নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

বণিক বার্তা অনলাইন

১১ দফা দাবিতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে নৌযান শ্রমিকরা। শনিবার রাতে শ্রম অধিদফতরে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর আগামী মার্চের মধ্যে ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন লঞ্চ মালিক ও শ্রমিক নেতারা।

বৈঠকে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক কে এম মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের (যা-প) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বদিউজ্জামান, লঞ্চমালিক সমিতির সহসভাপতি শহীদ ভূঁইয়া অংশ নেন। বৈঠকে কয়েকজন শ্রমিকনেতা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আফসার হোসেন চৌধুরী রাত সাড়ে ১১টায় জানান, শ্রম অধিদফতরের  মহাপরিচালক আগামী মার্চের মধ্যে নৌশ্রমিকদের অন্যতম দাবি খাদ্য ভাতা মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া আন্তমন্ত্রণালয়ের আলোচনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে অন্য দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

নৌযান শ্রমিকদের আটটি সংগঠনের জোট বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ নিয়ে গত এক বছরে তিনবার ধর্মঘটের ডাক দিল ফেডারেশন।

ধর্মঘটে নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন নৌপথে ছোট–বড় নৌযান চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে ঢাকায় সদরঘাট টার্মিনাল থেকে সকালে নৌ পুলিশ ও লঞ্চমালিকদের সহায়তায় চাঁদপুরগামী চারটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। আজ সকাল থেকেই সারাদেশে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যাত্রীর উপস্থিত কিছুটা কম।

লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় শনিবার সকাল থেকে বরিশাল নদীবন্দর হয়ে মেহেন্দীগঞ্জ, ভোলা, বরগুনা, লক্ষ্মীপুরসহ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা বিপাকে পড়ে। পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েন রোগী, নারী-শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। পরে অনেকেই বাড়ি ফিরে যায়। কোনো কোনো যাত্রী বিকল্প ট্রলার ও স্পিডবোটে করে গন্তব্যে যাত্রা করে।

বরিশাল স্পিডবোট সমিতির লাইন সুপারভাইজার তারেক শাহ গতকাল সকালে জানান, নৌ ধর্মঘটের কারণে বরিশাল-ভোলা পথের যাত্রীদের চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে।

অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যা–প) সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন যে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, সেটি অযৌক্তিক। নৌযানশ্রমিকদের তিন গুণ বেশি বেতন–ভাতা দেওয়া হচ্ছে। কিছু স্বার্থান্বেষী নৌযান শ্রমিকনেতা ফায়দা হাসিলের জন্য অহেতুক ধর্মঘট ডেকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছেন। তিনি দাবি করেন, এ সংগঠনের ডাকে নৌযানশ্রমিকেরা সাড়া দেননি। সারা দেশে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে এবং নৌযানশ্রমিকেরা কাজ করছেন।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের ঘোষিত ১১ দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারীদের খোরাকি ভাতা ফ্রি করতে হবে ও ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করতে হবে। মাস্টার ড্রাইভারশিপ পরীক্ষায় ও ডিপিডিসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সব অনিয়ম বন্ধ করতে হবে এবং কোর্স চলাকালে শ্রমিকদের ছুটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। নৌ শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসালয় করতে হবে। নৌপথে মোবাইল কোর্টের নামে হয়রানি এবং বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নৌ শ্রমিকের মৃত্যু হলে ১২ লাখ টাকা মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভারতগামী শ্রমিকদের লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে ল্যান্ডিং পাস সার্ভিস ভিসা ও জাহাজের ফ্রিজিং ব্যবস্থা না থাকায় তাঁদের (শ্রমিকদের) সুবিধামতো স্থানে বাজার ও অন্যান্য কাজের জন্য আলাদা নৌকার ব্যবস্থা করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন