সময় রিপাবলিকান প্রচার শিবিরসহ অনেকেরই ধারণা ছিল, বাইডেন তার ভাষণে চূড়ান্ত জয়ের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। তবে বাইডেন সে পথে হাঁটেননি। তিনি মার্কিন নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষার কথা বলেছিলেন, যে অপেক্ষার অবসান হলো গতকাল রাতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানেই ট্রাম্পের সঙ্গে তার আচরণগত ব্যবধান আরেকবার সুস্পষ্ট করেছেন বাইডেন। ঘটনায় তার ধৈর্য সহনশীলতারই পরিচয় মিলেছে। বিপরীতে ভোট গণনা চলাকালে শুরুতেই নিজেকে বিজয়ী বলে দাবি করে আরেকবার নিজের অস্থির চিত্তের প্রমাণ দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে জোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। বাইডেনের হোয়াইট হাউজের পথে যাত্রায় প্রক্রিয়াগত বাধা সৃষ্টি করতে এরই মধ্যে মিশিগানসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের করা মামলা যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে খারিজ হয়ে গেছে। তার পরও সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি উত্থাপনের সুযোগ খুঁজছেন ট্রাম্প। তার দাবি, জালিয়াতি করে দ্বিতীয় মেয়াদে তার প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা।

পরাজিত হওয়ার পরও বিদায়ী প্রেসিডেন্টের এমন একগুঁয়ে অবস্থানে নাখোশ রিপাবলিকান রাজনীতিকরাও। তাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোলাখুলি এর সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, ট্রাম্পের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা তৈরির পাশাপাশি সামাজিক বিভক্তি বাড়ানো ছাড়া আর কোনো কাজেই আসবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন