চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আগের প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৯৮৬ সালের পর দেশটিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এটাই সর্বোচ্চ। খবর ব্লুমবার্গ।
কোরিয়ার এই রেকর্ড প্রবৃদ্ধি বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেছে। তৃতীয় প্রান্তিকের জন্য দেশটির জিডিপিতে ১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস জানিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা।
নভেল করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য দেশের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিও চাপে পড়ে গিয়েছিল। এতে চলতি বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে দেশটির জিডিপিতে সংকোচন দেখা যায়। সেখান থেকে ফিরে তৃতীয় প্রান্তিকে প্রত্যাশাতীত ও রেকর্ড প্রবৃদ্ধি—কোরিয়ার অর্থনীতি যে পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে এ তথ্য তারই প্রমাণ দেয়। আর এই পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা রাখছে চীন ও অন্যান্য শীর্ষ অর্থনীতিতে মেমোরি চিপ ও ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি। করোনা প্রতিরোধে ঘরে বসে কাজ করার প্রচলন বাড়ায় এসব পণ্যের চাহিদা বাড়তির দিকে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোরিয়ার রফতানি আগের প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে ১৬ শতাংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে কভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি খারাপ থাকায় এ উত্তরণ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা এবং আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট অনিশ্চয়তাও কোরিয়ার রফতানি খাতের মসৃণ প্রবৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।
অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিক উত্তরণের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। রফতানিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি, পর্যাপ্ত প্রণোদনা ও কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সাফল্য তাদের এ শক্ত অবস্থানে যেতে সহায়তা করেছে।
ব্যাংক অব কোরিয়া গতকাল জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এর পর পরই দেশটির অর্থমন্ত্রী হং ন্যাম-কি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘চীনসহ অন্যান্য শীর্ষ অর্থনীতিতে রফতানি বেড়ে যাওয়ায় কোরিয়া উত্তরণের পর্যায়ে প্রবেশ করতে পরেছে। এছাড়া প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিও এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।’
তিনি আরো বলেন, আগস্টে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ নতুন করে বেড়ে না গেলে কোরিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের ওপরে থাকত।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিএস লম্বার্ডের অর্থনীতিবিদ রোরি গ্রিন বলেছেন, ‘উন্নত বাজারগুলোয় মহামারীর দ্বিতীয় প্রবাহ আঘাত হানার বিষয়টি উদ্বেগজনক। তবে নতুন করে লকডাউন ফিরে এলেও ঘরে বসে কাজ করার প্রথা দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য বাড়তি প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে।’
তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপি বাড়লেও পুরো বছরে কোরিয়ার জিডিপি ১৯৯০-এর দশকের এশীয় আর্থিক মন্দার পর প্রথমবারের মতো সংকুচিত হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।