ভারতের চা শিল্প

আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ২ হাজার ১০০ কোটি রুপি ক্ষতির আশঙ্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতের শীর্ষ চা উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোর মধ্যে আসাম পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম। চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে দুই রাজ্যের চা শিল্পের রাজস্বের ক্ষতি হাজার ১০০ কোটি রুপি ছুঁতে পারে বলে ধারাণা করছে দি ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন (আইটিএ) নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ভারতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন বিধিনিষেধের জেরে খাতটি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।

মার্চের মাঝামাঝিতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী তিন সপ্তাহের লকডাউনের ঘোষণা দেয় ভারত সরকার। পরবর্তী সময়ে তা আরো বাড়ানো হয়। মাহমারীর শুরুর দিকে ভারতের চা এস্টেটের স্বত্বাধিকারীরা জানিয়েছিলেন, দেশটির টি এস্টেটগুলোয় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ফলে প্রথম দিকে দেশটির চা বাগানগুলো খোলা রাখা হয়েছিল। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক লকডাউন ঘোষণার পর কর্মীদের নিরাপত্তাবিষয়ক সতর্কতাস্বরূপ এস্টেটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এর আওতায় পড়ে হাজার ৪২২টি নিবন্ধিত চা এস্টেট। এছাড়া আড়াই লাখের বেশি মাঝারি ক্ষুদ্র চা উৎপাদনকারীও লকডাউনের আওতাভুক্ত হয়।

এতে অচল অবস্থায় পড়ে ভারতের সব চা বাগানের সব কার্যক্রম। বিশেষত দেশটির শীর্ষ দুই চা উৎপাদনকারী রাজ্য আসাম পশ্চিমবঙ্গ। মার্চ, এপ্রিল মেতিন মাসে আসাম পশ্চিমবঙ্গ দুই রাজ্যের বাগানগুলোয় চায়ের উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ কোটির কেজির মতো কমে গেছে বলে জানিয়েছে আইটিএ। প্রতিষ্ঠানটির মতে, গত বছর উত্তর ভারতে অনুষ্ঠিত নিলামগুলোয় পানীয় পণ্যটির যে দাম দাঁড়িয়েছিল, তার ভিত্তিতে ধরলে সময়ের মধ্যে দুই রাজ্যের চা শিল্পের সম্মিলিত রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক হাজার ১০০ কোটি রুপিতে পৌঁছতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে উত্তর ভারতের (আসামসহ) নিলামগুলোয় চায়ের গড় মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ১৫২ দশমিক ২৬ রুপি।

মার্চ এপ্রিলে ভারতের মোট চা উৎপাদনের শতকরা ১৫ ভাগ উৎপাদন হয় আসাম পাশ্চিমবঙ্গে। এছাড়া বার্ষিক হিসাবে ভারতে উৎপাদিত মোট চায়ের ৫০ শতাংশের মতো উৎপাদন হয় শুধু আসামে। গত বছর দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে মোট ১৩৯ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে আসামের মোট বার্ষিক চা উৎপাদনের দশমিক শতাংশ সংগ্রহ করা হয়েছিল মার্চে, পরিমাণে যা ছিল প্রায় ৭১ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার কেজি। এছাড়া এপ্রিল মে রাজ্যটির চা শিল্পের জন্য সবচেয়ে উৎপাদনশীল মাস। সময়ে উৎপাদিত চায়ের গুণগত মানও হয় সেরা। গত বছরের এপ্রিল মে মাসে রাজ্যটির পুরো বছরের মোট উৎপাদনের যথাক্রমে দশমিক দশমিক শতাংশ চা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

আইটিএর নোটে বলা হয়, কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব রোধে ভারতে দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন চলছে। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত দেশটির সব ধরনের আর্থিক শিল্প খাত কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে আগে থেকেই লোকসানে থাকা ভারতের চা শিল্পের আর্থিক চাপ আরো বেড়েছে। লকডাউনের কারণে মার্চ এপ্রিলে আসাম পশ্চিমবঙ্গের চা উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৫ শতাংশ কমে গেছে। চলতি মাসে রাজ্য দুটিতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন কমে যেতে পারে প্রায় ৫০ শতাংশ।

পরিস্থিতিতে চা শিল্পের জন্য ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনা বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে আইটিএ। বিষয়ে সুদে ভর্তুকি, চলতি মূলধনের সীমা বাড়ানোসহ বিদ্যুৎ বিল প্রোভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়া পরিশোধে ছাড় দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে দেশটির চা উৎপাদনকারীদের শীর্ষ অ্যাসোসিয়েশনটি।

উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে চলতি বছরের প্রথম থেকে ভারতের চা রফতানি চাহিদায়ও ধস নামে। তবে দ্বিতীয় ধাপে এসে পণ্যটির রফতানি বাড়তে পারে বলে প্রত্যাশা করছেন দেশটির রফতানিকারকরা। বিশেষত ইরান, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ইউরোপের বাজারে দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন