করোনার শঙ্কা কাটিয়ে জমজমাট দিনাজপুরের লিচুর বাজার

বণিক বার্তা প্রতিনিধি দিনাজপুর

ক্রেতা-বিক্রেতার সরব উপস্থিতিতে দিনাজপুরে জমে উঠেছে লিচুর বাজার। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে মন্দার আশঙ্কা থাকলেও এখন লিচুর ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। সব মিলিয়ে এবার জেলায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকার লিচু কেনাবেচা হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার জেলার প্রধান ফলের বাজার কালীতলা পৌর মার্কেট থেকে স্থানান্তরিত করে বড় মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর পাইকার বেপারিরা বাগান থেকে লিচু কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন। বাগান মালিক, চাষী ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেজন্য জেলা প্রশাসন এবং কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের কারণে বেচাকেনা বাড়ায় লিচুর বাজার চাঙা হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে দিনাজপুরের বিভিন্ন হাটবাজারে মাদ্রাজি, বোম্বাই, চায়না থ্রি, আর বেদানা লিচুর জমজমাট কেনাবেচা চলছে। পর্যায়ক্রমে কাঁঠালি, হাড়িয়া, চায়না জাতের লিচুও বাজারে আসবে। ভালো দাম পাওয়ায় বাগান মালিক ব্যবসায়ীরা খুশি। কাজের সুযোগ পেয়ে শ্রমিকরাও সন্তুষ্ট। জেলার বড় মাঠের লিচু বাজারে প্রতি ১০০ মাদ্রাজি লিচু ১৩০-১৬০ টাকা, বোম্বাই ১৫০-২০০, হাড়িয়া ২৫০-৩০০, বেদানা ৩৫০-৪৫০ চায়না থ্রি ৪৫০-৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চাঁদপুর থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী সোলায়মান মিয়া জানান, প্রতিবারের ন্যায় এবারো তিনি ১৭ লাখ টাকায় দিনাজপুরের বিরলে বোম্বাই চায়না থ্রি জাতের ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচটি লিচুর বাগান কিনেছেন। বাগানের লিচু তিনি চাঁদপুরসহ আশপাশের এলাকায় পাঠাচ্ছেন।

বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুরের লিচু বাগান মালিক নজরুল ইসলাম জানান, এবার লিচু কেনাবেচায় লাভের আশা করছি। গত কয়েকবার তেমন একটা দাম না পেলেও চলতি বছর লিচুর ভালোই দাম পাচ্ছি।

আড়তদার রুবেল আহম্মেদ জানান, করোনার কারণে লিচু নিয়ে প্রথমে শঙ্কায় থাকলেও এখন অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, চাঁদপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে ব্যবসায়ীরা লিচু কেনার উদ্দেশ্যে দিনাজপুরে অবস্থান করছেন। তারাও ভালো দাম দিয়ে আমাদের কাছ থেকে লিচু কিনছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তৌহিদুল ইকবাল জানান, দিনাজপুরে লিচু বাজারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পাইকার বেপারিদের সুরক্ষায় সব রকম ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি জানান, দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগান থেকে এবার লিচু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টন। আশা করি, এবার জেলায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা লিচু কেনাবেচা হবে।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম জানান, শহরের কালীতলা থেকে লিচুর বাজারটি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য বড় মাঠে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কালীতলায় খুব ছোট জায়গায় বাজারটি থাকায় সেখানে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা সম্ভব হতো না বলেই এখানে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে আসা ব্যবসায়ীদের স্বল্প খরচে থাকা-খাওয়াসহ সব রকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া কেনাবেচায় গ্রাহকদের জন্য কুরিয়ার সার্ভিসসহ ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন