শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল কম

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: আতিকুর রহমান আতিক

দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত নয়—এমন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনার বাইরে থাকা জেলাগুলোয় গতকাল খোলা ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যদিও বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম।

বিভিন্ন জেলা থেকে বণিক বার্তার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও ২৫-৪০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার পুরাতন বাদিয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন জামিল জানান, বিদ্যালয় খোলা থাকলেও তুলনামূলক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। একই কথা জানান পলাশবাড়ী উপজেলার তালুক জামিরা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন।

গাইবান্ধা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোছা. রোকসানা বেগম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্কুল খোলা আছে। তবে শিক্ষার্থী উপস্থিতি তুলনামূলক কম।’

এদিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার লেংগা বাজার বামা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ে মোছা. ফাইমা আকতার নামে অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্লাস চলাকালীন ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠানো হয় । বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

এছাড়া তাপপ্রবাহের কারণে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী দুই জেলায়ই শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার জব্বর মাস্টারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘গতকাল বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপপ্রবাহ বেড়ে যওয়া এবং লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বড় অংশই ক্লান্ত হয়ে যায়। ফলে শ্রেণীকক্ষে পাঠ কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের বড় অংশকেই আর বিদ্যালয়ে রাখা যায়নি।’

নোয়াখালী মাইজদীর বালিকা বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া সুলতানা জানান, তার বিদ্যালয়ে গতকাল শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশ। গরমের কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মাঝেই ক্লান্তি দেখা গেছে।

সিলেটের বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, গতকাল বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল গড়ে ৭৫ শতাংশ। শহরের বিদ্যালয়গুলোয় উপস্থিতি একটু বেশি থাকলেও গ্রামের স্কুলে কম ছিল।

সিলেট সদর উপজেলার সাহেববাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুই শিফটে ক্লাস হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে উপস্থিতি ছিল অন্যদিনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। শিক্ষক আব্দুল বাছিত বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ শুনে অনেকেই মনে করছে হাইস্কুলও বন্ধ। এজন্য গত দুইদিন থেকে উপস্থিতি কম।’

এ ব্যাপারে বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অফিস সিলেটের আঞ্চলিক উপপরিচালক (অতিরিক্তি দায়িত্ব) আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘সিলেটের আবহাওয়া ভালো। বিদ্যালয়ে উপস্থিতিও তুলনামূলক ভালো। সার্বিক বিবেচনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিতি রয়েছে।’

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, শিক্ষা পরিকল্পনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগসম্পর্কিত পরিকল্পনা না থাকায় চলমান তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা দেখা যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের বার্ষিক শিক্ষা পরিকল্পনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে কোনো কৌশল নির্ধারিত নেই। সবসময়ই বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। অথচ শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি কীভাবে মোকাবেলা করব সে বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের কোনো পরিকল্পনা নেই। পরিকল্পনা না থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার কোনো প্রস্তুতিও থাকছে না এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আমাদের অবশ্যই বার্ষিক শিক্ষা পরিকল্পনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে কৌশল রাখতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন