ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান

খোলাবাজারে ডলারের অস্বাভাবিক চাহিদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

 কয়েক মাস ধরেই ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই ডলারের অস্বাভাবিক চাহিদা তৈরি হয়েছে খোলাবাজারে। গতকাল খোলাবাজারে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত উঠে যায়। অনেক ক্ষেত্রে টাকা দিয়েও খোলাবাজারে পর্যাপ্ত ডলার মেলেনি।

ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দরে সাধারণত থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত ব্যবধান থাকে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবধান টাকা ছাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের আমদানি বাণিজ্য স্থিতিশীল। রফতানি আয় কিছুটা কমলেও তা পুষিয়ে দিচ্ছে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি। তার পরও এক সপ্তাহ ধরে ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে খোলাবাজারে বৈদেশিক মুদ্রার যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে, তা অস্বাভাবিক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের কারণেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র বলছে, ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত জুয়াড়িরা দেশ ছাড়ছেন। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন নগদ ডলার। এজন্য মতিঝিলের ব্যাংকপাড়াসহ রাজধানীর প্রায় সব এলাকার মানি এক্সচেঞ্জগুলোয় ডলারের টান পড়েছে। টান পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার মতিঝিলের ভাসমান খুচরা বাজারেও। ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা হন্যে হয়ে ডলার খুঁজছেন। ১০ দিন আগেও মানি এক্সচেঞ্জগুলোয় ডলার বিক্রি করতে গেলে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা পাওয়া যেত। গতকাল ওই ব্যবসায়ীরাই ৮৭ টাকায় ডলার কেনার জন্য ঘুরে বেড়িয়েছেন।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, খোলাবাজারে ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি অবশ্যই উদ্বেগের। যাদের কালো টাকা আছে, তারা বাজার থেকে ডলার কিনে সরিয়ে রাখতে পারে। কালো টাকা ডলার হয়ে দেশের বাইরে পাচার হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। আমাদের দেশের শ্যাডো ইকোনমির আকারও অনেক বড়। এজন্য খোলাবাজার থেকে ডলার কারা কিনছে, কারা বিক্রি করছে, সে ডলারের গন্তব্য কোথায়, এগুলো খতিয়ে দেখা দরকার।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক চাকরিজীবী ১৭ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থেকে ৫০০ ডলার ক্রয় করেন। ওইদিন প্রতি ডলার কিনতে তার খরচ হয় ৮৬ টাকা। বিদেশ ভ্রমণের জন্যই ওই ডলার কিনেছিলেন তিনি। এক সপ্তাহ পর বিদেশ থেকে ফিরে ২৫ সেপ্টেম্বর প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে উদ্বৃত্ত ১০০ ডলার বিক্রি করে দেন তিনি।

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, অন্য সময় খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে আবার বিক্রি করতে গেলে এক থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত কম পাওয়া যেত। এবারই প্রথম ডলার কিনে এক সপ্তাহ পর ৫০ পয়সা লাভে বিক্রি করতে পেরেছি।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে কথা বলেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। বসুন্ধরা সিটির মিয়া মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিবেদকের কাছে প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সায় ক্রয় ৮৭ টাকা ৩০ পয়সায় বিক্রি করার কথা জানান। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দর অনুযায়ী, গতকাল আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা এবং বিক্রয়মূল্য ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা। হিসাবে ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে মিয়া মানি এক্সচেঞ্জের ক্রয় বিক্রয়মূল্যের ব্যবধান যথাক্রমে টাকা টাকা ৮০ পয়সা।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রয়েছে ডায়মন্ড মানি এক্সচেঞ্জ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিও গতকাল প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সায় কেনার কথা জানায়। ধানমন্ডির রাসেল স্কোয়ার এলাকার এস কে এফ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতি ডলারের সর্বনিম্ন বিক্রয়মূল্য হাঁকে ৮৭ টাকা ২০ পয়সা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন