লিজে আনা দুই বোয়িংয়ে নিট ক্ষতি ১১০০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিসর থেকে ভাড়ায় আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের নিট ক্ষতি হয়েছে হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই উড়োজাহাজ দুটি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনায় রাজস্ব আয় হয়েছিল হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে বিমানের ব্যয় হয়েছে হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

কমিটির সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তানভীর ইমাম, আশেক উল্লাহ রফিক সৈয়দা রুবিনা আক্তার অংশ নেন।

এর আগে গত সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণীতে জানানো হয়, উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে বিমান ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। সে দায় থেকে গত মার্চ মাস থেকে বিমান মুক্ত হতে পেরেছে।

গতকালের বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মহিবুল হক বলেন, বিমান লিজ সংস্কৃতি থেকে একেবারে বেরিয়ে আসতে চাইছে। বছরে নতুন তিনটি ড্যাশ- বিমান আসার কথা ছিল। তার মধ্যে দুটি বছরের মধ্যে বিমানবহরে যুক্ত হবে, একটি আগামী জানুয়ারিতে বিমানবহরে যুক্ত হবে বলে আশা করা যায়। বিমানগুলো ২৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কেনা হয়েছে।

বৈঠকে কমিটির সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, বিমানের লিজ প্রক্রিয়াটা তার কাছে স্পষ্ট নয়। প্রক্রিয়ার সময় বিষয়টা নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন।

এর আগে দশম সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি বিমান দুটি লিজ নেয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।

প্রসঙ্গত, মিসরের ইজিপ্টএয়ার থেকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ড্রাই লিজে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ সংগ্রহ করে বিমান। এর মধ্যে একটি উড়োজাহাজ (রেজিস্ট্রেশন নম্বর এস২-এএইসএল, কনস্ট্রাকশন নম্বর ৩২৬৩০) ২০১৪ সালের মার্চে বিমানবহরে যু্ক্ত হয়। অন্য উড়োজাহাজটি (রেজিস্ট্রেশন নম্বর এস২-এএইসকে, কনস্ট্রাকশন নম্বর ৩২৬২৯) যুক্ত হয় একই বছর মে মাসে। লিজের চুক্তি অনুসারে, উড়োজাহাজ দুটি যাত্রী পরিবহন করুক আর না করুক মাসে উড়োজাহাজপ্রতি লাখ ৮৫ হাজার ডলার ( কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার টাকা) ভাড়া দিতে হবে। সব  ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিমানকে বহন করতে হবে। পাঁচ বছরের আগে চুক্তি বাতিল করতে পারবে না বিমান। লিজের মেয়াদ শেষে উড়োজাহাজ দুটি আগের অবস্থায় (ভাড়া নেয়ার সময় যে অবস্থায় ছিল) ফেরত দিতে হবে।

বিমান সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের বিমানবহরে যুক্ত হওয়ার এক বছর পরই ড্রাই লিজে আনা বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজটির (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এএইসএল) একটি ইঞ্জিন বিকল হয়। পরবর্তী সময়ে ইজিপ্টএয়ার থেকে প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকায় (১০ হাজার ডলার) ভাড়ায় আনা ইঞ্জিন দিয়ে সচল করা হয় উড়োজাহাজটি। নষ্ট ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয় লন্ডনের ইউনাইটেড এয়ারলাইনসে। ওই ইঞ্জিন মেরামত করে ফেরত আনার আগেই আবারো নষ্ট হয়। আবারো ইজিপ্টএয়ার থেকে প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকায় ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। বিকল ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য আবারো পাঠানো হয় ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের কাছে। বারবার ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ায় বিপত্তির মধ্যে পড়ে বিমান। অন্যদিকে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পাঁচ বছর না হওয়া চুক্তিও বাতিল করতে পারছিল না বিমান কর্তৃপক্ষ। ফলে উড়োজাহাজ দুটি ব্যবহার না করেই ভাড়া দিতে হচ্ছিল বিমানকে।

বৈঠকে সিনিয়র সচিব আরো বলেন, জুলাই মাসে বিমান ১৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। তার আগের মাসে আয় ছিল ১৬৯ কোটি টাকার মতো। এছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বিমান তার কোনো কর্মীকে ছাঁটাই করেনি। বেতন কিছুটা কাটছাঁট করে সব কর্মীকে ধরে রাখা হয়েছে। কয়েক বছর আগে কয়েকটি নতুন এয়ারক্রাফট কেনা হয়েছিল। এত কিছুর পরও বিমান সবগুলো কিস্তি পরিশোধ করেছে।

এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের কাছ থেকে বিমান ১০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, যার মধ্যে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাকি টাকা খরচ হবে না বলে তিনি কমিটিকে অবহিত করেন।

সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, বৈঠকে আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) বিল, ২০২০, বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) বিল ২০২০-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন সাপেক্ষে জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন