এবার কি ভারতেও বিজয় উৎসব হবে টাইগারদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

টেস্টে মাত্র দুটি দেশকে এখনো হারের স্বাদ দিতে পারেনি বাংলাদেশ—ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৫ দিন আগেও এ তালিকায় ছিল পাকিস্তানের নাম। রাওয়ালপিন্ডিতে সম্প্রতি দুটি টেস্ট খেলে দুটিই জিতেছে বাংলাদেশ। এ জয়ে টাইগাররা গড়েছে ইতিহাস। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট জয়ের পর প্রথমবার সিরিজ জয়ের উৎসবও করেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। এবার কি আরেক ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতেও টেস্ট জয়ের উৎসব হবে টাইগারদের? চেন্নাই ও কানপুর কি হয়ে উঠবে রাওয়ালপিন্ডি? শিগগিরই এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারত সফর আসন্ন। 

১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে শুরু হবে দুই দলের প্রথম টেস্ট। ২৭ সেপ্টেম্বর কানপুরে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এরপর গোয়ালিয়র, দিল্লি ও হায়দরাবাদে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। 

পাকিস্তানের সঙ্গে ১৩ টেস্টে জয়হীন থাকার পর গত মাসে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথমবারের মতো জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তা-ও ১০ উইকেটের বিশাল জয়। একই মাঠে দ্বিতীয় টেস্টেও জিতেছে টাইগাররা। এক মাসের ব্যবধানে হেড টু হেড এখন ২:১২। পাকিস্তানে পাওয়া সাফল্য কি এবার অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করবে ভারত সফরেও? 

পাকিস্তান সফরের আগে ঠিক ১৩ ম্যাচ খেলে জয়হীন ছিল বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গেও ১৩ টেস্টে জয়হীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হেরেছে ১১টি ম্যাচে, ড্র হয়েছে দুটি। পাকিস্তানের মাঠে সিরিজ জয়ের প্রেরণা আর সাম্প্রতিক ফর্ম এবার ভারত জয়ের আশাও জাগাচ্ছে।

বাংলাদেশের সাবেক ফাস্ট বোলার হাসিবুল হোসেন শান্ত মনে করেন, দল এ মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসী হলেও ভারতে তারা কেমন করবে তা আসলে নির্ভর করবে সেখানকার উইকেট কেমন হয় তার ওপর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘জয়ের আশা তো সব সময় করিই আমরা। ইন্ডিয়ায় উইকেটের ওপর ডিপেন্ড করবে, ওরা কী ধরনের উইকেট বানায়। উইকেট দেখে বলা যাবে যে আমরা কী ধরনের রেজাল্ট করব। আমার কাছে মনে হয়, স্পিনিং উইকেটই বানানোর সম্ভাবনা থাকবে। আর ইন্ডিয়া তো দেখা যায়, সব সময় তাদের মনমতো উইকেট বানায়। কাজেই এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। পাকিস্তানে আমরা যে উইকেট পেয়েছি মনে হয় না ভারতে সে রকম পাব। ওনার চাইবে আমাদের স্পিনিং উইকেটে খেলিয়ে হারাতে।’

বাংলাদেশ দলনায়ক শান্ত জানিয়েছেন, পাকিস্তানে দলগত প্রচেষ্টায় জয় এসেছে। সাবেক ক্রিকেটার শান্তও তা-ই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, নইলে কেমনে সম্ভব। আপনি বোলিং দেখেন, ব্যাটিং দেখেন, ফিল্ডিং দেখেন—পুরো দলের মধ্যে একটা ছন্দ ছিল, আত্মবিশ্বাস ছিল। তিনটা বিভাগেই ছন্দ থাকায় কিন্তু আসলে রেজাল্টটা হয়েছে। এ কারণে ইন্ডিয়ার সঙ্গে আমাদের ভালো করার চান্সটা অনেক বেশি থাকবে। সবকিছু আসলে নির্ভর করছে, উইকেটটা কীভাবে তারা তৈরি করে।’

২০০০ সালে টেস্ট যাত্রা শুরুর পর বাংলাদেশ ১৪৪টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। প্রথম টেস্টের প্রতিপক্ষ ছিল এ ভারত। ২০০০ সালের নভেম্বরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অভিষেক টেস্টে ভারতের কাছে ৯ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৪৫ রানের রাজসিক ইনিংসে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান তুলে নেয় বাংলাদেশ। জবাবে সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত ৪২৯ রানে অলআউট হয়েছিল। নাঈমুর রহমান দুর্জয় নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৯১ রানে। ভারত মাত্র ৬৩ রানের টার্গেটের সামনে পড়ে। সদাগোপ্পান রমেশের উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় সফরকারীরা।

দ্বৈরথের সেই শুরু। এরপর আরো টানা চারবার বাংলাদেশ সফরে এসেছে ভারত। তখন টেস্ট পরিবারের নবীন দল বাংলাদেশকে হোম সিরিজে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল না ভারত। গুঞ্জন ছিল, আর্থিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় তারা বাংলাদেশের সঙ্গে হোম সিরিজ খেলতে আগ্রহী ছিল না। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে টানা পাঁচটি সিরিজ খেলার পর অবশেষে ২০১৭ সালে বাংলাদেশকে হোম সিরিজে আমন্ত্রণ জানায় ক্রিকেটের ‘কুলীন’রা। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত একমাত্র টেস্টে ২০৮ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। 

২০১৯ সালের নভেম্বরে ভারতে আবারো দুটি টেস্ট খেলার সুযোগ আসে। সেবার ইন্দোর টেস্টে ইনিংস ও ১৩০ রানে এবং কলকাতা টেস্টে ইনিংস ও ৪৬ রানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। ২০২২ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফর করে ভারত। তারা সেই সফরে দুটি টেস্ট খেলেছে। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টটি ১৮৮ রানের ব্যবধানে জিতলেও ঢাকায় তাদের সহজে জিততে দেয়নি বাংলাদেশ। ১৪৫ রানের জয়ের টার্গেট পাওয়া ভারতীয়রা ৭ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নিতে সমর্থ হয়। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণির সামনে বুক চিতিয়ে লড়ে ওই ম্যাচে ভারতকে কোনোমতে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন রবিচন্দ্র অশ্বিন ও শ্রেয়াস আইয়ার।

বাংলাদেশ ও ভারত এখন পর্যন্ত আটটি টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে, যার মধ্যে ভারত জিতেছে সাতটি, বাকি একটি সিরিজ ড্র হয়। এখন পর্যন্ত পাঁচটি ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। 

ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট দ্বৈরথে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার (৮২০), যিনি টেস্টের ইতিহাসেই সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। এরপর বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম (৬০৪ রান)। আসন্ন সিরিজেও বাংলাদেশের বড় ভরসার নাম মুশফিকুর। সম্প্রতি পাকিস্তান সফরেও তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৯১ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। ওই ইনিংসে ভর করে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট দ্বৈরথে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন ভারতের পেস বোলার জহির খান। ৭ ম্যাচ খেলে ৩১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এরপর ভারতের ইশান্ত শর্মা (২৬), অশ্বিন (২৩), উমেশ যাদব (২২), বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান (২১)। 

দুই দেশ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা বাংলাদেশের মুশফিকুর ও সাকিবের দখলে। দুজনেই খেলেছেন সমান আটটি করে টেস্ট।

শুধু টেস্টই নয়, এবারের সফরে স্বাগতিকদের সঙ্গে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলবে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ১৪ বারের মোকাবেলায় ভারত ১৩টি ও বাংলাদেশ একটি জিতেছে। ২০১৯ সালে দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। সেই দিল্লিতে এবারো ২০ ওভারের একটি ম্যাচ রয়েছে দুই দলের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন