করোনাকালে নারী ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এমএসএফের ওয়েবিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাকালে নারী ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা প্রতিষ্ঠান মেডিসিন্স স্যায়েন্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ)। ওয়েবিনারটি এমএসএফ এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। 

ঘন্টাব্যাপী আয়োজিত এই ওয়েবিনারে পাঁচজন প্যানেলিস্ট কভিড-১৯ মহামারী চলাকালে নারী ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন ডিরেক্টোরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিস (ডিজিএইচএস) এর নন-কমিউনিকেবল ডিজিস বিভাগের পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান, একই বিভাগের সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মারুফ আহমেদ খান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হাসিনা মমতাজ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ এবং এমএসএফ বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের সুপারভাইজার গাজী ফারজানা শারমিন শ্রাবণী।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, নারী ও শিশুদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার হার বেশী। ...সমস্যাগুলি লেখাপড়া জানা বা না জানার সাথে অতটা সম্পর্কিত নয়। বরং সমাজের প্রচলিত ট্যাবুর কারণে অনেকাংশে এই সমস্যা হয়ে থাকে। একই কারণে অনেকেই চিকিৎসা নিতে রাজী হন না।

মানসিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণের ব্যাপারে কথা বলতে যেয়ে আলোচকবৃন্দ তৃণমূল থেকে মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে কাউন্সেলিং- এর ওপরে জোর দেয়ার তাগিদ দেন। পাশাপাশি, গত দশক থেকে অপচিকিৎসা গ্রহণের হার অনেকাংশেই কমে এসেছে বলেও তারা জানান। কুসংস্কার দূরীকরণের অন্যতম বাধা ছিল এই অপচিকিৎসা বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। 

মানসিক সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে ডা. মারুফ বলেন, ‘ডিজিএইচএস মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরে সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর চিকিৎসাকালীন সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচী চলাকালীন মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য আইন রয়েছে, যা অনেক উন্নত দেশেও নেই।’

মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যার গুরুত্ব তুলে ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল কন্সাল্টেন্ট হাসিনা মমতাজ বলেন,  ‘নারীদের বলবো, আপনাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলুন। বিশ্বস্ত কারো সাথে সমস্যা শেয়ার করুন। এই কভিড-১৯ চলাকালীন সবার উচিত নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষভাবে সচেতন থাকা।’

আলোচকবৃন্দ শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক সমস্যা, লকডাউনে ঘরে আটকে থাকা সহ নানাবিধ কারণে সন্তানদের দিকে ঠিকমতো খেয়াল রাখার কাজটি অনেকটাই কঠিন বলেও তারা মত ব্যক্ত করেন।

এমএসএফ মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের সুপারভাইজার গাজি ফারজানা কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জায়গা সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেন। উল্লেখ্য, ঢাকা ও কক্সবাজারে এমএসএফ তাদের চলমান সকল প্রকল্পে বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে।

এমএসএফ বিশ্বাস করে, মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যের মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এমএসএফ এর এই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই এই ওয়েবিনারে বিভিন্ন প্লাটফর্মের প্রতিনিধিদের এক যায়গায় উপস্থিত করা হয়েছে। কারণ এমএসএফ মনে করে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলা একটা সমন্বিত উদ্যোগ। ওয়েবিনারটি প্রচারিত হওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার মানুষ এটা দেখেন। এই ওয়েবিনারের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে, সামনের দিনগুলিতে সমাজের প্রচলিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে এমএসএফ আরো ওয়েবিনার আয়োজনের চিন্তা করছে।

প্রসঙ্গত, এমএসএফ বাংলাদেশে প্রায় ৫০ বছর ধরে উদ্ভুত স্বাস্থ্য সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসা বিষয়ক মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করে সংস্থাটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন